বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি সই হচ্ছে মঙ্গলবার। দুই হাজার ১৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণ করবে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর হোটেল রূপসী বাংলার উইন্টার গার্ডেনে এ চুক্তি সই হবে।চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
জানা গেছে, চুক্তিতে কোন কাজে কত টাকা লাগবে, কে কীভাবে কাজ করবে, স্থায়িত্ব কত দিন হবে ইত্যাদি নানা বিষয় উল্লেখ থাকবে।
পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, বাছাই কমিটির সবুজ সংকেত পাওয়ার পর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে চীনা প্রতিষ্ঠানটির দরপ্রস্তাব অনুমোদন করে। চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর পুরোদমে মূল সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
ইতিমধ্যে কোম্পানিটি সেতু নির্মাণের যাবতীয় যন্ত্রপাতিও এনেছে। ছয় কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ এ সেতুর নির্মাণ কাজ আগামী চার বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন যোগাযোগমন্ত্রী।
এদিকে ১৯ জুনের মধ্যে নদীশাসন কাজের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে আর্থিক প্রস্তাব পাওয়া যাবে বলে আশা করছে সেতু কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে জুলাই মাসের শেষ দিকে নদীশাসনের কার্যাদেশ দেয়া হবে। অন্যদিকে পদ্মা সেতু নির্মাণে কারিগরি সহায়তা দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পর্যন্ত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর স্থায়িত্বকাল ধরা হয়েছে ৯৯ বছর। সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণে মোট ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে শুধু মূল সেতুর জন্য চায়না মেজর ব্রিজ ব্যয় ধরেছে ৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি অর্থ লাগবে সুপারস্ট্রাকচার (উপরিভাগ) নির্মাণে। এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৪০২ কোটি টাকা। আর সাবস্ট্রাকচার (পাইল, পিয়ার ইত্যাদি) নির্মাণে তিন হাজার ৪৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। মাওয়া অংশে সড়কের সঙ্গে সেতুর সংযোগস্থলের সাবস্ট্রাকচার নির্মাণে ১৫৫ কোটি টাকা ও সুপারস্ট্রাকচার নির্মাণে ৮২ কোটি টাকা এবং জাজিরা প্রান্তে সড়কের সঙ্গে সেতুর সংযোগস্থলের সাবস্ট্রাকচার নির্মাণে ১৭৮ কোটি টাকা ও সুপারস্ট্রাকচার নির্মাণে ৯২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রাথমিক ও সাধারণ অন্যান্য কাজে দুই হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা, টেলিফোন, বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ ব্যবস্থা স্থাপনে ২৭৯ কোটি, মাটি পরীক্ষায় ৭৯ কোটি, সাইট ক্লিয়ারেন্স, মাটি খনন ও ভরাটে চার কোটি টাকা। আর মাওয়া প্রান্তে রেলওয়ের সংযোগস্থলে সাবস্ট্রাকচার ও সুপারস্ট্রাকচার নির্মাণে ২৫ কোটি টাকা এবং জাজিরা প্রান্তে রেলওয়ের সংযোগস্থলে সাবস্ট্রাকচার ও সুপারস্ট্রাকচার নির্মাণে ২৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রস্তাবিত দরের ১০ শতাংশ (এক হাজার ২১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা) পারফরম্যান্স গ্যারান্টি দিচ্ছে চায়না মেজর ব্রিজ। নির্মাণকালীন সময়ের জন্য এ গ্যারান্টি দেবে প্রতিষ্ঠানটি।