আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা প্রায়ই ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করেন। অনেকেরই পেশি দুর্বলতার কারণে সিঁড়ি ভাঙ্গা, ওঠা-বসার মত কাজ করতে অসুবিধা হয়। এসব সমস্যার মূলে রয়েছে ভিটামিন ডি-এর স্বল্পতা। `ভিটামিন ডি’ এক প্রকারের চর্বি জাতীয় তরল ভিটামিন।
যা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজগুলো শোষণ করতে ভিটামিন ডি আমাদের শরীরকে সাহায্য করে।
সাধারণত সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে ত্বকে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। শরীরে এ ভিটামিনের ঘাটতি হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। অনেকেই এমন জায়গায় বসবাস করে যেখানে সূর্যের আলোর স্বল্পতা রয়েছে। এছাড়াও অনেকেই তাদের কাজের এবং জীবনযাত্রার প্রকৃতির কারণে সূর্যের আলোতে বাইরে থাকার খুব বেশি সুযোগ পান না। আবার অনেকের ক্ষেত্রে নিছক অসচেতনতার কারণেই ভিটামিন ডি-এর অভাব দেখা দেয়।
ভিটামিন ডি-এর অভাব শিশুদের রিকেটস হতে পারে। ফলে তাদের নরম হাড় তৈরি হয়ে কঙ্কালের গঠন বিকৃত হয়ে যায়। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্কদের অস্টিওম্যালাসিয়া নামক সমস্যা পরিলক্ষিত হতে পারে যার ফলে তাদের হাড় নরম হয়ে যায়। এছাড়াও ভিটামিন ডি-এর অভাবের কারণে ক্লান্তি, হাড়ের জোড়ায় ব্যথা, পেশী দুর্বলতা, মেজাজ পরিবর্তনসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। অনেকের মাথাব্যথার কারণের পেছনেও রয়েছে ভিটামিন ডি-এর অভাব।
অনেকক্ষেত্রে ক্লিনিক্যালি স্নায়বিক রোগ এবং নিউরোসাইকোলজিকাল ডিসঅর্ডার, জ্ঞানীয় দুর্বলতা এবং নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের পেছনে ভিটামিন ডি-এর অভাব দায়ী থাকে। ঔষুধ এবং সাপ্লিমেন্টের প্রাপ্যতা থাকা সত্যেও অনেকের ভিটামিন ডি-এর অভাব হতে পারে। কারণ কিছু চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভিটামিন ডি-এর অভাব দেখা দেয়। সিস্টিক ফাইব্রোসিস, সিলিয়াক ডিজিজের চিকিৎসা অন্ত্রকে ভিটামিন ডি শোষণ করা থেকে বিরত করতে পারে। অনেকক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-এর সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলেও।
এছাড়াও যাদের গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারি হয়েছে তাদের ভিটামিন ডি শোষণ করতে অসুবিধা হয়ে থাকে। আবার যারা স্থূলকায় তাদের রক্তে ভিটামিন ডি কম থাকে। যারা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু এবং নিরামিষভোজী তাদেরও এই ভিটামিনের ঘাটতি হতে পারে। যাদের কিডনি এবং লিভারের রোগ রয়েছে তাদের জৈবিক ব্যবহারের জন্য ভিটামিন ডি প্রক্রিয়া করতে শরীরের ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
একজন প্রাপ্তবয়স্কের প্রতিদিন ১০-২০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত। যদিও এটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণ প্রয়োজন। নবজাতক, শিশু, কিশোর এবং বয়স্কদের আরও বেশি প্রয়োজন হতে পারে। বিভিন্ন জৈবিক এবং বাহ্যিক কারণের উপর নির্ভর করে একেকজনের কাছে ভিটামিন ডি-এর প্রয়োজনের পরিমাণ পরিবর্তিত হয়। সঠিক পরিমাণ নির্ধারণের অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।