করাচি বিমানবন্দর রক্তাক্ত

a79e839ccdc05bc2f183d9a771fa461d-38পাকিস্তানের করাচির জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গত রোববার রাতে রক্তাক্ত হয়েছে জঙ্গি হামলায়৷ নিরাপত্তা বাহিনীর বেশে বিমানবন্দরে ঢুকে তাণ্ডব চালায় তারা৷
উড়োজাহাজগুলো ধ্বংস এবং যাত্রীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিম্মি করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের প্রস্তুতি নিয়ে হামলা শুরু করে জঙ্গিরা৷ তবে কমান্ডোদের দ্রুত প্রতি-আক্রমণে তাদের সেই লক্ষ্য সফল হয়নি, বরং ১০ হামলাকারীর সবাই নিহত হয়৷ সব মিলিয়ে সংঘর্ষে দুই পক্ষে নিহত হয় ৩০ জন৷
পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শহর করাচির ব্যস্ততম জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ঘটনার শুরু রোববার রাত ১১টার দিকে৷ রাতভর সংঘর্ষের পর গতকাল সোমবার সকালে নিরাপত্তা বাহিনী বিমানবন্দরটি হামলাকারীমুক্ত ঘোষণা করে৷ তবে সকাল নয়টার দিকে বিমানবন্দরে আবার গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়৷ সম্ভবত লুকিয়ে থাকা হামলাকারীরা দ্বিতীয় দফায় আবার সক্রিয় হয়৷ তখন নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা ব্যবস্থা নিলে দ্রুত পরিস্থিতি শান্ত হয়৷ অবশেষে গতকাল বিকেল চারটার দিকে ওই বিমানবন্দর আবার সচল হয়৷
এ হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানি তালেবান বলেছে, তাদের ওপর পাকিস্তানি ও মার্কিন বিমান হামলার প্রতিশোধ নিতেই তারা এ কাজ করেছে৷ একই সঙ্গে এর চেয়ে ভয়াবহ হামলার জন্য প্রস্তুত থাকতে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছে ওই জঙ্গিরা৷ খবর এএফপি ও বিবিসির৷
প্রত্যক্ষদর্শী, নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মকর্তারা জানান, রোববার স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে ১০ জনের একটি দল নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে এমন দুটি ছোট গাড়িতে করে বিমানবন্দরের পুরোনো টার্মিনালের সামনে নামে৷ বিমানবন্দরের নিরাপত্তারক্ষীরা যে পোশাক পরে, তাদের পরনেও ছিল সেই পোশাক৷ সঙ্গে ছিল পরিচয়পত্র৷ পুরোনো টার্মিনালটি কেবল কার্গো ও ভিআইপি ফ্লাইটের জন্য ব্যবহার করা হয়৷
পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রাজা উমর খাত্তাব বলেন, হামলাকারীরা ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করে পুরোনো টার্মিনালের ভেতরে ঢোকে৷ এরপর দুটি দলে ভাগ হয়ে যায়৷ একটি দল ফক্কর গেটের দিকে এগিয়ে যায়, অন্য দলটি যায় কার্গো টার্মিনালের দিকে৷
উমর খাত্তাব আরও বলেন, এরপর হামলাকারীদের উভয় দল গুলি ছোড়ে৷ একই সঙ্গে তারা যাত্রীবাহী বিমান লক্ষ্য করে রকেটও ছুড়তে শুরু করে৷ তবে তা কোনো বিমানে লাগেনি৷ তাদের পরিকল্পনায় বেশ ঘাটতি ছিল বলে মনে হয়েছে৷ তবে অপর একটি নিরাপত্তা সূত্র জানায়, হামলাকারী জঙ্গিরা বেশ উচ্চ প্রশিক্ষিত ছিল৷ ভারী অস্ত্রশস্ত্রের পাশাপাশি তারা শুকনো খাবার ও পানি সঙ্গে নিয়ে ঢুকেছিল৷ এ থেকে মনে করা হচ্ছে, দীর্ঘ অবরোধের পরিকল্পনা ছিল তাদের৷ 
হামলার পরপরই দেশটির সেনা-কমান্ডোরা বিমানবন্দরটি ঘিরে ফেলেন৷ একই সঙ্গে প্রতি-আক্রমণে যোগ দেন পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের সদস্যরা৷ তখন শুরু হয় তুমুল গোলাগুলি৷ আগুন ধরে যায় বিমানবন্দরের অনেক অংশে৷ ধোঁয়ায় ঢেকে যায় বিমানবন্দরের আকাশ৷
বিমানবন্দরের লাগোয়া এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, ‘হঠাৎ করে মধ্যরাতে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই৷ এরপর বাড়ির ছাদে উঠে দেখতে পেলাম, বিমানবন্দরের ভেতরে আগুন জ্বলছে৷’
পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের (পিআইএ) কর্মকর্তা সারমাদ হুসেইন বলেন, ‘আমি আমার দপ্তরে বসে কাজ করছিলাম৷ এ সময় কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে৷ এরপর প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়৷’
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলে দুই পক্ষের গোলাগুলি৷ ভোর পাঁচটার দিকে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিমানবন্দর জঙ্গিমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে৷ তখনো বিমানবন্দরের বিভিন্ন অংশে আগুন জ্বলতে দেখা যায় টেলিভিশনে প্রচার করা ভিডিওচিত্রে৷ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন পুরো এলাকা৷ বিমানবন্দরের প্রধান ফটকের সামনে সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স৷ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল হতাহত ব্যক্তিদের৷
সকাল সোয়া নয়টার দিকে বিমানবন্দরের ভেতর থেকে আবার গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়৷ স্থানীয় গণমাধ্যম তখন জানায়, ঘটনাস্থলে আরও তিনজন হামলাকারী আছে বলে মনে হচ্ছে৷ এরপর সাড়ে নয়টার দিকে নিরাপত্তা বাহিনী আবার অভিযান শুরু করে৷ 
পরে আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের আঞ্চলিক প্রধান রিজওয়ান আক্তার টেলিভিশনে বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে নিহত হয়েছে সাত জঙ্গি৷ বািক তিনজন আত্মঘাতী বোমায় নিজেদের উড়িয়ে দিয়েছে৷’
রেঞ্জার্সের এক মুখপাত্র জানান, হামলাকারীদের সবার বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে৷ ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও বেশ কয়েক ডজন রকেট লঞ্চার উদ্ধার করা হয়েছে৷
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, জঙ্গিদের হামলায় কোনো বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বা যাত্রীদের কেউ হতাহত হয়নি৷ যাত্রীদের

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *