বৃহস্পতিবার দেশে ফিরছেন সেই নাবিকরা

pirates_sm_917596221সোমালি‍য়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে গত সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশের সেই সাত নাবিক বৃহস্পতিবার দেশে ফিরছেন।

এদিন সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে-৫৮২ নং ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন তারা। বিমান বন্দরে তাদের গ্রহণ করবেন সরকারের কর্মকর্তারা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার ও অনুবিভাগের পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অবস্থানরত নাবিকদের ফ্লাইট সংক্রান্ত যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে হাইকমিশন।

দেশে ফিরতে অপেক্ষায় থাকা সাত বাংলাদেশি নাবিক হলেন-সাতক্ষীরার গোলাম মোস্তফা, হাবিবুর রহমান, আবুল কাশেম সরকার ও নুরুল হক, চাঁদপুরের লিমন সরকার এবং চট্টগ্রামের আমিনুল ইসলাম ও জাকির হোসাইন। তাদের সঙ্গে একই দলে একজন ভারতীয়, দু’জন শ্রীলংকান এবং একজন ইরানি নাবিকও ছিলেন। জলদস্যুদের কাছ থেকে তারাও মুক্তি পেয়েছেন।

জাতিসংঘের ‘পলিটিক্যাল অফিস ফর সোমালিয়া’র সহায়তা গত শুক্রবার মুক্তি পান তারা। এরপর শনিবার তাদের বিমানযোগে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে নিয়ে আসা হয়।

এখানে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও দেখাশোনার জন্য বেশ ক’দিন রেখে দেন নাইরোবির আগা খান হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মুক্তি পাওয়া সাত বাংলাদেশি নাবিকই সুস্থ্য আছেন। 

২০১০ সালের ২৬ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আলবেদো থেকে সাত বাংলাদেশি নাবিককে অপহরণ করা হয়। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (ইউএনওডিসি) সহায়তায় সাড়ে তিন বছর পর মুক্তি মেলে এই নাবিকদের।

মুক্তির পর জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (ইউএনওডিসি) একটি উড়োজাহাজযোগে এই সাত নাবিককে নাইরোবিতে নেওয়া হয়। সেখানে ইউএনওডিসি কর্তৃপক্ষ ও নাইরোবিতে বাংলাদেশি দূতাবাস কর্মকর্তারা তাদের গ্রহণ করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ভারত, পাকিস্তান ও ইরানের নাবিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের এই সাত নাবিক অপহরণের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের উদ্ধারে কাজ করে আসছে। এর আগে প্রাথমিকভাবে মেরিটাইম পাইরেসি ও মানবিক রেসপন্স কর্মসূচি (এমপিএইপআরপি) মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সাত বাংলাদেশি ক্রু জীবিত ছিল বলে নিশ্চিত করে। 

জানা যায়, জাহাজের মালিক মালয়েশিয়ান হওয়ায় প্রথমে তার কাছ থেকে মুক্তিপণের অর্থ আদায়ের জন্য কূটনৈতিক লবিং চালানো হয়েছে। কিন্তু জাহাজের দামের চেয়ে মুক্তিপণের অর্থ বেশি মনে করে মালিক পালিয়ে যান। নাবিকদের পরিবারের পক্ষ থেকে সোমালিয়ার মুসলমানদের কাছে মানবিক আবেদনও করা হয়। কিন্তু মুক্তিপণ ছাড়া জলদস্যুদের হাত থেকে কারো মুক্তি মেলেনা। বিকল্প উপায় না থাকায় তিন বছরের মাথায় মুক্তিপণের ব্যবস্থা করার উদ্যোগও নেয় সরকারের। জলদস্যুদের দাবি করা ৬ লাখ মার্কিন ডলার বা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ রাষ্ট্রের তিনটি তহবিল থেকে জোগান দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেয়। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর অনুমোদনও দিয়েছিলেন। তবে মুক্তিপণের টাকা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়াটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত না হওয়ায় ভিন্ন চ্যানেলে এর ব্যবস্থার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিকভাবে সহায়তা করে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক অফিস ইউএনওডিসি ও লন্ডনভিত্তিক মেরিটাইম পাইরেসি অ্যান্ড হিউমেনিটারিয়ান রেসপন্স প্রোগ্রাম (এমপিএইচআরপি)।সেই ধারাবাহিকতায় মুক্তি পান এই নাবিকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *