ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে সমগ্র দেশ। সপ্তাহব্যাপী চলমান আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহসপতিবার সকাল থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে দিল্লি, ব্যাঙ্গালুরু, চণ্ডীগড়, মুম্বই, কর্ণাটকসহ দেশটির বড় বড় শহরগুলো। কর্ণাটক ও বিহারে বন্ধ আহ্বান করেছে কমিউনিস্ট পার্টিগুলো। বেশ কয়েকটি রাজ্যে ঘোষিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় আন্দোলন করেছে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে গণগ্রেপ্তার শুরু করে পুলিশ। বিবিসি জানিয়েছে, এতে অন্তত কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী আটক হয়েছেন। আটক করা হয়েছে ভারতের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহকে। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ হামলার খবর পাওয়া গেছে বিভিন্ন স্থান থেকে।
এসব হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়া।
কর্ণাটকের ব্যাঙ্গালুরু, উত্তর প্রদেশ, দিল্লির রেড ফোর্টের কাছে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। গতকাল বৃহসপতিবার সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী তিন দিন পর্যন্ত ব্যাঙ্গালুরুতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। বিহারে ট্রেন চলাচল স্থগিত হয়ে গেছে। যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। মুসলিম সম্প্রদায়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্বভ থারুর।
নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে সারা দেশে বেশকিছু বিক্ষোভের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো, বিশেষ করে আসাম, রাজধানী দিল্লি, উত্তর প্রদেশের কিছু অংশ এবং পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে সহিংস বিক্ষোভ। দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জের ফলে দিল্লিতে বিক্ষোভ তিক্ত হয়ে ওঠে। ওই সংঘর্ষে উভয় পক্ষে আহত হয়েছে অনেকে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন সেখানকার সিলমপুর এবং জাফরাবাদের মানুষ। সহায় সম্পত্তি ভাঙচুর এবং যানবাহনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে বেশকিছু মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য অনেককে ধরতে ঘেরাও বা তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। জি নিউজ স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৭ মিনিটে জানাচ্ছে, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, জাসোলা বিহার শাহিনবাগ, মুনিরকা, লাল কুইলা, জামা মসজিদ, চাঁদনি চক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ ও বহির্গমন গেট বন্ধ রয়েছে। এসব স্টেশনে ট্রেন বন্ধ থাকবে না।
সকাল ৯টার দিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে কমিউনিস্ট ও মুসলিম সংগঠনগুলো কর্ণাটকে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা সেখানে বন্ধ আহ্বান করেছে। এর ফলে ব্যাঙ্গালুরুর টাউন হলে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। এরপরই সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর জগদীপ ধানকার জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধন আইনে স্টে অর্ডার দেননি সুপ্রিম কোর্ট। বিষয়টি তাদের আমলে রয়েছে। এ অবস্থায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরাতে, শান্তির পথে যেতে বাড়তি ক্ষোভের পথ পরিহার করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। জনগণের দুর্ভোগ কমিয়ে আনারও আহ্বান জানিয়েছে। এদিন পাটনায় রাজেন্দ্র নগর রেলস্টেশনে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও নাগরিকপঞ্জীর বিরোধিতা করে একটি ট্রেন থামিয়ে দিয়েছে অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস ফেডারেশন। দ্বারভাঙ্গায় বামপন্থি সিপিআইএম-এর কর্মীরা লাহেরিসরাই রেলস্টেশনে রেলপথ অবরোধ করেছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন ও এনআরসি’র বিরুদ্ধে মুম্বইতে প্রতিবাদ বিক্ষোভের জন্য ফ্রন্ট গঠন করেছে কংগ্রেস, এনসিপি ও অন্য রাজনৈতিক দল। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘হাম ভারত কি লোগ’। মুম্বইয়ের আগস্ট ক্রান্তি ময়দানে তাদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ হওয়ার কথা রয়েছে। তারা নাগরিকত্ব সংশোধন আইন ও নাগরিকপঞ্জীকে অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক বলে আখ্যায়িত করেছে।
এদিকে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর (এনআরসি) বিরোধিতায় প্রথম থেকেই সক্রিয় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত তিনদিন ধরে চলছে তার প্রতিবাদ মিছিল। এর তৃতীয় দিন ছিল হাওড়া ময়দান। নতুন আইন এবং প্রস্তাবিত এনআরসি, কোনোটাই পশ্চিমবঙ্গে কার্যকর করতে দেয়া হবে না বলে ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেছেন তিনি। এবার তৃণমূল নেত্রী হিসেবে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ডাক দিলেন মমতা। তিনি বলেন, কাউকে বাংলা ছাড়তে হবে না। কাউকে দেশ ছাড়তে হবে না। আমরা হিংসা চাই না বলে পথে নেমেছি। এক হাজার বুলেটের যা দাম, দশটা মানুষ পথে নেমে কথা বললে তার দাম বেশি। বুলেট দিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন আটকানো যায় না।