ইরানের আল-কুদস ব্রিগেডের প্রধান ও দেশটির দ্বিতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। তার মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে নেতারা তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ইরানের অভ্যন্তর থেকেও এসেছে প্রতিশোধ নেয়ার হুমকিসহ নানা প্রতিক্রিয়া।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদকে রুখে দিতে ও ইরানের ইসলামিক মূল্যবোধকে আরো শক্তিশালী করতে সোলাইমানির মৃত্যু শক্তিশালী ভ্থমিকা রাখবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ইরান ও এ অঞ্চলের অন্য স্বাধীনতাকামী দেশগুলো এ হত্যার প্রতিশোধ নেবে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি সোলাইমানি হত্যার সর্বোচ্চ প্রতিশোধের হুশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, যেসব অপরাধী তাদের নোংরা হাত দিয়ে সোলায়মানির রক্ত ঝরিয়েছে তাদের জন্য কঠোর প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে। প্রতিরোধ আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ প্রতিটি কর্মী তাকে হত্যার বদলা নিতে পস্তুত রয়েছেন বলেও জানান খামেনি।
এদিকে সোলাইমানির মৃত্যুতে ইরাকিদের একটি অংশ উৎসব করছে এমন একটি ভিডিও টুইটারে আপলোড করেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পমেপও। ক্যাপশনে তিনি লিখেন, জেনারেল সোলাইমানি আর বেঁচে নেই এ জন্য তিনি আনন্দিত। দেখুনি ইরাকিরা রাস্তায় স্বাধীনতার আনন্দে নাচছে।
আল-কুদস ব্রিগেডের প্রধানকে হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আব্দুল মাহদি। এ নিয়ে তিনি একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। এতে তিনি বলেন, বাগদাদ বিমানবন্দরে এই বিমান হামলা ইরাক ও এর সার্বভৌমত্বের ওপর বড় ধরনের আগ্রাসন। এটি ইরাককে ও এ অঞ্চলকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে। এ হামলা মার্কিন সেনাদের ইরাকে অবস্থানের শর্ত ভঙ্গ করেছে বলেও জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকার দলের সিনেটর জিম রিশ টুইটারে লিখেছেন, কাসেম সোলাইমানি শত শত মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর কারণ ছিলেন। আজ তার বিচার সমপন্ন হয়েছে। সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ট্রামপ এর মধ্য দিয়ে শুকনো খড়কুটোর মধ্যে ডিনামাইট ছেরে দিলেন। বৃটিশ লেবার পার্টির প্রধান জেরেমি করবিন একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। এতে তিনি বলেন, কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা অত্যন্ত গুরুতর একটি বিষয়। এরমধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বৈশ্বিক একটি সংঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
ইরাকের প্রেসিডেন্ট বাহরাম সালিহ ইরাকের জনগণকে ধৈর্য্য ধারণ করার আহবান জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমরা সকলকেই সংযম ধারণ করার আহবান জানাচ্ছি। সব কিছুর পূর্বে ইরাকের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করার কথাও বলেন তিনি। বিবৃতিতে তিনি সোলাইমানিকে হত্যা ইরাক ও মধ্যপ্রাচ্যের ওপর মার্কিন আগ্রাসন হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি সোলাইমানি হত্যায় শোক ও সমবেদনা জানান।
সোলাইমানিকে হত্যার পর এর ভয়াবহ পরিণতি সমপর্কে সাবধান করেছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ওয়াশিংটনের এমন পদক্ষেপ এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। এমনিতেই জটিল হয়ে থাকা সমস্যার মধ্যে এমন পদক্ষেপ সমাধান অর্জনের পথ আরো কঠিন করে তুলবে। একইসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে আরো একটি যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলেও সাবধান করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।