নতুন ক্রেস্ট দেওয়া হবে, আদায় করা হবে অর্থ

6b04daacd35013f6710540a5056b0058-Untitled-2মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক ও সংগঠনকে নতুন ক্রেস্ট তৈরি করে দেওয়া হবে। বিদেশে বাংলাদেশের হাইকমিশন বা রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে এ ক্রেস্ট দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া সরবরাহকারী কোম্পানির কাছ থেকে পরিশোধিত বিল পুনরুদ্ধার করা হবে। সংসদীয় উপকমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এসব পদক্ষেপ নেওয়ার হবে।

বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননা প্রদান বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশসংক্রান্ত আইনজীবী মনজিল মোরসেদের আইনি নোটিশ ‘ডিমান্ড জাস্টিস’-এর জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, ‘বিষয়টি সংসদীয় উপকমিটির তদন্তাধীনে রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সরবরাহকারী কোম্পানিকে পরিশোধিত বিল পুনরুদ্ধার এবং নতুন ক্রেস্ট তৈরি করে বিদেশে বাংলাদেশের হাইকমিশন/রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে বিদেশি বন্ধুদেরকে প্রদান করা ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠি গতকাল সোমবার আইনজীবী মনজিল মোরসেদের চেম্বারে পৌঁছায়।

গত ১৯ মে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ বিষয়ে আইনি নোটিশ পাঠান। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে জানান, গতকাল সোমবার তিনি আইনি নোটিশের জবাব পেয়েছেন।

গত ৬ এপ্রিল ‘ক্রেস্টের স্বর্ণের ১২ আনাই মিছে!’ শিরোনামে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এর ভিত্তিতে শহীদ পরিবারের সদস্য নাসরিন আহমেদের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এই রিটটি দায়ের করেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক ও সংগঠনকে সম্মাননার সময় দেওয়া ক্রেস্টে যে পরিমাণ স্বর্ণ থাকার কথা ছিল, তা দেওয়া হয়নি। আর ক্রেস্টে রুপার বদলে দেওয়া হয় পিতল, তামা ও দস্তামিশ্রিত সংকর ধাতু। ক্রেস্টের জালিয়াতি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনও সম্প্রতি তদন্ত শুরু করেছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশিদের সম্মাননা প্রদান-সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা আছে, প্রতিটি ক্রেস্টে এক ভরি (১৬ আনা) স্বর্ণ ও ৩০ ভরি রুপা থাকবে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে করা বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় দেখা গেছে, এক ভরির (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) জায়গায় ক্রেস্টে স্বর্ণ পাওয়া গেছে মাত্র ২ দশমিক ৩৬৩ গ্রাম (সোয়া তিন আনা)। এক ভরির মধ্যে প্রায় ১২ আনাই নেই। আর রুপার বদলে ৩০ ভরি বা ৩৫১ গ্রাম পিতল, তামা ও দস্তামিশ্রিত সংকর ধাতু পাওয়া গেছে।

ওই রিট আবেদনের প্রার্থনায় ওই ক্রেস্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে পরিশোধিত বিল ফিরিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে আদায় করা অর্থ থেকে নতুন করে ক্রেস্ট তৈরি করে বিদেশি বন্ধুদের বাংলাদেশ দূতাবাস বা হাইকমিশনের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ মর্মেও রুল চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ওই অনিয়ম তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়।

রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্রসচিব, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারকে বিবাদী করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে সরকার স্বাধীনতার চার দশক পূর্তি উপলক্ষে সাত পর্বে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু স্বনামধন্য ৩৩৮ বিদেশি ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনকে অন্যান্য উপহারসামগ্রীর সঙ্গে একটি করে ক্রেস্ট দেয়। তিন শ্রেণিতে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা ও মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা হিসেবে এসব ক্রেস্ট দেওয়া হয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *