রাজধানীতে বিভিন্ন ঘটনায় গত ২৪ দিনে ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গত ২৭ মে থেকে ১৯ জুনের মধ্যে এসব ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। এদের মধ্যে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী এবং গাড়ি চালকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন। এসব ঘটনায় মামলা হলেও আসামিরা থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অনেকে ভয়ে মামলাও করেননি। হঠাৎ রাজধানীতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হওয়া নগরবাসী আতঙ্কিত। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে প্রতিটি ঘটনাকেই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
১৯ জুন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এনামুল হক শামীম বৃহস্পতিবার সকালে ধানমন্ডিতে গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দুটি হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা দিয়ে পরবর্তীতে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছে। কে বা কারা তাকে গুলি করেছে তা তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। এই ঘটনায় কেউ আটকও নেই।
ধানমন্ডি থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক এ বিষয় জানান, গুলিবিদ্ধ এনামুল ধানমন্ডির ১০/এ এর ৪৬নং বাড়িতে বসবাস করতেন। সকালে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে ৯/এ পৌছালে কে বা কারা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। জড়িতদের খুঁজে বের করতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
১৯ জুন আওয়ামী লীগ নেতার গুলিবিদ্ধ হওয়ার দিনে রাজধানীর রামপুরায় ইরান মুন্সি (২৫) নামে এক বিকাশ এজেন্টকে গুলি করে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে ছিনতাইকারীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় রামপুরা থানাধীন উলন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেছেন স্থানীয় ছানাউল্লাহ নামের এক ব্যক্তি।
১৮ জুন রাজধানীর মিরপুরে এক ট্রাভেল এজেন্সি অফিসের কর্মচারি গুলিবিদ্ধ হয়। তার নাম শিবলু (৩৫)। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিরপুর-১১ এর সি ব্লকে পেছন দিক থেকে তাকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। তাকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি করা হয়। এখনো তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আহত শিবলুর ছোট ভাই ওবায়দুল হক হ্যাপি শীর্ষ নিউজকে জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে শিবলু বাসায় ফেরার পথে পেছন থেকে কে বা কারা গুলি করে। কি কারণে বা কারা এ গুলি করেছে সে সম্পর্কে কিছুই জানাতে পারেননি তিনি।
১৭ জুন গত মঙ্গলবার রাজধানীর মুগদায় মো. রুবেল হক নামের এক ট্রাভেল এজেন্সি কর্মীকে গুলি করে ছয় লাখ টাকা ছিনতাই করেছে দুর্বৃত্তরা। রুবেল পুরান ঢাকার নারিন্দা এলাকার ৪১/এ নম্বর শরৎ গুপ্ত রোডের বাসিন্দা। তার বাবার নাম শামসুল হক। এ সময় এক রিকসা চালকও গুলিবিদ্ধ হয়। তার নাম দেলোয়ার।
ওই দিন মুগদা থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাজ্জাদ হোসেন শীর্ষ নিউজকে জানান, রুবেল হক রিকসাযোগে কোথাও যাচ্ছিলেন। মুগদা বাসস্টান্ডের পশ্চিম পাশে আসলে তার রিকসার সামনে একটি মোটরসাইকেল থেকে তাকে গতিরোধ করে তার হাতে থাকা ব্যাগটি নিতে চায় মোটরসাইকেল আরোহীরা। ব্যাগটি দিতে না চাইলে দুর্বৃত্তরা রুবেলের দুই পায়ে ও কোমরে তিন রাউন্ড গুলি করে। প্রাথমিকভাবে তাকে খিলগাঁও খিদমাহ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে কিন্তু কেউ আটক বা গ্রেফতার নেই।
১৭ জুন অপর এক ঘটনায় শ্যামপুর থানাধীন ধোলাইখাল এলাকায় জাকির হোসেন (২৮) নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে ছিনতাইকারীরা। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ধোলাইখালের ফ্যাক্টরি গলিতে জেএফসি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ জাকির হোসেন ওই দোকানেরই মালিক। রাতে দোকান বন্ধ করার সময় একটি সাদা প্রাইভেটকার থেকে কয়েকজন যুবক নেমে দোকানে ঢুকে জাকিরকে ক্যাশবাক্সে থাকা সব টাকা তাদের দিয়ে দিতে বলে। পরে তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা এলোপাতাড়ি গুলি করে এবং ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করে। এলোপাতাড়ি গুলিতে জাকিরের ডান হাত মারাত্মক জখম হয়।
১০ জুন রাজধানীর রমনা থানাধীন পিয়াসী গলি এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান লিমন (৪৫) নামে এক সিএনজি ফিলিং স্টেশন মালিককে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এর ঠিক এক বছর আগেও একবার তাকে গুলি করেছিল সন্ত্রাসীরা। তিনি প্রথমবার মামলা দায়ের করলেও দ্বিতীয়বার আর মামলা করার সাহস পায়নি। তার অভিযোগ মামলা করে কোন লাভ হবে না। সন্ত্রাসীরা উল্টো মামলা করলে আরো ক্ষেপে যায়।
৮ জুন রাজধানীর পূর্ব রামপুরায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে সাকা চৌধুরী (২৬) নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়। তিনি কনস্ট্রাকশনের কাজ করেন বলে জানা গেছে। গুলিবিদ্ধ সাকা পূর্ব রামপুরার ২০৮/৩ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকেন। তার বাবার নাম মো. ফিরোজ। ওই দিন বিকেল ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সাকার পরিবার ঘটনার পর শীর্ষ নিউজকে জানিয়েছিলেন, সাকা কাজ শেষে ওই এলাকার পানির পাম্পের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত এসে হঠাৎ গুলি করে পালিয়ে যায়। তবে কি কারণে তারা গুলি চালিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তারা জানাতে পারেনি।
ঘটনার পর মনির হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়।
৮ জুন রোববার দুপুর ২টার দিকে রাজধানীতে নন্দিপাড়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে মনির হোসেন (৪০) নামে এক ট্রাক চালক আহত হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মনিরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে কি কারণে মনিরকে গুলি করেছে তা এখনো জানা যায়নি।
৭ জুন রাজধানীর রায়েরবাজারে ছিনতাইকারীর গুলিতে রাসেল (১৯) নামে এক ব্যক্তি আহত হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ২১ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারি দল। ওইদিন রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরের দিন ৮জুন সে চিকিৎসাধিন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপালে মারা যায়। রাসেল ওই এলাকায় একটি মোবাইল রিচার্জের দোকানে কাজ করেন। তার বাবার নাম আবু সাঈদ।
৫জুন রাজধানীর রামপুরায় গুলি করে কাজী রমজান (৩৬) নামে এক বিকাশকর্মীর চার লাখ টাকা নেয় ছিনতাইকারীরা। ওইদিন বৃহস্পতিবার ছিল। দুপুর সোয়া ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রমজান ৩৮৪/এ, খিলগাঁও চৌরাস্তা এলাকায় থাকেন।
জানা গেছে, রমজান রামপুরা থেকে বিকাশের টাকা তুলে খিলগাঁও তালতলার ঝিলপাড় এলাকার অফিসে যাচ্ছিলেন। টিভি সেন্টারের সামনে পৌঁছলে কয়েকজন ছিনতাইকারী তার পথরোধ করে। এ সময় টাকা ছিনতাইকালে তাদের বাধা দিলে তারা রমজানের ডান পায়ে গুলি করে টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়।
২৯ মে বৃহস্পতিবার ২৯ মে সকাল ১১টায় রাজধানীর আরামবাগে সন্ত্রাসীদের গুলিতে সুলতান (৩৫) নামের এক ঠিকাদার নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হবার পর পরই সুলতানকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
২৮ মে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা এবং রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল সংলগ্ন দৈনিক বাংলা মোড়ে কুদ্দুস (৩২) নামের এক ফল ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী আব্বাস শীর্ষ নিউজকে বলেন, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে দৈনিক বাংলা মোড়ে একটি ইসলামিক দলের মিছিল বের হয়। এ সময় কয়েকটি গুলির শব্দ হয়। এতে কুদ্দুস গুলিবিদ্ধ হন। দৈনিক বাংলা মোড়ের পেট্রোল পাম্পের গলির মুখেই কুদ্দুসের ফলের দোকান।
তিনি আরো জানিয়েছিলেন, ২৮/বি, টয়েনবি সার্কুলার রোডে কুদ্দুসের বাসা।
২৭ মে রাজধানীর মিরপুরে ডিস ব্যবসাকে কেন্দ্র করে হযরত আলী ভুট্টু (৪২) ও মাইনুদ্দিন (৪০) নামের দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় গুলি ছোড়ার দায়ে কামরুল নামের আরেক ডিস ব্যবসায়ীকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা। মিরপুরের দক্ষিণ মণিপুর এলাকায় বৈশাখী ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
মাইনুদ্দিনের ছোট ভাই রইস উদ্দিন জানান, মিরপুরে মনিপুর একটি চায়ের দোকানের সামনে দুই ব্যক্তি মোটরসাইকেলযোগে হেলমেট পরিহিত অবস্থায় এসে তাদের গুলি করে। ভুট্টু সেখানে চা খাচ্ছিলেন ও মাইনুদ্দিন সেখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। মাইনুদ্দিনের পেটে এবং ভুট্টুর গলায় ও ডান কাঁধে গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিরপুর মডেল থানার এসআই ইমানুর হোসেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিট পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান শীর্ষ নিউজকে জানান, প্রতিটি ঘটনাই পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। বেশকিছু ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে পুলিশ আইনের আওতায় এনেছে। যারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা কেউ ছাড় পাবে না।