প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “এখন পদ্মা সেতু আর স্বপ্ন নয়; বাস্তবায়ন শুধু সময়ের ব্যাপার। আমরা আশা করি ইনশাআল্লাহ ২০১৮ সালে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হবে।”
বুধবার দশম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় (বাজেট) অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত মহিলা আসনের ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধামমন্ত্রী বলেন, “পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সকল প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষে নিজস্ব অর্থায়নে তা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় দুই হাজার ৪০৩ দশমিক ২৪ একর জমি অধিগ্রহণ কর সেতু বিভাগে ন্যস্ত করা হয়েছে। নদীর উভয় পাড়ে সেতু সংযোগকারী সড়ক এক হাজার ২৯০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণের জন্য যথাক্রমে আট অক্টোবর ২০১৩ এবং ২৭ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের পুর্নর্বাসনের কাজ চলমান আছে। মূল সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে এ মাসেই ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা ব্যায়ে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন হয়েছে।”
এ সময় ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তিনি তুলে ধরেন।
মো. ইসরাফিল আলমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমান বিশ্বে প্রতিবন্ধী শব্দটি পরিবর্তন হয়ে এখন তাদেরকে ‘বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন মানুষ’। সরকার এ ধরনের বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা নির্ধারণ, দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান প্রতিবন্ধকতা সনাক্তকরণ, নিবন্ধন এবং পরিচয়পত্র প্রদান, ছবিসহ ডাটাবেজ প্রস্তুত এবং লক্ষ্যভুক্তির কৌশল সহজ করতে ২০১২-১৩ অর্থবছর হতে দেশব্যাপী বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তির শনাক্তকরণ জরিপ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত ১৬ লাখ ৯৬ হাজার ৫৫৯ জন বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তির জরিপকৃত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কার্যক্রম চলমান আছে। এ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা যাবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “প্রতিবন্ধী ভাতা কার্যক্রম ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রমের আওতায় বিগত ছয় বছরে মাসিক ভাতার পরিমাণ ও সুফলভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে বর্তমানে তিন লাখ ১৪ হাজার ৬০০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ৩৫০ টাকা এবং ২০ হাজার ৪৮২ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক স্তরে ৩০০টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৪৫০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ টাকা এবং উচ্চতর স্তরে এক হাজার টাকা শিক্ষা উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব উদ্যোগের ধারাবাহিকতাক্রমে ‘প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা-২০০৯’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নীতিমালার আওতায় ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের ৫৫টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের শত ভাগ বেতন ভাতা সরকারিভাবে পরিশোধ করা হচ্ছে।”
ভেজাল খাদ্য ও পণ্য থেকে জনগণকে রক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও সংসদকে জানান প্রধানমন্ত্রী
এনামুল হকের এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খাদ্য পণ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সরকারের নেয়া কার্যক্রমে ভোক্তারা সুফল পেতে শুরু কররেছেন। ভবিষ্যতে খাদ্য পণ্যে ভেজাল মিশ্যনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইতিমধ্যে ভেজাল পণ্য ও ওষুধ বিক্রির অপরাধে আট হাজার ৭৯৬টি বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে আট কোটি আট লাখ ৯৮ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা করে আদায় করা হয়েছে। শুধু খাদ্যপণ্যে ফরমালিন মেশানোর কারণে ১৮৬টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ২৪ লাখ ৫১ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ফরমালিন মিশ্রিত ফল-মাছ স্পস্টেই ধ্বংস করা হয়েছে।”