পার্বতীপুর (দিনাজপুর): দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল দিনাজুপরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলন গত দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ পুনরায় উত্তোলন শুরু হবে বলতে পারছে না খনি কর্তৃপক্ষ।
খনির ভূ-গর্ভে উৎপাদনশীল ১২০৫ নম্বর কোল ফেজটিতে পানির প্রবাহ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত ১০ মে থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।
পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে না এলে ওই ফেজটির কিছু অংশ বা পুরোটাই পরিত্যক্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে ২০০৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর লংওয়াল মাল্টি স্লাইস পদ্ধতিতে কোল ফেজের একদিকে ৩ মিটার পুরু কয়লার স্তর কেটে উৎপাদন শুরু করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন সম্ভব হতো।
পরবর্তীতে ২০১৩ সালের মে মাস থেকে সর্বাধুনিক আন্ডারগ্রাউন্ড টপ কোল কেভিং পদ্ধতিতে কোল ফেজের উপর-নিচ উভয় দিকে একই সঙ্গে (৩+৩) ৬ মিটার পুরু কয়লার স্তর কেটে সর্বোচ্চ মাত্রায় কয়লা উত্তোলন শুরু করা হয়। এর ফলে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে।
খনি সূত্র জানায়, আন্ডারগ্রাউন্ড টপ কোল কেভিং পদ্ধতিতে কোল ফেজের উপরের দিকের কয়লা বেশি কাটা পড়ে। খনির ভূ-গর্ভে কয়লা স্তরের উপরের অংশে কিছু কিছু জায়গায় বড় বড় পানির পকেট রয়েছে। নতুন ১২০৫ নম্বর কোল ফেজ থেকে পরীক্ষমূলকভাবে কয়লা উত্তোলন শুরু করা হয় গত এপ্রিল মাসের শেষে।
পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরুর ১০-১১ দিন পর ১০ মে কয়লা কাটার সময় কোল ফেজের উপরের পানির পকেট ভেঙে পড়ে। এতে পানির প্রবাহ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় কয়লা উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে গত দেড় মাস উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ১২০৫ নম্বর ফেজটিতে উত্তোলনযোগ্য কয়লার পরিমাণ ৪-৫ লাখ মেট্রিক টন। অস্বাভাবিক পানি প্রবাহের ফলে ফেজটির কিছু অংশ বা পুরোটাই পরিত্যক্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খনির একাধিক শ্রমিক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি খনির জেনারেল ম্যানেজার (মাইনিং) প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদ।
প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার দুপুরে , প্রথমদিকে খনি ভূ-গর্ভে স্থাপিত পাম্পের মাধ্যমে পানি সরিয়ে ফেলে কয়লা উৎপাদন শুরুর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় পরবর্তীতে খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ (এমঅ্যান্ডপি) ঠিকাদার সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের এক্সপার্টরা চীন থেকে এসে ওই ফেজটি পরিদর্শন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাবতীয় তথ্য উপাত্ত নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কী প্রক্রিয়ায় পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রেখে কয়লা উত্তোলন করবে তা এখন পর্যন্ত জানায়নি। সেজন্য কবে থেকে পুনরায় উৎপাদন শুরু হবে তা বলা যাচ্ছে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে খনির কোল ইয়ার্ডে দুই লক্ষাধিক মেট্রিক টন কয়লা মজুদ রয়েছে। এই কয়লা দিয়ে বড়পুকুরিয়া ২৫০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রায় ৪ মাস চালানো যাবে।