চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানা পুলিশ হেফাজতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক উপপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল পার্কভিউতে হৃদরোগ জনিত সমস্যায় তার মৃত্যু হয়। তবে নিহতের স্বজনদের দাবি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
চান্দগাঁও থানার ওসি খাইরুল ইসলাম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি-উত্তর) পংকজ দত্ত।
নিহতের ছেলে ক্যাপ্টেন নাফিস শহিদ বলেন, ‘রাত ১১টার দিকে চান্দগাঁও থানার দুজন সহকারী উপপরিদর্শক গিয়ে আমার বাবাকে থানায় নিয়ে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার চাচারা থানায় যান। উনি হার্টের পেশেন্ট, ওনার ইনহেলার আর মেডিসিন লাগে সবসময়। বাবাকে থানায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মূলফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইনহেলার ও মেডিসিনও বাবার কাছে পৌঁছাতে দেয়নি। পরে ১২টার দিকে বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ঢাকায় ছিলাম। আমাদের জমি নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে বিরোধ ছিল। তবে সাম্প্রতিক কোনো মামলার বিষয়ে আমরা শুনিনি। এমনকি আমার বাবা আদালত থেকে কোনো নোটিশও পাননি।’
দুদক কর্মকর্তা শহিদুল্লাহকে পরিকল্পিতভাবে পুলিশ হত্যা করেছে বলে অভিযোগ নিহতের আরেক ছেলে আসিফ শহিদের। তিনি বলেন, ‘কোনো ওয়ারেন্ট না দেখিয়েই ধস্তাধস্তি করে বাবাকে নিয়ে গেছে তারা। বাবা দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। ন্যূনতম সম্মানটা উনাকে দেয়নি তারা। মার্ডার করেছে তারা, স্প্রেটা পর্যন্ত দিতে দেয়নি। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’
আসিফ শহিদ আরও বলেন, ‘বাবাকে দুদিক থেকে দুজন ও একজন পেছনে শার্টের কলার ধরে ছিলেন। তবে সিসিটিভি ক্যামেরা যেখানে যেখানে আছে সেটা পয়েন্ট আউট করে সেখান দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে গেছে।’
পুলিশের এডিসি পংকজ দত্ত বলেন, একটি সিআর মামলায় রাতে তাকে গ্রেফতার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেফতারের ১৫ মিনিট পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত পার্কভিউ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে নিহতের সঙ্গে কোনো ধরনের অসদাচারণ করা হয়নি বলে দাবি করেছেন চান্দগাঁও থানার ওসি খাইরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ওনাকে গ্রেফতারের পর খারাপ লাগছে বলে জানান। তখন আমার কক্ষে এনে বসিয়েছি। পরে তার ভাইদের জানিয়ে তারাসহ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছেন।
এই ঘটনায় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বগুড়ায় ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে হাবিবুর রহমান হাবিব (৪০) নামে আইনজীবীর সহকারীকে (মুহুরি) গ্রেফতারের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার বিকালে তাকে কোর্টের দরজা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সন্ধ্যায় অচেতন অবস্থায় তাকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রাত পৌনে ৯টার দিকে তিনি মারা যান।
তার মামা অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল হক দাবি করেছেন, ডিবি পুলিশ তার ভাগ্নেকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে।
জানা গেছে, গত ৩ আগস্ট তিনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন খুকি বেগম নামে এক বৃদ্ধা। তিনি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের জোড়া তালপুকুর গ্রামের খোরশেদ আলমের স্ত্রী। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করেন। খুকি তালপুকুরে ছেলেদের সঙ্গে থাকতেন। ৫ আগস্ট সকালে বাড়ির কাছে লিচু বাগানে তার বস্তাবন্দি পচা দুর্গন্ধ লাশ পাওয়া পায়। তার দুই পা (হাঁটুর ওপর) বিচ্ছিন্ন ছিল।
নিকটে এক পা পাওয়া গেলেও অপর পায়ের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে শাজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা হয়। ডিবি পুলিশ ছায়া তদন্ত করছিল।
শাজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার পুলিশ জোড়া তালপুকুর গ্রামে মনোয়ারা (৬০) নামে এক নারীর বাড়ির পায়খানার সেপটিক ট্যাংকে নিখোঁজ ওই পা পায়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মনোয়ারাকে আটক করা হয়। তার বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে তাকে ডিবি পুলিশ অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। তিনি সম্ভবত এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার ব্যাপারে শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া দামারপাড়ার আবদুল কুদ্দুস বাবলুর ছেলে মহুরি হাবিবুর রহমান হাবিবের নাম প্রকাশ করেন।
ডিবি ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজ হাসান দাবি করছেন, শাজাহানপুরে বৃদ্ধা খুকি বেগম হত্যা মামলায় মনোয়ারা নামে এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিকালে হাবিবকে গ্রেফতার করে ডিবি অফিসে আনা হলে তিনি মনোয়ারাকে দেখে বুকে ব্যথা বলে চিৎকার করতে থাকেন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়।
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শফিক আমিন কাজল বলেন, পুলিশ অচেতন অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনেন। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ভর্তির পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হলেও রাতে পৌনে ৯টার দিকে তিনি মারা যান।
আরও পড়ুন: দেশের পথে প্রধানমন্ত্রী
তবে হাবিবের মামা বগুড়া অ্যাডভোকেট বার সমিতির সদস্য ও বগুড়া আইন কলেজের শিক্ষক মঞ্জুরুল হক দাবি করেন, তার আপন ভাগ্নে ও মহুরি হাবিব কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে তার মহুরির দায়িত্ব পালন করতো। মঙ্গলবার বিকালে তার (উকিল) মালতিনগর বাসায় ফাইলপত্র রাখার জন্য কোর্ট থেকে বের হলেই ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এরপর ডিবি অফিসে নিয়ে পুলিশ তাকে হত্যা করেছে। তারা এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।