ব্যাটিং অনুশীলন শেষে কোচ বিশ্রামের সুযোগ দিলেন না শেন ওয়াটসনকে। ১০ মিনিট ফিল্ডিং করালেন নিজেই। এরপর নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিতে নিতে উঠে দাঁড়ালেন শেন ওয়াটসন। নিজের খাওয়া ডাবের খোসা দুটি পড়ে ছিল মাটিতে, কারো দিকে না তাকিয়ে তুলে নিয়ে ওয়াটসন ছুটলেন ডাস্টবিনের দিকে। সেটি ফেলেই যেন শান্তি পেলেন। এরপর চওড়া এক হাসি মুখে এগিয়ে এসে প্রশ্ন- ‘তুমি ইন্টারভিউ নেবে! শুরু করতে পারো।’ ক্রিকেটীয় নানা কথার ভিড়ে জানালেন বাংলাদেশ তার স্মৃতিতে গেঁথে আছে, থাকবে। আর এবার দেশি খাবার ডাল ও নান রুটিকে আরো আপন করে নিয়েছেন। দারুণ সাধের খাবারের কথা বলতে বলতে ভাবটা এমন করলেন যেন তখনই জিভে জল চলে এসেছে।
জুলাইয়ে ৩৯ বছরে পা রাখবেন অজি এই অলরাউন্ডার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়লেও তার মধ্যে যেন একটুও ক্লান্তি নেই। বাংলাদেশে চলে এসেছেন বঙ্গবন্ধু বিপিএলে রংপুর চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে খেলতে। গতকাল দৈনিক মানবজমিনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তার কথোপকথন তুলে ধরা হলো-
এত দিন পর বাংলাদেশে এসে কি পরিবর্তন দেখলেন?
ওয়াটসন: দক্ষতা ও নৈপুণ্যের পরিবর্তন বলবো অবশ্যই। অনেক গভীরতা এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। ব্যাটিং ও পেস বোলিংয়ে অনেক উন্নতি এসেছে। এটা সবসময়ই হতো। কারণ ভালো কোচ থাকলে এসব এমনিতেই হয়ে যায়। বিশ্বমানের ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে। উন্নতি তো হওয়ারই কথা।
প্রথমবারের মতো বিপিএল খেলছেন, কেমন লাগছে?
ওয়াটসন: ভালোই মজা হচ্ছে। টুর্নামেন্টের মাঝপথে এসে খেলা শুরু করা কঠিন ছিল। দল খুব একটা ভালো করছিল না যখন আমি এসেছিলাম। কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি আমরা। এটা ভালো অভিজ্ঞতা বলতেই হয়। শুরুর দিকে ইনিংস লম্বা করতে পারছিলাম না, তখন যে খুব ভালো লাগছিল তা বলবো না। তবে আমি জানতাম রান একটা সময় আসবে। ভালো লাগছে যে শেষ ম্যাচে ভালো ব্যাটিং করতে পেরেছি।
বাংলাদেশি তরুণদের মধ্যে কাকে ভালো লাগছে?
ওয়াটসন: মোহাম্মদ নাঈমের কথা বলবো। সে খুবই ভালো ব্যাট করছে। দক্ষ, অসাধারণ। তার ব্যাটিং দারুণ লেগেছে এই কয়দিন। খুবই রোমাঞ্চকর। তাসকিনের সঙ্গে খেলতে পারছি, আগে তাকে দেখেছি টিভিতে। আর ফিজ মোস্তাফিজুর রহমান), তাকে সেরা ফর্মে ফিরতে দেখে খুবই রোমাঞ্চিত আমি। বাংলাদেশ ক্রিকেট ও বিশ্বের অন্যান্য টুর্নামেন্টের দলগুলোর জন্য ভালো খবর, কারণ সে এখন তার সেরা ফর্মে আছে।
বাংলাদেশের পেসাররা টেস্টে এখনো ভালো করতে পারছে না। তাদের জন্য কোনো পরামর্শ?
ওয়াটসন: অস্ট্রেলিয়াও টেস্ট ক্রিকেটে ধুঁকছে, বিশেষ করে দেশের বাইরে। দেশের বাইরে টেস্ট জেতা কঠিন কাজ। এমন টুর্নামেন্ট যতো হবে, ততই স্থানীয় ক্রিকেটাররা উপকৃত হবে। টেস্টেও তারা ভালো করবে।
তামিম, মুশফিক থাকলেও বিপিএলে এবার সাকিব নেই। তাকে কতটা মিস করছেন?
ওয়াটসন: সে (সাকিব) বিশ্বমানের ক্রিকেটার। অবশ্যই তাকে মিস করছি। সে একজন আন্তর্জাতিক তারকা। শুধু টি-টোয়েন্টি তারকা নয়। তাকে মিস করাটাই স্বাভাবিক। সে খেললে ভালো লাগতো।
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের মাঠ কেমন ছিল?
ওয়াটসন: কন্ডিশন এখানে ভালোই বলতে হয়। রাতে একটু শিশির হয়। এছাড়া সব ভালোই ছিল।
আপনার পছন্দের বাংলাদেশি খাবার কোনটি?
ওয়াটসন: আমি এখানে অনেক কিছুই খেয়েছি। তবে আমি সবসময় ডাল পছন্দ করি। উপমহাদেশের যেখানেই থাকি, ডাল আমার পছন্দের। বিশেষ করে বাংলাদেশে ডাল ও নান খেতে আমার খুবই ভালো লাগে। দারুণ খাবার বলতেই হয়।
ফের আমন্ত্রণ পেলে পরের বছর বিপিএলে খেলতে আসবেন?
ওয়াটসন: হ্যাঁ, অবশ্যই। বাংলাদেশের মানুষ সবসময় আমাকে ভালোবেসেছে। আমি অবশ্যই চাইবো আগামীবার এসে খেলতে।
ঢাকার মাঠে ১৮৫ রানের ইনিংসটি মনে আছে?
ওয়াটসন: অবশ্যই, আমার পুরো ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় ইনিংস। এটাই বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় খেলার সৌন্দর্য। আমার ক্যারিয়ারের দারুণ মুহূর্ত ছিল সেটা। মনে হয়, আমার জীবনের সেরা সময় সেটাই।
প্রশ্ন: এখানে মাঠ ভর্তি দর্শকদের চিৎকার শুনে আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?
ওয়াটসন: এখানে যখন প্রথম ২০১১তে খেলতে আসি তখনও দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছিলাম। বাংলাদেশি ক্রিকেটভক্তরা সবসময়ই আমাকে ভালোবেসে এসেছে। বিদেশেও অনেক বাংলাদেশির সঙ্গে দেখা হয়, তাদের সঙ্গেও বেশ ভালো সময় কেটেছে। এবার এসে ভালো লাগছে। শুরুতে রান না পেলেও পরে তা করতে পেরেছি। আশা করি আরো একটু ভালো করতে পারবো।