নানা কৌশল অবলম্বন করেও সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে না পেরে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রশিবির। হামলা, মামলা আর কর্মী সংকটে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে শিবিরের কার্যক্রম।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি তৎপরতায় সম্পৃক্ততা এবং মৌলবাদি কর্মকাণ্ডের জন্য গত ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয় শাখা ছাত্রলীগ। শুধু তাই নয়, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শিবিরকে প্রতিরোধের ডাক দেওয়া হয়। এর পর থেকে শিবিরের আর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত জোট সরকারের আমলে সক্রিয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মূল কমিটি ছাড়াও কলা অনুষদে চারটি, বিজ্ঞান অনুষদে তিনটি, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে দু’টি ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে একটি শাখা কমিটি করা হয়েছিল।
এসব কমিটিতে শতাধিক কর্মীকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রকাশ্যে শিবিরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এর পর বিভিন্ন সময় পুলিশ-ছাত্রলীগের কড়া নজরদারিতে শিবিরের নতুন কর্মী সংগ্রহ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কর্মী সংকটের কারণে কমিয়ে আনা হয়েছে বেশ কয়েকটি উপশাখা কমিটি। ছোট করা হয়েছে মূল কমিটি। অতিরিক্ত পরিমান জঙ্গি কর্মকাণ্ডের কারণে পুরাতন কর্মীদের অনেকেই সংগঠন ত্যাগ করছেন।
সংগঠন ত্যাগ করা মার্কেটিং বিভাগের এক ছাত্র বাংলানিউজকে জানান, সূরা-কেরাত আর জিকিরের কথা বলে গভীর রাতে পবিত্র কোরআন শরীফের উপর হাত রেখে সংগঠনের গোপনীয়তা রক্ষার শপথ করানো হয়। শপথের পর নতুন কর্মীদের বুকে কোরআন জড়িয়ে ধ্যানমগ্ন করে জিহাদের নামে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের শিক্ষা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, মেধাবী এবং দরিদ্র ছাত্রদের টার্গেট করে থাকা-খাওয়ার নামমাত্র অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে ভিড়ানো হয় সংগঠনে। সংগঠনের অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বেশ কয়েকটি ছাত্রাবাস ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংগঠনের কর্মকাণ্ড বিতর্কিত হয়ে পড়ায় কর্মী সংগ্রহ বেশ কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কর্মী সংকটে ছাত্রাবাসের সংখ্যা আগের তুলনায় কমিয়ে আনা হয়েছে।
অস্তিত্ব সংকটে পড়া সংগঠনটির অধিকাংশ নেতা-কর্মী হামলা-মামলার ভয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। নিজেদের কর্মীদের কাছেও বিশ্ববিদ্যালয় মূল কমিটির ব্যাপারে চরম গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। অধিকাংশ কর্মী সভাপতি খালেদ হোসেন ছাড়া অন্য সদস্যদের নাম জানেন না।
এদিকে গোপনীয়তা রক্ষার পরও শিবিরের সব কর্মকাণ্ড ধরা পড়ে যাচ্ছে বিরোধী সংগঠনের কাছে। সম্প্রতি শিবিরের চাঁদা আদায়ের একটি রশিদ বই উদ্ধার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। এই রশিদ বইয়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ শিবিরের মাসিক চাঁদা দেন বলে নিশ্চিত করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি জানান, উদ্ধারকৃত চাঁদা আদায়ের রশিদ বইয়ে পাওয়া নামের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের নামের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আরও শিক্ষক চাঁদা দেন কিনা তাও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
এদিকে ছাত্রলীগের পাশাপাশি শিবিরের নিষিদ্ধের ব্যাপারে একমত পোষণ করেছে প্রগতিশীল ছাত্রনেতারা।
জবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সজিব বলেন, যুদ্ধাপরাধ আর মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জঙ্গিবাবি ও মৌলবাবি অপশক্তি হিসেবে পরিচিত জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি শুধু ক্যাম্পাসে নয় সারা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা উচিত। আর এজন্য সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন।
জবি ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি মাহাদি বলেন, ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি আর জঙ্গিবাদি সংগঠন একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে কাম্য নয়। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলে স্বাধীন দেশটির ভবিষ্যতের জন্য সংগঠনটি হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
এ ব্যাপারে শাখা শিবিরের প্রচার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মাহফুজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।