শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা ভাগাভাগি করে নেওয়ার দায়ে রাজশাহীর পবায় একটি দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়কসহ তিন শিক্ষক-কর্মচারীকে দুই থেকে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে নিজেদের দোষ স্বীকার করায় তাঁদের এই দণ্ড দেওয়া হয়।
এই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘দারুল ইসলাম দাখিল মাদ্রাসা’। দণ্ড পাওয়া তিনজন হলেন, ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মতিন, সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম-১ (একই নামে এই প্রতিষ্ঠানে আরেকজন সহকারী শিক্ষক আছেন) ও কেরানি ইসমাইল হোসেন। আদালতে তত্ত্বাবধায়ক ও কেরানির ছয় মাস ও সহকারী শিক্ষকের দুই মাস করে বিনা শ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ছিলেন পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ্জাকুল ইসলাম। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা শিক্ষকেরা ভাগাভাগি করছেন—এমন খবর পেয়ে আজ বুধবার দুপুরে ইউএনও রাজ্জাকুল ইসলাম রাজশাহী নগরের মতিহার থানার পুলিশ নিয়ে দারুল ইসলাম দাখিল মাদ্রাসায় যান। তাঁর কাছে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, আগের দিন মঙ্গলবার মাদ্রাসার ২৮ জন শিক্ষার্থীর নামে উপবৃত্তির টাকা ওঠানো হয়েছে। দশম শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নামে এক হাজার ২০ টাকা করে ওঠানো হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে শুধু ২০ টাকা দেওয়া হয়েছে। অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ১০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, আজ বুধবার তাদের টাকা থেকে শিক্ষকদের নাশতার ভাগ কেটে রেখে একজনের টাকার একাংশ আরেকজনকে দেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, দশম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী ছয় মাসে এক হাজার ২০ টাকার উপবৃত্তি পায়। তাদের এর আগে দুইজন শিক্ষার্থীর টাকা ভাগ করে একজনকে ৩৬০ এবং অপরজনকে ৩৪০ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকার খবর শিক্ষার্থীরা জানে না। কেউ কেউ বলেছে, বাকি টাকা শিক্ষকেরা নাশতার জন্য কেটে রেখেছেন।
নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষার ফলাফল ও উপস্থিতি হার অনুসারে মাদ্রাসার ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হয়। প্রতি ছয় মাসের টাকা তাদের একসঙ্গে দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষকেরা মেধা ও উপস্থিতির হার বিবেচনা না করে কম মেধা ও উপস্থিতি রয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যেও টাকা ভাগাভাগি করছেন। শিক্ষকেরা স্বীকার করেছেন, ২০০০ সাল থেকে তাঁদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকা পায়। আর তারা ২০১০ সাল থেকে টাকা ভাগাভাগি করেন। নাশতার জন্য টাকা কেটে রাখার কথাও তারা স্বীকার করেন।
ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মতিন বলেন, একজনের টাকা দুই-তিনজনের মধ্যে ভাগাভাগি করে দিতে হয়, যাতে সবাই সন্তুষ্ট থাকে। তা না হলে অভিভাবকেরা তেড়ে আসেন। তিনি নিজের থেকে স্বীকার করেন, নাশতার জন্য তিনি প্রত্যেক শিক্ষার্থীর টাকা থেকে ২০ টাকা করে কেটে রাখতেন।