টিক টিক করে এক একটি মুহূর্তকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে ঘড়ির কাঁটা। সময় যত ঘনিয়ে আসছে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে উত্তেজনার মাত্রা। দিন ঘণ্টা মিনিট পেরিয়ে সেকেন্ডের কাঁটা থমকে যাবে আজ রাত ২টায় (ব্রাজিলের স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা)। ৬৪ বছর পর আবার ফুটবলের তীর্থ ভূমি ব্রাজিলে মাঠে গড়াবে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ বিশ্বকাপ ফুটবল। অবশ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠবে আরও ঘণ্টা দুয়েক আগেই। জেনিফার লোপেজের মোহনীয় নাচের তালে তালে সুরের মুর্ছনা_ থিম সঙ ‘উই আর ওয়ান’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বেশির ভাগ জুড়েই থাকবে ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী ‘সাম্বা’। তুলে ধরা হবে লাতিন অঞ্চলের ঐতিহ্যও। সাম্বার পর পরই শুরু হবে ‘জাগো বনিতো’ _সুন্দর ফুটবল। ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে আয়োজনের সুযোগ পেয়েও ব্রাজিলিয়ানরা যা দেখাতে পারেনি এবার সেই দায় মেটাতেই যেন জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিশ্বকে চমকে দিতে চায় পেলের দেশ! উদ্বোধনী ম্যাচেই নেইমারদের প্রতিপক্ষ লড়াকু ক্রোয়েশিয়া, ২০০৬ সালে জার্মান বিশ্বকাপে যারা ভড়তে দিয়েছিল ব্রাজিলকে। যদিও সেই ম্যাচে প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে কাকার জাদুকরি এক গোলে জিতে যায় ব্রাজিলিয়ানরা। কিন্তু পুরো ম্যাচেই একচ্ছত্র আধিপত্য দেখিয়েছিল ক্রোটরা। এবারের চিত্র অবশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাকা না থাকলেও ঘরের মাঠে নেইমারের ব্রাজিল মাঠে নামছে। সঙ্গে থাকছে থিয়াগো-মার্সেলো-আলভেজের সমন্বয়ে গড়া বিশ্বসেরা ডিফেন্স। যদিও লুকা মডরিচের ক্রোয়েশিয়াও গত আট বছরে অনেক বদলে গেছে। প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠেই তাদের বুকে ‘ছুরি’ বসাতে বদ্ধপরিকর ‘দ্য ব্লেজার্স’ খ্যাত ক্রোয়েশিয়া। তবে ফয়সালা হয়ে যাবে রাতেই। প্রথম ম্যাচকেই এবার আয়োজকরা ‘পাখির চোখ’ করে রেখেছেন! সাধারণ মানুষ এমনিতেই যা ক্ষ্যাপা, তাই যদি ব্রাজিল হেরে যায় হয়তো হাঙ্গামাই বেধে যাবে। লাখ লাখ পর্যটকের সম্মানে হয়তো বিক্ষোভকারীরা তাদের আন্দোলনে সাময়িক বিরতি এনেছে ঠিকই কিন্তু ব্রাজিল হেরে গেলে তাদের বিক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে নতুন করে। তাই পেলে থেকে প্রেসিডেন্ট দিলমা রোসেফ পর্যন্ত সবাই দুশ্চিন্তায়। সবার লক্ষ্য একটাই, প্রথম ম্যাচেই বড় জয়ের পাশাপাশি ‘জাগো বনিতো’ দেখিয়ে বিক্ষোভকারীদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া। আজ থেকে যে বিশ্বকাপের পর্দা উঠছে তা চলবে ১৩ জুলাই ফাইনাল পর্যন্ত। ফুটবলের রথী-মহারথীরা তাদের কারিকুরি প্রদর্শন করবেন। এবার কে চ্যাম্পিয়ন হবে, তা আন্দাজ করা কঠিন। তবে সেরা তারকার লড়াইয়ে দৃষ্টি থাকবে কয়েক জনের ওপরই। নেইমার যেমন ব্রাজিলের বড় বিজ্ঞাপন তেমনি আর্জেন্টিনার তুরুপের তাস লিওনেল মেসি-ডি মারিয়া। মেসি-মারিয়া জুটি জমে উঠলে আর্জেন্টিনাকে থামানো কঠিন। আর নেইমার জ্বলে উঠলে ব্রাজিলের হেঙ্া শিরোপা যে নিশ্চিত, তা গত বছর কনফেডারেশন্স কাপেই দেখেছে বিশ্ব। ফাইনালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনকে তারা নাস্তানাবুদ করে জিতেছিল ৩-০ গোলে। তবে গত এক বছরে অনেক কিছুই বদলে গেছে। আরিয়ান রোবেন একাই নেদারল্যান্ডসকে চ্যাম্পিয়ন করার সামর্থ্য রাখেন। তবে জাভি-ইনিয়েস্তার টিকিটাকা ভেলকিতে এবারো বিশ্বজয় করতে পারে স্পেন। শক্তির জয় হলে ট্রফি উঠবে জার্মানদের হাতেই। তবে এবারের বিশ্বকাপের সৌন্দর্য বাড়াতে পারে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বিদ্যুৎ গতির নিখুঁত পাসিং ফুটবল কিংবা সুয়ারেজের ভেলকি অথবা ওয়েইন রুনির পরিশ্রমী ফুটবল। আফ্রিকান ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন হয়ে উঠতে পারেন আইভরি কোস্টের দিদিয়ের দ্রগবা। ইতালির মারিও বালোতেলি্লও দেখাতে পারেন ক্যারিশমা। সব মিলে এবারের বিশ্বকাপ ছাড়িয়ে যেতে পারে আগের সব আসরকেই। তবে ‘জাগো বনিতো’র দেশে বিশ্বকাপে ফুটবল সৌন্দের্যের জয় হবে নাকি শক্তির, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ব্রাজিলিয়ানরা সৌন্দর্যের পূজারি হলেও শক্তিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন কোচ লুই ফেলিপ স্কলারি। উদ্বোধনী ম্যাচে ব্রাজিলের ফর্মেশনও আক্রমণাত্দক ৪-২-৩-১। তবে ফর্মেশন যাই হোক না কেন, আয়োজক ব্রাজিলের প্রত্যাশা হাজারো প্রতিবন্ধকতার মাঝেও বিশ্বকাপের সফল আয়োজন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়া। সুন্দর ফুটবল উপহার দিয়ে বিশ্বকে চমকে দিতে চায় পেলের দেশ।