ডেস্ক রিপোর্ট, স্বদেশ নিউজ২৪ :
রিং বা স্টেন্ট হচ্ছে ভিবিন্ন মেটাল দিয়ে তৈরী জালের মতো একটি ডিভIইস যা মানুষের রক্তনালিতে ব্লক হলে সেখানে প্রতিস্থাপন করে এটি বাইপাস সার্জারীর বিকল্প একটি পদ্ধতি। ফলে বুক কাটার ভয় নেই বলে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। আজ থেকে ২৬-২৭ বছর আগে বাংলাদেশে এই আধুনিক চিকিৎসার অল্প পরিসরে শুরু হয় I ২০০০ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে এই চিকিৎসা সেবা বাড়তে থাকে। বর্তমান বাংলাদেশে ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি ডিপার্টমেন্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু এর পেছনে অনেক ইতিহাস রয়েছে। সরকারের পাশাপাশি রিং কোম্পানি গুলোরও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। দেশে বিদেশে ভিবিন্ন কনফারেন্স এবং ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে আমাদের দেশের কার্ডিওলজিস্টদের আধুনিক চিকিৎসার জ্ঞান আহরণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে। ফলে বর্তমানে আমাদের দেশের কার্ডিয়াক চিকিৎসা বিশ্বমানের এবং অনেক কার্ডিওলজিস্ট আছেন যারা বিশ্বমানের এমনকি বিশ্ব দরবারে তাদের রয়েছে ব্যাপক সুনাম ও গ্রহণযোগ্যতা । যখন এই রিং ব্যবসার একটি বাজার সৃষ্টি হয় তখন অন্যান্য দেশের সাথে সাথে বাংলাদেশেও প্রোডাক্টস রেজিঃ এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। পরে ২০১৫/১৬ এর দিকে ঔষধ প্রশাসনের মাধ্যমে মেডিক্যাল ডিভাইস রেজিঃ শুরু হয়। তৎকালীন ঔষধ প্রশাসনের ডি.জি. মেজর জেঃ মোস্তাফিজুর রহমান সাহেব এইসব হার্টের রিং যাচাই বাছাইয়ের জন্য এক্সপার্ট টিম গঠন করেন,
এক্সপার্ট টিমের সদস্য এবং একটি মার্কআপ ফর্মুলায় রিং এর দাম নির্ধারন করেন, যা হেল্থ মিনিস্ট্রি থেকে এ্যপ্রুভ করা। মার্কআপ ১.৫৫% অর্থাৎ আমদানীকৃত প্রাইস এর সাথে ১.৫৫% যোগ করে প্রোডাক্টস এর দাম (MRP) নির্ধারন করা হয়। পরবর্তীতে এই মার্কআপ হয় ১.৪২%। তবে এই মার্কআপ কিভাবে পরিবর্তন হলো তা জানা নেই।
মেজর জেনাঃ মোস্তাফিজুর রহমানের পরে ডি.জি. হিসেবে যোগদান করেন মেজর জেনাঃ মাহবুবুর রহমান। তার সময়কালে মেডিক্যাল ডিভাইস রেজিঃ, ইনডেন্ট, প্রাইস ইস্যুর ক্ষেত্রে আর কখনোই তৎকালীন এক্সপার্ট কমিটিকে ডাকা হয় নাই। ২০২২ সালের জানুয়ারী তে ডি.জি. হিসেবে দায়িত্ব পান মেজর জেনাঃ মুহা : ইউসুফ । তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর মেডিক্যাল ডিভাইসের রেজিঃ, ইনডেন্ট, প্রাইস সহ সমস্ত কার্যক্রম প্রায় ৮/৯ মাস বন্ধ থাকে। ফলে আমদানি কারকগণ বিপদে পরে । ৮/৯ মাস পরে কাজ আবার চলমান হয়।
কিন্তু ডলারের দাম লাগামহীন বৃদ্ধির ফলে প্রতিটি প্রোডাক্টের দাম ডলারের দামের সাথে সমন্বয় করা হয়। ফলে দাম কিছুটা বৃদ্ধি পায়। এই সুযোগে কিছু কুচক্রী মহল নিউজ করে সবাইকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এতে সুযোগ পেয়ে তথাকথিত ২০১৬ সালের এক্সপার্ট কমিটি মাথা চাড়া দিয়ে উঠে এবং বর্তমান ডিজিকে ভুল বুঝিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে। বর্তমানে বেশির ভাগ ডিভাইস ইউরোপে তৈরী হয়। তিনটি আমেরিকান কোম্পানি এ্যাবোট, মেডট্রোনিক, বোস্টন সায়েন্টিফিক এদের প্রোডাক্ট তৈরী হয় ইউরোপে। কিন্তু রুগী কে বলে আমেরিকান। এবং এদের প্রোডাক্ট এর দামও আকাশ ছোঁয়া। অন্যান্য ইউরোপিয়ান প্রোডাক্টসের চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সকল রিং এর দাম সমান। সেখানে বাংলাদেশে এই তিন কোম্পানির প্রোডাক্ট এর দাম আসমান জমিন পার্থক্য। এক্সপার্ট কমিটি সহ ঔষধ প্রশাসনের ডি.