ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এসব ঘটনায় কাউকে শনাক্ত করাও সম্ভব হয়নি। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় শাহবাগ থানা ও পল্টন থানায় চারটি মামলা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি মামলার তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি)। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দুটি ক্লু মাথায় রেখে কাজ করছেন। ছাত্রদলের পদবঞ্চিত ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিতরা এ ঘটনা ঘটাতে পারেন। একই সন্দেহ করছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও। ছাত্রলীগের সভাপতি আল নায়িহান খান জয় ককটেল বিস্ফোরণের নেপথ্য ছাত্রদলকে ইঙ্গিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, ছাত্রদলের দুটি গ্রুপ যারা বিভিন্ন দ্বন্দ্বে লিপ্ত। তাদের মধ্য থেকে এই ধরণের কার্যকলাপ হতে পারে। যদিও ছাত্রলীগের এই সন্দেহকে উড়িয়ে দিয়ে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক জানিয়েছেন, এমন কর্মকাণ্ডে ছাত্রদলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তারা প্রতিদিন ক্যাম্পাসে এসে নির্দিষ্ট সময় অবস্থান করে আবার চলে যান। প্রতিনিয়ত এ ধরনের ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ছাত্রদল উদ্বিগ্ন বলেও তিনি জানান।
ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাকে নয়া ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল ও বিরোধী দলকে হয়রানি করার চক্রান্ত এটি। মামলা দিয়ে হয়রানি করার জন্য পুরনো খেলা শুরু হয়েছে। এটা আরেক ষড়যন্ত্র। আর বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা ককটেল বিস্ফোরণের নেপথ্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই রয়েছেন বলে মনে করছেন। তাদের ধারণা, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের হামলার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানো ও একটি অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে।
এদিকে, সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার মুহা: শফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে বলেছেন, আমরা ইচ্ছা করলেই ইউনিফর্ম পরে সব জায়গায় প্রবেশ করতে পারি না। তাই সাদাপোশাকের গোয়েন্দাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তারা এ নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া নয়াপল্টন এলাকায় শত শত যানবাহন চলাচল করে। কোন গাড়ি থেকে কে ককটেল ফেলে যাচ্ছে সেটা শনাক্ত করা কঠিন। তাই ওই এলাকা আমরা সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসছি। বিস্ফোরক ফাটানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা সাধারণ ককটেল, শক্তিশালী আইইডি না। ককটেল ফুটলে শুধু শব্দ হয় তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয় না। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ডিএমপির মতিঝিল জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ছাত্রদলের পদবঞ্চিত ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে যারা দলীয় মনোনয়ন পাননি তারাই মূলত এই কাজগুলো করছে। বিএনপি অফিসের সামনে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। আর যে ১/২টা আছে সেটাও তাদের ব্যানারের কারণে দেখা যায় না। তাই এখন পর্যন্ত আমরা কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি। তবে বিস্ফোরক আইনে পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। আমরা মামলা নিয়ে কাজ করছি। বিএনপি কার্যালয় এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছি।
গত কয়েকদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অন্তত ৬টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ২২শে ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে ভিপি নুরুল হক নূর ও তার সহযোগীদের ওপর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর হামলার চারদিন পর মধুর ক্যান্টিনের সামনে সর্বপ্রথম ককটেল পাওয়া যায়। এর তিন দিনের মাথায় মধুর ক্যান্টিন ও ডাকসু ভবনের আশেপাশে আবার কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ হয়। সর্বশেষ সোমবার দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ হয়। ঢাবিতে ককটেল বিস্ফোরণের এসব ঘটনায় ক্যান্টিন কর্মচারী হৃদয় ছাড়া আর কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে যখন তখন ককটেল বিস্ফোরণের এসব ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে।