অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলে বিধ্বংসী দাবানলে ক্ষয়ক্ষতির আনুমানিক পরিমাণ ৪৪০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর আগে দেশটিতে দাবানল বিপর্যয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিসাধিত হয় ২০০৯ সালে দেশটির ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যে। সে সময় ৪৪০ কোটি ডলার ক্ষতির শিকার হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে বুধবার আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে গবেষণাকারী মার্কিন সংস্থা মুডি’স অ্যানালিটিকস জানিয়েছে, বর্তমানে চলমান দাবানলে ক্ষতির পরিমাণ পূর্বের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
মুডি’স-এর অর্থনীতিবিদ ক্যাটরিনা এল বলেন, ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার ভোক্তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফ্যাকাসে হয়ে ওঠেছে। চলমান দাবানল এই আত্মবিশ্বাস আরো দুর্বল করে তুলবে। এতে আগামী মাসে ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একইসঙ্গে বায়ুদূষণ বৃদ্ধি, পর্যটন ও খামার শিল্পের ক্ষতি বিবেচনায় ব্যাপক ক্ষতির শিকার হবে অর্থনীতি।
ক্যাটরিনা এল আরো বলেন, বিস্তৃত পরিসরে অর্থনীতির ক্ষতির ঝুঁকি আগুনে পুড়ে হওয়া অঞ্চলের বাইরেও রয়েছে। আরো কয়েক মাস ধরে জ্বলতে পারে এই দাবানল।
এখন পর্যন্ত দাবানলে অস্ট্রেলিয়ার ৮৪ লাখ হেক্টর জমি পুড়ে গেছে। ২০০৯ সালের ‘ব্ল্যাক স্যাটার ডে’ (কালো শনিবার) দাবানলে পুড়েছিল মাত্র ৪ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমি। তবে ২০০৯ সালের দাবানল তুলনামূলক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাজুড়ে আগ্রাসন চালিয়েছিল। তাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৭৩ জন মানুষ। প্রায় সমপূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ম্যারিসভিল শহর। অন্যদিকে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দাবানলে এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া, ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নর্থ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের কোবারগো ও মোগো এবং ভিক্টোরিয়ার ম্যালাকোটা শহর।
ক্যাটরিনা এল বলেন, অতীতের দাবানলগুলোয় কেবল স্থানীয় অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু এইবারের আগুনে পরিধি বিস্তৃত হওয়ায় তা সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষতি করছে। আর তাছাড়া, দাবানলের মৌসুম সবে শুরু হয়েছে। এখনো জ্বলতে থাকা আগুনই নেভানো হয়নি।
অস্ট্রেলিয়ায় সামপ্রতিক বছরগুলোয় তীব্র খরা দেখা গেছে। সে সংকটে জর্জরিত দেশটির স্থানীয় শিল্প। এর মধ্যে দাবানলে তা আরো প্রকট হবে। ক্যাটরিনা এল বলেন, তাজা পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি ভোক্তাদের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করবে। দেশটির বেশির ভাগ তাজা ফল ও সবজি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়।
এ ছাড়া, দেশটির অর্থনীতির অন্যতম একটি উৎস হচ্ছে পর্যটন। চলতি মৌসুম পর্যটনের জন্য জনপ্রিয় থাকলেও দাবানলে তা অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়েছে। পর্যটন খাত পুনরায় দাঁড় করাতে প্রয়োজন কয়েক লাখ কোটি ডলার।
মুডি’স জানায়, দাবানলের মৌসুমে বায়ুদূষণে আক্রান্ত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ৩০ শতাংশ জনগণ। এতে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা, স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত খরচ ও শস্য উৎপাদন হ্রাস পাবে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ থাকায় ও বীমাকারীদের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। গত সোমবার পর্যন্ত ৮ হাজার ২০০ মানুষ তাদের বীমার অর্থের জন্য আবেদন করেছে।