কেমন আছে সেই ঐশী রহমান? বাবা-মাকে নির্মমভাবে হত্যা করার অভিযোগ যার বিরুদ্ধে। যে ছিল মাদকাসক্ত। ডিজে পার্টি আর ইয়াবাসহ হরেক নেশাদ্রব্য ছিল যার নিত্যসঙ্গী। সেই ঐশী, ক্রমাগত নেশা যাকে মানসিক ভারসাম্যহীন করে তুলেছিল। কেমন আছে সে ঐশী? কেমন কাটছে ইংলিশ মিডিয়াম পড়ুয়া ঐশীর জেলজীবন? বাবা-মাকে হত্যাকারী ঐশী কি অনুতপ্ত তার কৃতকর্মের জন্য? স্বজনরা কি দূরে ঠেলে দিয়েছে তাকে? যে বন্ধুরা ছিল তার অন্তঃপ্রাণ তারা কি খোঁজখবর রাখে?
১০ মাসের জেলজীবন বদলে দিয়েছে ঐশীকে। এক সময়ের উশৃঙ্খল জীবনযাপনকারী ঐশী এখন শান্ত-সুস্থির। পিতা-মাতার হত্যাকারী, বেপরোয়া জীবনের ঐশী এখন বন্দী, কাশিমপুর মহিলা কারাগারে। জেল কর্তৃপক্ষের স্নেহ-মমতায় এখন অনেকটাই স্থির সে। নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। অন্য সব বন্দীর সঙ্গে তার সম্পর্কও স্বাভাবিক।
ঐশী যে ওয়ার্ডে থাকেন সেখানে তিনি সর্বকনিষ্ঠ হওয়ায় সবার আদর-স্নেহও তার প্রতি বেশি। নিয়মিত পড়াশোনাও করছে। ইচ্ছা আছে ও লেভেল সম্পূর্ণ করবে। তবে সার্বক্ষণিক চিন্তা একমাত্র ছোট ভাইটিকে নিয়ে। প্রায় একবছর ধরে ভাইটির সঙ্গে তার দেখা হয়নি। জেল জীবনে নিকট কিংবা দূরবর্তী কেউ তার খোঁজ নেয় না। একমাত্র ব্যতিক্রম এক চাচা। একমাত্র তিনিই খোঁজখবর নিচ্ছেন। নিয়মিত কাশিমপুর মহিলা কারাগারে যান। তবে নানা-মামাদের কেউ খোঁজ নিতে কখনো জেলখানায় যাননি। একমাত্র চাচাই জেলে এসে তার জন্য জামা-কাপড়, খাবার ও পিসির (প্রিজনারস ক্যান্টিন) জন্য টাকা দিয়ে যান। দীর্ঘদিন চাচাকে না দেখলে অস্থির হয়ে পড়ে ঐশী। জেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন চাচাকে আসার জন্য। চাচার কাছে খোঁজ নেন আদরের ছোট ভাইটির। আর নিজের জামিনের বিষয়ে।
জানা যায়, ঐশীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তার ছোট ভাইকে কিছু জানানো হয়নি। সে এখন তার চাচার কাছে থাকে। যেসব বন্ধুদের সঙ্গে তার ছিল ‘আত্মার’ সম্পর্ক, যারা ছিল তার আপনজনদের চেয়েও বেশি তাদের কেউ তার খোঁজ নেয়নি।
কাশিমপুর মহিলা কারাগারের জেলার উম্মে সালমা বাংলামেইলকে জানান, ঐশী এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। ঐশী তার বিগত জীবনের জন্য অনুতপ্ত কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে জেলার বলেন, ‘আমরা কখনো কোনো হাজতিকে তার অতীত মনে করিয়ে দেই না। আমরা চাই এখানে (জেল) থেকে সবাই সংশোধিত হোক। অতীতে কে কী করেছে আমাদের কাছে তা মুখ্য নয়। মুখ্য তার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবন। আমরা সেভাবেই বন্দীদের দিক নির্দেশনা দেই। ঐশীকেও তাই দেয়া হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ঐশীকে নিয়মিত নামাজ আদায়ের জন্য বলি। সেও আমাদের কথা শোনে। তার বয়স বিবেচনায় তাকে ভালো ওয়ার্ডেই রাখা হয়েছে। জেলে যাদের ব্যবহার ও আচরণ ভালো তাদের সাথেই তাকে রাখা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তার চাহিদা অনুযায়ী জেল থেকে তার জন্য বই কিনে দেয়া হয়েছে। সে নিয়মিত পড়াশোনা করছে। তার ইচ্ছা ও লেভেল পরীক্ষা দিবে। এ বিষয়ে আমারা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি।’
দীর্ঘদিন মাদক সেবনের কোনো প্রভার তার ওপর পড়ছে কি না? এমন প্রশ্নে জেলার বলেন, ‘শুনেছি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকার সময় সে খুব অস্থির ছিল। ঘুমাতো না। রাতের পর রাত জেগে থাকতো। কিন্তু এখন সে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। নিয়মিত ঘুমায় সে।’
এদিকে কাশিমপুর মহিলা কারাগার থেকে সদ্য জামিনে মুক্তি পাওয়া কাওরান বাজারের এক মাদক মামলার আসামি সালমা (ছদ্দ নাম) জানান, তিনি ঐশীর সঙ্গে কারাগারে থাকাকালীন প্রায়ই কথা বলতেন। বাবা-মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাইতো না সে। কেন সে তার জন্মদাতা বাবা-মাকে এভাবে হত্যা করে- এমন প্রশ্ন করলে বিষণ্ণ হয়ে যেত তার মুখ। তাই কখনো তিনি তাকে আর এই প্রশ্নটি করেননি। তবে তার ব্যবহার খুবই ভালো এবং বেশ মিশুক। ঐশীর স্বাস্থ্যও আগের তুলনায় ভালো হয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছর ১৪ আগস্ট রাজধানীর ২ নম্বর চামেলীবাগের চামেলী ম্যানশনের ৬ তলার ৫/বি ফ্ল্যাটে বাবা পুলিশ পরিদর্শক (বিশেষ শাখা- এসবি) মাহফুজুর রহমান ও মা স্বপ্না রহমানকে কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে খুন করে পালিয়ে যায় মেয়ে ঐশী রহমান। দু’দিন পর ১৭ আগস্ট পুলিশের কাছে সে আত্মসমর্পণ করে। ২৪ আগস্ট খুনের দায় স্বীকার করে আদালতের কাছে জবানবন্দী দেয় ঐশী।
এরপর প্রথমে তাকে গাজীপুরের কোনাবাড়ির কিশোরী উন্নয়র কেন্দ্রে (সংশোধন) পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং তারপর কাশিমপুর মহিলা কারাগারে নেয়া হয়।