জুরায়জ নামে বনি ইসরাঈলের একজন আবেদ ছিলেন। সারাক্ষণ তাঁর ইবাদতখানায় ইবাদতে নিমগ্ন থাকতেন। (একবার) তাঁর মাতা তাঁর কাছে এলেন। এরপর তাঁর দিকে মাথা উঁচু করে তাঁকে ডাকছিলেন।
বলেন, হে জুরায়জ! আমি তোমার মা, আমার সঙ্গে কথা বলো। এ কথা এমন অবস্থায় বলছিলেন, যখন জুরায়জ সালাতে নিমগ্ন ছিলেন। তখন তিনি মনে মনে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ! (একদিকে) আমার মা আর (অন্যদিকে) আমার সালাত (আমি কী করি?)
অবশেষে তিনি তাঁর সালাতকে অগ্রাধিকার দিলেন এবং তাঁর মা ফিরে গেলেন। পরে তিনি দ্বিতীয়বার এলেন এবং বলেন, হে জুরায়জ! আমি তোমার মা, তুমি আমার সঙ্গে কথা বলো। তিনি বলেন, ইয়া আল্লাহ! আমার মা, আমার সালাত। তখন তিনি তাঁর সালাতে ব্যস্ত রইলেন। তখন তাঁর মা বললেন, হে আল্লাহ! এ জুরায়জ আমারই ছেলে। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। সে আমার সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করল। হে আল্লাহ! তার মৃত্যু দিয়ো না, যে পর্যন্ত তাকে ব্যভিচারিণীর মুখ না দেখাও।
রাসুল (সা.) বলেন, যদি তার মাতা তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো বিপদের জন্য বদদোয়া করতেন তাহলে অবশ্যই সে বিপদে পতিত হতো।
এক মেষ রাখাল জুরায়জের ইবাদতখানার কাছে (মাঝে মাঝে) আশ্রয় নিত। এরপর গ্রাম থেকে এক নারী বের হয়ে এলে ওই রাখাল তার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। এতে ওই নারী গর্ভবতী হয়ে পড়ে এবং একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেয়। তখন লোকেরা তাকে জিজ্ঞেস করল, এই (সন্তান) কোথা থেকে? সে জবাব দিল, এ ইবাদতখানায় যে বাস করে, তার থেকে। তিনি বলেন, এরপর তারা শাবল-কোদাল ইত্যাদি নিয়ে এলো এবং চিৎকার করে ডাক দিল। তখন জুরায়জ সালাতে মশগুল ছিলেন। কাজেই তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলেন না। তিনি বলেন, এরপর তারা তার ইবাদতখানা ধ্বংস করতে লাগল। তিনি এ অবস্থা দেখে নিচে নেমে এলেন। এরপর তারা বলল, এ নারীকে জিজ্ঞেস করো (সে কী বলছে)। তিনি বলেন, তখন জুরায়জ মুচকি হেসে শিশুটির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, তোমার পিতা কে? তখন শিশুটি বলল, আমার পিতা ওই মেষ রাখাল। যখন তারা সে শিশুটির মুখে এ কথা শুনতে পেল তখন তারা বলল, (হে দরবেশ) আমরা তোমার ইবাদতখানার (গির্জার) যতটুকু ভেঙে ফেলেছি তা সোনা-রুপা দিয়ে পুনর্নির্মাণ করে দেব। তিনি বলেন, না; বরং তোমরা মাটি দ্বারাই আগের মতো তা নির্মাণ করে দাও। এরপর তিনি তাঁর ইবাদতগাহে উঠে বসলেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪০২)