মাদকাসক্তির কারণে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ১০৬ জন সদস্য গত ২৭ মাসে চাকরি হারিয়েছেন। মাদক কারবারিদের সঙ্গে মেলামেশা, সঙ্গদোষ, পারিবারিক অশান্তির মতো কারণে পুলিশের এই সদস্যরা মাদকে ঝুঁকে পড়েন। ডিএমপি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
পুলিশের নিজস্ব অনুসন্ধানে ডিএমপিতে কর্মরত কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শক পদমর্যাদার ১১৩ জনকে মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়, এদের মধ্যে ওই ১০৬ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, বাকি সাতজনের বিষয়টি আপিল পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, এই চাকরিচ্যুতরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এঁরা যেকোনো বড় ধরনের অপরাধ করতে পারেন। তাই তাঁদের নজরদারিতে রাখতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে বলা হয়েছে।
২০২০ সালের জুলাই থেকে ডিএমপিতে পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট শুরু করা হয়। প্রথম দফায় সাতজনের ডোপ টেস্ট করলে বেশির ভাগের ফল পজিটিভ আসে। পরে বিভিন্ন ইউনিটের আরো ১৮ জনের পরীক্ষা করলে একজনের পজিটিভ আসে। এতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সতর্ক হন। পর্যায়ক্রমে সন্দেহভাজন সব পুলিশ সদস্যকে ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে।
গত বছরের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ১২ জন চাকরিচ্যুত হয়েছেন। ডিএমপি সূত্র জানায়, অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ল্যাবে মাদকাসক্তি শনাক্তের এই পরীক্ষা (ডোপ টেস্ট) করা হয়।
ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণ করা পুলিশের দায়িত্ব। সেই পুলিশ যদি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, তাহলে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করবে কিভাবে। তাই চাকরিচ্যুতির মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ’
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, ‘সারা দেশের পুলিশ সদস্যদের এই ব্যবস্থার আওতায় আনা গেলে বাহিনীর মাদকবিরোধী কার্যক্রমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি সদস্যরা যেন মাদকে না জড়ান, সে বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রমও নিতে হবে। ’
আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি ডিএমপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠা দিবস। এ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার ডিএমপি সদর দপ্তরে শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘নগরবাসীর যতটা প্রত্যাশা ছিল, আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও হয়তো সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। তবে সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মাত্র ৩২ হাজার পুলিশ সদস্য দিয়ে দুই কোটি নাগরিকের সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। যদি নগরবাসী তথ্য দিয়ে সহায়তা করে তাহলে সম্ভব। ’
ডিএমপির ৪৭ বছরে বড় অর্জন প্রসঙ্গে কমিশনার বলেন, ‘জঙ্গি দমন সবচেয়ে বড় অর্জন। কেননা জঙ্গি দমন নিয়ে কোথাও কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। তা ছাড়া খেলাসহ আন্তর্জাতিক যত ইভেন্ট হয়েছে, শৃঙ্খলার সঙ্গে সব শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে পেরেছি। অপরাধ সংঘটিত হলে এর রহস্য উদঘাটনে আমাদের ৯০ শতাংশের বেশি সফলতা রয়েছে। ঘটনা ঘটার সপ্তাহখানেকের ভেতরেই আমরা এর রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছি। ’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে ডিবিতে একটি ল্যাব তৈরি করা হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থাকবে এই ল্যাবে। পোশাকের ছেঁড়া কোনো অংশ, কোনো কাগজের টুকরা, মোটরসাইকেলের নাম্বার প্লেট কিংবা এ রকম কোনো অংশবিশেষ দিয়ে সহজে একটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। শিগগিরই এটি করা হবে। ’
ডিএমপিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে ৫৪ শতাংশ পথচারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজধানীর ফুটপাত, ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে হাঁটার সুযোগ নেই। এগুলো কারো না কারো দখলে থাকে।
থানা পুলিশের মামলা না নেওয়া প্রসঙ্গে কমিশনার বলেন, ‘পুলিশের একটি কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে, ডাকাতি-ছিনতাই মামলা নিতে চায় না। অথচ মামলা নেওয়ার জন্যই সরকার আমাদের বেতন-ভাতা দিচ্ছে। কেউ মিথ্যা মামলা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগও রয়েছে। তাই মামলা নিতেই হবে। ’
কমিশনার বলেন, ‘মাদক মামলাগুলো রুট লেভেল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার সফলতা আমাদের কমই রয়েছে। কারণ যারা মাদক আনে, তারা স্টেজের লোকদের চেনে না, তাদের সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে না। এখন অ্যাপসের মাধ্যমেও মাদক বিক্রি করা হচ্ছে। ’
তিন বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৫০টি মাদক মামলা হচ্ছে। ৬০ জনেরও বেশি মানুষকে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।