রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদউদ্দিন আহম্মেদকে টেনেহিঁচড়ে পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনায় আরও ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শাফি শাহরিয়ার (২৩), সোহেল রানা (২২), বাধন রায় (২০), আরিফুল ইসলাম (২৩) ও মেহদী হাসান রাব্বি (২১)। এরা সবাই রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী। চন্দ্রিমা থানার ওসি শেখ গোলাম মোস্তফা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত পলিটেকনিক ছাত্রাবাসে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ২৫ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ দেখে যাচাই বাছাই করে ৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিতের প্র্রতিবাদে ৬ দফা দাবিতে আন্দোলনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
মামলায় আসামিদের কয়েকজন হলেন- কম্পিউটার বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ও ইন্সটিটিউটের ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভ, ইলেকট্রোনিক্স ৫ম পর্বের শিক্ষার্থী মুরাদ, পাওয়ার বিভাগের সাবেক ছাত্র শান্ত, ইলেকট্রোনিক্স বিভাগের সাবেক ছাত্র বনি, মেকাটনিক্স বিভাগের সাবেক ছাত্র হাসিবুল ইসলাম শান্ত, ইলেক্টো-মেডিক্যাল বিভাগের সাবেক ছাত্র সালমান টনি, একই বিভাগের ৭ম পর্বের ছাত্র হাবিবুল ও কম্পিউটার বিভাগের সাবেক ছাত্র মারুফ।
মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ হাসান রাজিব বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পলিটেকনিক ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাকে বহিস্কার করাসহ পলিটেকনিক ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম স্থগিতের সুপারিশ করে কেন্দ্র্রীয় সংসদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ গোলাম মোস্তফা বলেন, অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনায় শনিবার রাতেই থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদ বাদি হয়ে চন্দ্রিমা থানায় দায়ের করা মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে ৫০ জনকে আসামি করেন। সিসিটিভির ভিডিও দেখে সাতজনের নাম পরিচয় নিশ্চিত করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। যাদের নাম মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশী অভিযান চলছে। অভিযানের অংশ হিসেবে রাতেই পলিটেকনিকের ছাত্রবাস ও আশপাশের এলাকা থেকে ২৫ জনকে আটক করে থানা হেফাজতে নেয়া হয়। ইতিমধ্যে সিটিটিভির ভিডিও ফুটেজ দেখে যাচাই বাছাই করে ৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদকে পুকুরে ফেলে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার বেলা ১১ টায় নগরীর সপুরা সংলগ্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মূল ফটকের সামনে রাস্তায় ৬ দফা দাবিতে মানববন্ধন করে তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের দ্রুত ও সুষ্ঠ বিচার করতে হবে। তাদের স্থায়ীভাবে ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। কলেজে বহিরাগত শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। ক্যাম্পাসে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। এছাড়া ক্যাম্পাসের সব ছাত্রলীগের ব্যানার ছিড়ে ফেলে শিক্ষার্থীরা। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ গোলাম মোস্তফা জানান, পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সেখানে পুলিশ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে ইন্সটিটিউটের অধ্যয়নরত ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীরা অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় সিসিটিভির ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করেন শিক্ষকরা।