পাতালরেলের কাজ শুরু আগামী বছর

: Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম
: ২ years ago

উড়াল ও পাতাল পথের সমন্বয়ে দেশের প্রথম নগর রেলের নির্মাণকাজ আগামী বছরের প্রথম দিকে শুরু হতে যাচ্ছে। এটি হবে মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বা মেট্রো রেলের ৫ নম্বর লাইনের উত্তর রুট। এরই মধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রাথমিক নকশা ও পরামর্শক নিয়োগের কাজ শেষ হয়েছে। চলছে জরিপ, বিশদ নকশা ও জমি অধিগ্রহণের কাজ।

 

এমআরটি-৫ উত্তর রুটের নির্মাণকাজে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণ হিসেবে আসবে ২৯ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। এই ঋণের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসছে জাপানের কাছ থেকে। এ জন্য গত মঙ্গলবার জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সঙ্গে ঋণচুক্তি সই হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের প্রথম দিকে শুরু হতে যাচ্ছে মাঠ পর্যায়ের নির্মাণকাজ।

এমআরটি-৫ উত্তর রুটের প্রকল্প পরিচালক মো. আফতাব হোসেইন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন ধাপের কাজ এখন বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট তিনটি ঋণচুক্তি হয়েছে। বিশদ নকশার কাজও শেষ পর্যায়ে। তবে পাতালপথের নকশায় দেরি হচ্ছে। জমি অধিগ্রহণের কাজ ভালো এগিয়েছে। ডিপোর জন্য ভূমি উন্নয়ন কাজের মধ্য দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ’ তিনি বলেন, ‘সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হবে। এর আগে সরকার ও ঋণদাতা সংস্থার একাধিক অনুমোদনের বিষয় আছে। আগামী বছরের শেষের দিকে পাতালপথের নির্মাণকাজ শুরু হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়েই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। ’

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ঢাকার যানজট কমাতে নির্মিত হবে মোট পাঁচটি মেট্রো রেল রুট। এর মধ্যে শহরের পূর্ব-পশ্চিম দিকে তৈরি করা হবে এমআরটি-৫-এর উত্তর রুট। এই পথের দৈর্ঘ্য হবে ২০ কিলোমিটার, যার মধ্যে ১৩.৫০ কিলোমিটার হবে পাতালপথ। এই পথে মোট ১৪ স্টেশনের মধ্যে ৯টি হবে পাতালপথে।

সূত্র জানায়, প্রতিটি মেট্রো ট্রেনে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৮৮ জন যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা থাকবে। প্রতি ঘণ্টায় উভয় দিকে ৫৩ হাজার ২০০ যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালে প্রতিদিন ১২ লাখ ৩০ হাজার যাত্রী এই নগর ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবে। প্রতিটি একমুখী মেট্রো ট্রেন হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা (পূর্বমুখী) পৌঁছবে ৩২ মিনিট ২৭ সেকেন্ডে।

আন্ত লাইন সংযোগ

এমআরটি লাইন-৫ উত্তর রুটের সঙ্গে এমআরটির অন্য লাইনগুলোর আন্ত লাইন সংযোগ থাকবে, যেখানে যাত্রীরা এই ট্রেন থেকে নেমে অন্য রুটের ট্রেনে উঠতে পারবে। এই লাইনটি গাবতলীতে এসে এমআরটি-৫ দক্ষিণ রুট এবং এমআরটি-২-এর সঙ্গে আন্ত লাইন সংযোগ থাকবে। মিরপুর-১০ স্টেশনে এমআরটি-৬-এর সঙ্গে এবং নতুনবাজার স্টেশনে এসে এমআরটি লাইন-১-এর সঙ্গে আন্ত লাইন সংযোগ থাকবে।

প্রকল্পের পরিস্থিতি

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্পে সভাব্যতা যাচাই, প্রাথমিক নকশা ও পরামর্শক নিয়োগ শেষ। বিভিন্ন সার্ভে ও বিশদ নকশার কাজ চলমান আছে। হেমায়েতপুর ডিপো নির্মাণের জন্য প্রথম পর্যায়ে ৪০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটি অনুমোদন করেছে। এখন জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান। বর্তমানে গণপূর্ত বিভাগ, বন বিভাগ ও স্থানীয় সাবরেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে অধিগ্রহণাধীন জমির উপরিস্থিত অবকাঠামো, গাছপালা ও জমির মূল্যহার নির্ধারণের কার্যক্রম চলমান।