জি. মহোদয় রিং এর দাম সহনশীল প্রাইসে আনার নামে এ্যাবোট, মেডট্রোনিক, বোস্টন সায়েন্টিফিক এই তিন কোম্পানিকে এক চেটিয়া করিডোর দেয়ার পায়তারা করেছে। এই তিন কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করে অত্যন্ত উচ্চ দাম বহাল রেখে নতুন করে তাদের দাম নির্ধারন হয়। এই তিন কোম্পানির সাথে এক্সপার্ট কমিটি, ঔষধ প্রশাসনের ডি.জি. সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে সিন্ডিকেট করে। অন্যান্য কোম্পানি যাতে ব্যবসা না করতে পারে তার জন্য উঠে পরে লেগেছে।
সরজমিনে তদন্ত করে দেখা যায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট এর পরিচালক ডাঃ মীর জামাল উদ্দিন তার স্ত্রীর নাম দিয়ে মেডট্রনিক ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করছে। তিনি এই এক্সপার্ট কমিটির সক্রিয় সদস্য । খুঁজ নিলে দেখা যাবে যারা এক্সপার্ট কমিটিতে আছেন তাদের মধ্যে অনেকেই এই তিন কোম্পানির কোনোটাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ।তাই তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে আকাশ ছোয়া দাম নির্ধারন করে ডিজিডি এর মিটিং এ থেকে তাদের আখের গুছাত ব্যস্ত। তাদের আচার আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে অনেক এক্সপার্টি মিটিংয়ে উপস্থিত হন না।
অনেক কোম্পানির প্রতিনিধির সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুঃখ এবং ক্ষোভের কথা, এই দেশে কোন আইন নেই, নেই কোন নিয়ম ।
জোর যার মুল্লুক তার এই অবস্থা চলতেছে।কারন ইতিমধ্যে এ্যাবোট, মেডট্রোনিক, বোস্টন সায়েন্টিফিক কে বর্তমান মার্কআপ অনুযায়ী প্রাইস দিলেও অন্যান্য ১৫ /২০ টি ইউরোপিয়ান কোম্পানি গুলোর সাথে বর্তমান মার্কআপ অনুযায়ী দাম দিতে গড়িমসি করেছে। এমনকি এই ১৫/২০ টি ইউরোপীয়ন কোম্পানি যাতে ব্যবসা করতে না পারে তা নিয়ে চলছে সিন্ডিকেট । নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক শর্তে কয়েকজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সকল রিং এর দাম সমান এবং কম, কিন্তু বাংলাদেশে কিছু কিছু কোম্পানির প্রাইস অনেক বেশি, দাম কমানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন দাম কমলে খুবই ভালো হয়,কিন্তু আমার জানামতে বসটন সাইন্টিফিক এর দাম
দেখেছি । তাতে দাম খুব কমেনি, আরও কমা উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি । ভারতের সিনার্জি রিং এর দাম ৪১ হাজার রুপি আর বাংলাদেশে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। ৪১ হাজার রুপি দাম হলে বাংলাদেশে এর দাম ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার সেখানে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা কিভাবে হয় । এতে করে ভারত থেকে পাচার হয়ে রিং আসে বাংলাদেশে, সরকার হারায় রাজস্ব।