অদূরে কানে বাজছে-‘আপনার সন্তানের হাত শক্ত করে ধরে রাখুন। কোনভাবেই হাতছাড়া করবেন না। কারণ সহস্র দর্শনার্থীর ভিড়ে হারিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।’ অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমিতে অবস্থিত তথ্য কেন্দ্র থেকে বারবার এ নির্দেশনা দিচ্ছেন দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। শুক্রবারের মতো গতকালও জমজমাট ছিল গ্রন্থমেলা। মেলার দুই প্রান্ত বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই।
মেলায় সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর। শিশুপ্রহরেই গ্রন্থমেলা ছিল শিশুদের পদচারণায় মুখর। বিকেলে সব বয়সী মানুষের যেন শেষ গন্তব্য অমর একুশে গ্রন্থমেলায়।
কর্মব্যস্ত জীবনে বইপ্রেমীরা গ্রন্থমেলায় আসার জন্য ছুটির দিনকেই বেছে নিয়েছেন। তাইতো পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে দলবেঁধে হাজির বইয়ের রাজ্যে। স্টল টু স্টল ঘুরে ঘুরে দেখছেন নতুন বই। পছন্দ হলেই কিনে নিচ্ছেন। প্রকাশকদের মুখেও হাসি ফুটেছে। সকাল থেকেই বিক্রি ছিল প্রত্যাশার ঢের বেশি। তাইতো কিছুটা মুচকি হেসে কাকলী প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী নাসির উদ্দিন সেলিম বললেন, ‘ভাই আজকের দিনের জন্যইতো অপেক্ষা। বেচাবিক্রি ভালোই চলছে। দর্শনার্থীরা আসছেন। পছন্দ হলেই বই কিনে নিচ্ছেন। আশা করি এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’ গতকাল বিকেলে মেলার দুই প্রান্ত ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবারের মতো গতকালও মেলায় আগত দর্শনার্থীদের ভিড় অনেক বেশি। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যে মেলা প্রায় নিঃস্তেজ ছিল, সেটি যেন যৌবনে পৌঁছেছে। সহস্র দর্শনার্থীর ভিড় জমিয়েছে গ্রন্থমেলায়। এবারের মেলার বিন্যাস করা হয়েছে অনেকটা খোলামেলাভাবে। মেলার দুই প্রান্তেই পরিধি বাড়ানো হয়েছে। স্টলগুলোর মধ্যখানের গলি করা হয়েছে বেশ প্রশস্ত।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি এ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু পরিধি বাড়লেও মেলায় যেন পা ফেলা দায়। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দর্শনার্থীরা প্রচণ্ড ভিড় জমিয়েছেন। ঘুরে ঘুরে পছন্দের বই সংগ্রহ করছেন তারা। ছুটির দিন হওয়ায় এদিন মেলায় এসেছেন লেখকরাও। আর প্রিয় লেখককে কাছে পেয়ে সেলফি তোলা ও অটোগ্রাফ নেয়ার লোভ সামলাতে পারেননি ভক্তরা। তাইতো অটোগ্রাফের পাশাপাশি প্রিয় লেখকের সঙ্গে সেলফি তুলতে দেখা যায় বইপ্রেমীদের। কথা হয় মতিঝিল থেকে আসা গৃহবধু নাদিয়া আফরিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আপনার ভাইয়াতো সময় দেয় না। আরো আগেই মেলায় আসার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু উনার অফিসের কারণে সম্ভব হয়নি। আজ ছুটির দিন হওয়ায় নিয়ে এসেছে। কয়েকটি বইয়ের তালিকা নিয়ে এসেছি। আশা করি আজই সব বই কিনে বাসায় ফিরবো। বেসরকারি চাকরিজীবী মুনায়েম খান বলেন, আসলে কর্মব্যস্ত জীবনে সময় বের করা কঠিন। আজ ছুটির দিন তাই মেলায় আসতে পেরেছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গেও দেখা মেলবে এখানে। ঐতিহ্য প্রকাশনীর কর্ণধার আরিফুর রহমান নাঈম বলেন, আজ বিক্রি খুব ভালো। ছুটির দিন হওয়ায় দর্শনার্থীদের ব্যাপক ভিড় জমেছে আজ। এদিকে মেলার প্রথম শিশুপ্রহরে মেলায় শিশুচত্বরে শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এছাড়াও মেলায় শিশু কিশোরদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। গত শুক্রবার মেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩০৮টি বই এসেছে। এনিয়ে ওইদিন পর্যন্ত সর্বমোট ৬৪০টি নতুন বই এসেছে গ্রন্থমেলায়।
মেলায় নবাব উদ্দিনের তিন বই
বৃটিনের প্রাচীনতম বাংলা সাপ্তাহিক ‘জনমত’ এর সম্পাদক নবাব উদ্দিনের তিন বই এসেছে এবারের গ্রন্থমেলায়। বইগুলো হলো- দীপ্ত পথচলা, যেতে যেতে পথে, দ্য রেসিস্ট মাডার অব আলতাবানী। প্রকাশ করেছে ইত্যাদি প্রকাশনী। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের ইত্যাদি প্রকাশনীতে বইগুলো পাওয়া যাচ্ছে। লেখক বলেন, প্রথমটি আমাকে নিয়ে সায়েম চৌধুরী প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয়টি আমার প্রবন্ধগ্রন্থ আর তৃতীয়টি আমার লেখা ইংরেজি গ্রন্থ।