প্রথমে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু করার কথা ছিল। পরে তা বদলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শুরু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে প্রকল্প শেষের লক্ষ্য এখনো ২০২৮ সালের ডিসেম্বর নির্ধারিত রয়েছে।

যে পথে চলবে, কোথায় হবে স্টেশন

সাভারের হেমায়েতপুর এলাকা থেকে রাজধানীর ভাটারা পর্যন্ত ১৪টি স্টেশনের মধ্যে হেমায়েতপুর, বালিয়ারপুর, বিলামালিয়া, আমিনবাজার ও ভাটারা এলাকায় উড়ালপথে হবে স্টেশন। আর গাবতলী, দারুসসালাম, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৪, কচুক্ষেত, বনানী, গুলশান-২ ও নতুনবাজার এলাকায় স্টেশন হবে পাতালপথে। উড়ালপথে ট্রেন চলবে প্রতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে, আর পাতালপথে ৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়।

কাজের সময় জট নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা

এই প্রকল্পের কাজের সময় যানজট যেন প্রকট আকার ধারণ না করে, সে জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করছে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, এই রুট নির্মাণের সময় যানজট নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (টিএমপি) প্রণয়ন করা হচ্ছে। এই লাইনে উড়ালপথ নির্মাণের সময় সড়কের মাঝে শক্ত বেড়া দিয়ে কাজ করা হবে। এতে রাস্তা কিছুটা ছোট হয়ে এলেও নির্মাণকাজে যান চলাচল থেমে থাকবে না।

পাতাল অংশে ৯টি স্টেশন রয়েছে, যা উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে নির্মাণ করা হবে। সড়কের অর্ধেকাংশ ব্যবহার করে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে ২০০ মিটার দীর্ঘ স্টেশন নির্মাণের প্রাথমিক কাজ সমপন্ন করতে প্রায় চার মাস সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। এ সময়ের পর নির্মাণাধীন স্টেশন অংশ প্রায় ১০ ইঞ্চি পুরু স্টিলের পাত দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে। এ পাতের ওপর দিয়ে অনায়াসে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। আর মাটির নিচে স্টেশন নির্মাণের কাজ চলতে থাকবে। টানেল নির্মাণে যানবাহন চলাচলে কোনো প্রভাব পড়বে না।

পথচারীরাও পাবে বাড়তি সুবিধা

পাতাল স্টেশনে আন্ডারপাসের মতো স্টেশনের সিঁড়ি, লিফট ও এসকেলেটর ব্যবহার করে রাস্তার এপার থেকে ওপারে যাওয়া-আসা করা যাবে। একইভাবে উড়াল স্টেশনের সিঁড়ি, লিফট ও এসকেলেটর ব্যবহার করে রাস্তা পারাপারের সুযোগ থাকবে। তবে পেইড জোন এলাকায় ও প্ল্যাটফর্মে যাওয়া যাবে না। পথচারীরা রাস্তা পারাপারের জন্য এ ব্যবস্থাকে বিদ্যমান ফুট ওভারব্রিজ/আন্ডারপাসের অতিরিক্ত সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।

রেলের সংখ্যা ও যাত্রী  পরিবহন সক্ষমতা

বলা হচ্ছে, মেট্রো রেলের এই পথের জন্য প্রথমে আট কোচের সমন্বয়ে তৈরি ২২ সেট মেট্রো ট্রেন দিয়ে চলাচল শুরু করা হবে। তবে পরবর্তী সময়ে মেট্রো সেট আরো বাড়ানোর সুযোগ থাকবে। আটটি কোচের মধ্যে মাঝের ছয়টির প্রতিটি কোচে সর্বোচ্চ ৩৯০ জন এবং ট্রেইলার কোচের প্রতিটিতে সর্বোচ্চ ৩৭৪ জন করে মোট তিন হাজার ৮৮ জন যাত্রী একই সময় পরিবহন করা সম্ভব হবে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, মেট্রো রেল লাইন-৫-এর মধ্য দিয়ে নতুন করে ঢাকার পূর্ব-পশ্চিমমুখী যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে, যা বর্তমান যোগাযোগব্যবস্থায় নেই। ফলে এই রুট অনেক গুরুত্বপূর্ণ; যদিও এতে সার্বিক যানজটের চিত্র খুব একটা বদলে যাবে না। তবে সবগুলো রুটের কাজ শেষ হলে যানজটের সমাধান মিলবে।