ফুটবল খেলায় ভুলের জন্য কোনো খেলোয়াড়কে তিরস্কার করা যায়, গালি দেওয়া যায়, কিন্তু কাউকে খুন করে ফেলা যায়—বিশ্ব সেবারই তা প্রথম জেনেছিল। আজকের এই দিন, ২ জুলাই। সেই নজিরবিহীন ঘটনার ২০ বছর পূর্ণ হলো। ভাগ্যের পরিহাসও বড় অদ্ভুত। ঠিক ২০ বছর পর সেই সময়েই এসকোবারের দেশ কলম্বিয়া প্রথমবারের মতো উঠে এসেছে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। শেষ আটে তাদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ব্রাজিল। তাই এসকোবারের মৃত্যু দিনটা এবার বেশ জোরেশোরেই স্মরণ করা হচ্ছে। টুইটারে এর মধ্যেই ব্যাপক সাড়া পড়েছে দিনটি নিয়ে। উরুগুয়েকে হারিয়ে কলম্বিয়া শেষ আটে জায়গা করে নেওয়ার পরপরই একজন কলম্বিয়ান এসকোবারের উদ্দেশে টুইট করেন, ‘আশা করি তুমি ওপর থেকে ম্যাচটা উপভোগ করেছ। তোমার দল ও দলের স্বপ্নটা বেঁচে আছে এখনো।’ বিশ বছর আগের কথা। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সেবারও ছিল কলম্বিয়ার সরব উপস্থিতি। ‘সরব’ বলার কারণ, ব্রাজিলীয় ফুটবল কিংবদন্তি পেলের একটি ভবিষ্যদ্বাণী। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে লাতিন এই দেশটির পারফরম্যান্স দেখে তিনি তাদের বিশ্বকাপের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই ধরে নিয়েছিলেন। বিশ্বকাপে তাই কলম্বিয়াকে নিয়ে ছিল অন্য রকম আগ্রহ। কিন্তু বিধি বাম। প্রত্যাশার চূড়ায় থাকা দলটি বিদায় নিল প্রথম পর্ব থেকেই। আর কলম্বিয়ার এই বিদায় জন্ম দিল বিশ্বকাপ কেন, ফুটবল ইতিহাসেরই সবচেয়ে ট্র্যাজিক ঘটনার। কলম্বিয়ার বিদায় নিশ্চিত হয়েছিল একটি আত্মঘাতী গোলে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে আন্দ্রেস এসকোবারের করা সেই আত্মঘাতী গোলটি আক্ষরিক অর্থেই ‘আত্মঘাতী’ হয়ে দেখা দিল কলম্বিয়া দল ব্যর্থ হয়ে দেশে ফেরার পর। গুলি করে হত্যা করা হলো ওই এসকোবারকে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ওই ম্যাচের ১০ দিন পর এক পানশালার বাইরে গুলি করা হয়েছিল এসকোবারকে। মোট ১২টি বুলেট ছোড়া হয়েছিল এসকোবারের শরীরে, প্রতিটি গুলি করার সময় আততায়ী উন্মাদের মতো চিত্কার করে বলছিল, ‘গোল’! নির্মম এই খুনের পর তাঁর জন্মস্থান মাদিলিনের অধিবাসীরা কিন্তু ঠিকই মাতা নত করেছিলেন সমবেদনায়। তাঁর শেষকৃত্যে উপস্থিত হয়েছিলেন ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ। যে শহরকে ক্ষুব্ধ করেছিল তাঁর এক অনিচ্ছাকৃত ভুল, আজ সেই শহরেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তাঁর ভাস্কর্য! ২০ বছর পর বুঝি কলম্বিয়ার সাফল্যে আবারও জেগে উঠেছে প্রাণ দিয়ে ব্যর্থতার মাশুল দিয়ে যাওয়া এসকোবারের নাম। তাঁর শহর মাদিলিনের পাশাপাশি রিও ডি জেনিরোতেও তাঁর সম্মানে আজ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আবারও সহস্র মানুষ জড় হচ্ছে পরাজয়েও জয়ী হওয়া এসকোবারের জন্য। শুক্রবার হয়তো এসকোবারে অনুপ্রাণিত হয়ে ফেবারিট ব্রাজিলের বিপক্ষে জিততেই মাঠে নামবেন কলম্বিয়ানরা। সামান্য একটা ভুলে নিজ দলকে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে ফেলার অপরাধে যিনি প্রাণ হারিয়েছিলেন, ওপর থেকে তিনি নিশ্চয়ই দেখবেন বিশ্বকাপে নিজের দেশের জন্য গৌরবময় এক মুহূর্ত। কে জানে, এসকোবারের সেই ব্যর্থতার আঁধার ঘোচানো সাফল্যের মশালটা যে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন ওই মাদালিনেরই আরেক ছেলে হামেস রদ্রিগেজ। ব্যাপারটা নিতান্তই কাকতাল, নাকি ঐশ্বরিক, সেটা কে-ই বা বলতে পারে!