বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান যাচাইয়ে বিধি হচ্ছে

Private University_bangladesh_SwadeshNews24দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান যাচাইয়ে চূড়ান্ত বিধিমালা করতে যাচ্ছে সরকার। শিক্ষার মান, পাঠক্রম ও গবেষণা পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের বিষয়টি যাচাই ও স্বীকৃতি দেয়ার জন্য এই বিধিমালা করা হবে।

একটি কাউন্সিলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রোগ্রাম (পাঠ্য বিষয়) যাচাই ও রেটিং নির্ধারণ করা হবে। এর ফলে কোন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অপেক্ষাকৃত ভালো শিক্ষা প্রদান করছে কিংবা কোন্ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন্ বিষয় ভালো পড়ানো হয় তা মূল্যায়ন করা যাবে।

জানা গেছে, ‘এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল ফর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিস অব বাংলাদেশ’ (এসিপিইউবি) নামে প্রস্তাবিত সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার জন্য বিধিমালা চূড়ান্ত করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবিত এসিপিইউবি একটি স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। এ জন্য বেশ কয়েকবার আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত নিয়ে ইতিমধ্যে একটি খসড়া বিধিমালা তৈরি করেছে। সংস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে শিগগিরই সংশ্লিষ্টরা বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনের জন্য বিধিমালাটি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীদের পরামর্শ নেয়া হয়েছে। এটি চূড়ান্ত করতে আরো এক-দুইটি বৈঠক করা প্রয়োজন।

উচ্চশিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণের জন্য এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনের ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষানীতিতে নির্দেশনা রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনেও এ কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাবনা রয়েছে। ইউজিসিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিও অনেক দিন ধরে এটি গঠনের কথা বলে আসছেন। বেশ কিছুটা সময় লাগলেও শিগগিরই এটি গঠন করা হবে।

যে কারণে কাউন্সিল: ইউজিসি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বিষয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন উঠেছে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ভর্তি বাণিজ্য, সনদ বিক্রির বা সনদসর্বস্ব শিক্ষার অভিযোগ আছে।

আবার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকপক্ষের বা ট্রাস্টিদের মধ্যে বিরোধের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দুর্বৃত্তায়ন ঘটছে। শিক্ষাদান পদ্ধতি ও মানে যথার্থতা ও অগ্রগতি নেই। আবার বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার নীতিও লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিভিন্ন সময় মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির তদন্তে এ বিষয়গুলো উঠে আসার পর থেকেই একটি এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করে আসছিলেন সংশ্লিষ্টরা।

২০০৩ সালে সরকারের এ কাউন্সিল গঠনের প্রচেষ্টা প্রথম দৃশ্যমান হয়। এরপর বেশ কয়েকবার এটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও সফল হননি সংশ্লিষ্টরা। এ প্রক্রিয়ায় কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকপক্ষ বাধা হয়ে দাঁড়ান। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদের অফিস থেকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

তখন বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণীত হচ্ছে। এরপরে এ কাউন্সিল গঠন করা হবে। এরপর ২০১০ সালের জুলাই মাসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণীত হলেও এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের বিধিমালা চূড়ান্ত হয়নি। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-সমূহের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন করেছি। শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে অচিরেই এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) কাজী সালাউদ্দিন আকবর বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের এ সংক্রান্ত এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল বিধিমালা যাচাই-বাছাই ও পর্যবেক্ষণ করেই এসিপিইউবির খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীরা দুই পক্ষই উপকৃত হবে। মানসম্মত উচ্চশিক্ষার পথও অনেকটা প্রশস্ত হবে।

মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র জানায়, কাউন্সিলটি গঠনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে উচ্চশিক্ষা গ্রহণেচ্ছুদের শিক্ষা ব্যবসায়ীদের কবল থেকে রক্ষা করা। কেননা পকেটের অর্থ খরচ করে উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়ে ভুয়া ও মানহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের কবলে পড়ে অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। মানহীন ডিগ্রির কারণে অনেকে চাকরির বাজারেও উপেক্ষিত হচ্ছেন। শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশৃংখলার সুযোগে দুর্বৃত্তায়ন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। আবার শৃঙ্খলা না থাকার কারণে অনেকের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন ও উদ্দেশ্যও বদলে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী জানান, দেশের উচ্চশিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় রেটিং চালু করা জরুরি। এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠিত হলে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসম্মত শিক্ষাদানে কোন স্থানে কিংবা কার কোন ডিগ্রি কতটা মানসম্পন্ন তা নিয়মিত প্রকাশ করা যাবে। এর ফলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আর প্রতারিত হতে হবে না।

যেভাবে গঠিত হবে এসিপিইউবি: সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল ফর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিস অব বাংলাদেশ- এসিপিইউবি’র কাউন্সিলের একটি নির্বাহী ও একটি সাধারণ পরিষদ থাকবে। একজন চেয়ারম্যান ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্বকারী বিশ জন সদস্য নিয়ে কাউন্সিলের নির্বাহী পরিষদ গঠিত হবে। মন্ত্রণালয়, ইউজিসির সদস্য, বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যরা এতে অন্তর্ভুক্ত হবেন। অধ্যাপনায় পনের বছর ও প্রশাসনিক কাজে পঁচিশ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজনকে রাষ্ট্রপতি তিন বছর মেয়াদের জন্য চেয়ারম্যান নিযুক্ত করবেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও তাদের প্রোগ্রামের এরা যে মূল্যায়ন করবেন তা জনগণের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হবে। প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এসিপিইউবি’র সাধারণ পরিষদের সদস্য হবে। প্রবিধানটি কার্যকর হওয়ার তিন মাসের মধ্যে নির্ধারিত ফি দিয়ে বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়কে আর নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে সদস্যপদ গ্রহণ করতে হবে। কাউন্সিল পাঁচটি ক্যাটাগরিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান বা রেটিং নির্ধারণ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *