জামায়াত-শিবির কোনোভাবেই সহিংসতা ও নাশকতার জন্য জঙ্গি সংগঠনের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হতে চায় না। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির ডাকা সরকারবিরোধী কোনো কর্মসূচিতে আগের মতো জামায়াত-শিবির অংশগ্রহণ করছে না। জামায়াতের নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর উচ্চ আদালতের আপিলের রায় ঘোষণার পর কৌশলী অবস্থানে থেকে জামায়াত-শিবির যে কোনো সময় চোরাগুপ্তা সহিংসতার মাধ্যমে দেশে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারে। জামায়াতের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
তবে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের ইস্যুসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের শীর্ষনেতাদের মুক্তির বিষয়ে প্রভাবশালী শরিক দল বিএনপির ভূমিকায় চরম অসন্তুষ্ট দলটির শীর্ষ নেতারা। এ বিষয়টি সামনে রেখে জামায়াত তাদের মিত্র বিএনপির সঙ্গ ছেড়ে দিচ্ছে এ তথ্যটি সাময়িকভাবে নিশ্চিত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
জামায়াতের একজন শীর্ষনেতা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পায়। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত দলীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগে এ অবস্থানের পরিবর্তন হতে পারে না। গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জ্বালাও পোড়াও কর্মসূচি থেকে বর্তমানে জামায়াতের অবস্থানের অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। এ পরিবর্তনের ফলে যাতে সবার দৃষ্টিগোচর হয় যে, জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা কমে গেছে।
জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে, তাদের নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই দেশে সহিংসতা ও নাশকতা চালিয়েছিল। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর ১৯ দলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপির এ সম্পর্কে কোনো উচ্চবাচ্য না করায় জামায়াতের উপলব্ধি হয়েছে, তারা আগের মতো আর কেনো ঝুঁকি নেবে না। জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির পরও বিএনপির নীরবতা জামায়াতকে কষ্ট দিয়েছে। জামায়াতের একজন শীর্ষনেতা বলেছেন, ঝুঁকি নিয়েই জামায়াত সহিংসতা করেছে। তারপরেও বিএনপি কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার পরও প্রকাশ্যে কোনো সমর্থন দেয়নি। তাই জামায়াত জোটের প্রভাবশালী শরিক বিএনপির কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করতে হচ্ছে।
জামায়াতের শীর্ষনেতারা বলেছেন, জামায়াত সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হতে চায় না। তারা পঁচাত্তরের পরে নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার পর গণতান্ত্রিক রাজনীতি করছে। ওই রাজনীতিই বহাল রাখতে চাচ্ছে। কোনোভাবেই তারা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হতে চায় না।
জামায়াতে ইসলামী নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। স্থায়ীভাবে খোলস বদল না হলেও বর্তমান কঠিন সময় নিরাপদে পার করার জন্য তারা নানাভাবে চেষ্টা করছেন।
সূত্রমতে, জামায়াত-শিবির এখন কোনোভাবেই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। জামায়াতের এক প্রভাবশালী নেতা বলেন, জামায়াতের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে এখন আগের মতো সহিংসতা ঘটছে না।