বিশ্বমন্দার প্রভাবে ইউরোপ ও আমেরিকার বায়াররা ক্রয়াদেশ কমিয়ে দেয়ায় দেশের তৈরি পোশাক রফতানি বিপর্যয়ের মুখোমুখি। আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে অন্তত ১২ শতাংশ ক্রয়াদেশ কমেছে। সেই সঙ্গে রফতানি প্রায় ১৪ শতাংশ কমেছে।
বিপর্যয়ের মুখোমুখি তৈরি পোশাক খাত, রফতানি কমেছে ১৪ শতাংশ
কমল দে
ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতি ক্রমেই স্থবির হয়ে পড়ছে। যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে।
দেশের তৈরি পোশাক খাত পুরোপুরি ইউরোপ ও আমেরিকানির্ভর। বিশ্বমন্দার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ায় বাংলাদেশে বিদেশি বায়ারদের ক্রয়াদেশ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। চলতি বছরের আগস্টে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের রফতানি আয় ছিল ৩ হাজার ৭৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা সেপ্টেম্বরে কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৬১ বিলিয়ন ডলারে।
রফতানি কমে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মেরাজ-ই মোস্তাফা কায়সার বলেন, এখন যেহেতু বায়ারদের বেচাবিক্রি কমে গেছে, তাই তারা ক্রয়াদেশ দেয়ার আগে অনেক চিন্তাভাবনা করছেন। স্বাভাবিকভাবে বায়াররাও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। অতি প্রয়োজন ছাড়া তারা ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন না।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, ‘বায়াররা বর্তমানে একটি শঙ্কার মধ্যে আছেন যে তারা যে পণ্যটি আমদানি করছেন, তা তারা বিক্রি করতে পারবেন কি না। এর জন্য আমাদের তৈরি পোশাকের রফতানি কমে যাচ্ছে।’
এদিকে রফতানি ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রামের ছোট ছোট পোশাক কারখানা। এ কারখানাগুলো আগস্টে ১২৮ মিলিয়ন ডলারের বেশি গার্মেন্টস পণ্য রফতানি করলেও সেপ্টেম্বরে ১১৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। এদিকে চলতি মাসের ১৭ তারিখ অবধি তারা ৫৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। এ অবস্থায় তাদের জন্য শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করে কারখানা সচল রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিজিএমইএ-র সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে যেভাবে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, সামনের মাসগুলোও একইভাবে যাবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। এর সমাধান কী হবে তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু আমরা সবাই এখন বেশ শঙ্কার মধ্যে আছি। কারণ, কাজ না থাকলে আমরা কী করব?’
তৈরি পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে জাহাজীকরণ প্রক্রিয়া চট্টগ্রাম বন্দরের ১৯টি বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোয় (আইসিডি) সম্পন্ন করা হয়। এ ক্ষেত্রে অফডক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) বলছে, আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে তৈরি পোশাক রফতানি অন্তত ১৪ শতাংশ কমেছে।
বিকডার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের আগস্টে ৬৮ হাজার ৫৭৩ কনটেইনার গার্মেন্টস পণ্য বিদেশে রফতানি হলেও সেপ্টেম্বরে তা কমে ৫৬ হাজার ৯৭৮ টিইইউএস কনটেইনারে দাঁড়ায়। এদিকে অক্টোবরের ১৫ তারিখ অবধি ২৬ হাজার ১২৭ কনটেইনার পণ্য রফতানি হয়েছে। অথচ মার্চে রেকর্ড ৭০ হাজার ৭৭৩ কনটেইনার পণ্য রফতানি হয়েছিল।
বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, ‘আমরা মনে করি বর্তমানে রফতানি বাণিজ্য নিম্নগামী সূচকে রয়েছে। এমন পরিস্থিতি আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিরাজ করবে।’
বাংলাদেশ ১৬৯টি দেশে তৈরি পোশাক রফতানি করে। যার বার্ষিক আর্থিক মূল্য ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। এর মধ্যে ৮২ শতাংশ রফতানি হয় ইউরোপ ও আমেরিকার ১১টি দেশে।