সূচকের ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতি বজায় থাকায় সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার বেশির ভাগ শেয়ারের দাম বেড়েছে। এতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এদিন সূচকও সাড়ে ৪০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের থেকে ৫৬ পয়েন্ট বা ০.৯২ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ১২৫.৪১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এই সূচক গত সাড়ে ৪০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে এরচেয়ে সূচক বেশি ছিল ২০১৮ সালের ৩০শে জানুয়ারিতে। ওইদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ১২৭.৮০ পয়েন্টে। এ নিয়ে ডিএসই সূচক টানা পাঁচ দিন বাড়ল। এতে ডিএসইক্সে যোগ হয়েছে মোট ১১১.৭৯ পয়েন্ট।
এর আগের দুদিন অবশ্য মাঝারি পতনে সূচক কমেছিল ৫৩ পয়েন্ট।
পাশাপাশি বাজার চাঙ্গা থাকায় সোমবার বেশিরভাগ শেয়ারের দাম বেড়েছে। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়ে ৫ লাখ ১৩ হাজার ৮৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ডিএসই’র ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
সোমবার দেশের প্রধান এই পুঁজিবাজারে লেনদেনও বেড়ে দুই হাজার টাকায় পৌঁছেছে। আগের দিনের তুলনায় ১১.৩৫ শতাংশ বা ২০৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৪৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। আগের কর্মদিবসে যা ছিল ১ হাজার ৮৩৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
এদিন ডিএসইতে ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। এই বাজারে লেনদেন হয়েছে ৩৭২টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২২৪টির এবং কমেছে ১১৯টির। অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির দর।
ডিএসই’র অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ৮.৯৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩০৫.৫৭ পয়েন্টে। ডিএস৩০ সূচক ১৩.৫৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ২ হাজার ২২০.৮৯ পয়েন্টে।
সোমবার খাতওয়ারী লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং বীমা খাত ছাড়া বাকি সব খাতের শেয়ারের দাম বেড়েছে। এদিন ব্যাংক খাতের ৮১ শতাংশ শেয়ারের দাম বেড়েছে। শেয়ার কেনাবেচাও বেড়েছে গত কয়েকদিনের চেয়ে বেশি। এই খাতে লেনদেন হয়েছে মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতেও ছিল ঊর্ধ্বগতি। এই খাতে ৭৪ শতাংশ শেয়ারের দাম বেড়েছে। লেনদেন হয়েছে মোট লেনদেনের ৪.০৮ শতাংশ। এদিন বস্ত্র খাতের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দামও বেড়েছে। এই খাতে তালিকাভুক্ত ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে ৫৫টির শেয়ারের দাম বেড়েছে, শতকরা হারে যা ৯৫ শতাংশ। লেনদেনও বেড়ে মোট লেনদেনের ১৮ দশমিক ৩৭ শতাংশে পৌঁছেছে। গত কয়েক দিন থেকে গড়ে বস্ত্র খাতের লেনদেন মোট লেনদেনের ৮ শতাংশের মত ছিল। সোমবার প্রকৌশল খাতেও লেনদেন বেড়ে মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ হয়েছে। দাম বেড়েছে এখাতের ৫০ শতাংশ শেয়ারের। ওষুধ খাতেও ৭৭ শতাংশ শেয়ারের দাম বেড়েছে। লেনদেন হয়েছে মোট লেনদেনের ৬.৯৯ শতাংশ।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ৬৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। এই খাতে লেনদেন হয়েছে মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। বীমা খাতে ৮২ শতাংশ শেয়ারের দাম কমেছে। এই খাতে লেনদেন হয়েছে মোট লেনদেনের ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এ নিয়ে টানা কয়েকদিন ধরে কমছে বীমা খাতের শেয়ার। লেনদেনও আগের তুলানয় কমেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এ খাতে ২০ শতাংশের উপরে লেনদেন হত।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জও (সিএসই) এদিন বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় সূচকও বেড়েছে। এই বাজারের প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৭৮.৭১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৭ হাজার ৭৭৬.২৫ পয়েন্টে। এই বাজারে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় ৪৮.৪০ শতাংশ বা ৭৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা কমেছে। মোট ৭৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিন ছিল ১৫৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। সিএসইতে ৩০৯টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৯৫টির, কমেছে ৯৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির দর।