সারা দেশের মত ভোলাতেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসএস পরীক্ষা ২৭ জুন থেকে শুরু হওয়া এ পরীক্ষা শেষ হবে ২৫ আগস্ট। শুক্রবার ছিল ইংরেজী বিষয়ের পরীক্ষা।
ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি কিছু অসাধু শিক্ষক ও কর্মচারীরাও প্রস্তুতি নিয়েছেন পরীক্ষার সময় নকল সরবরাহের। সে সাথে যোগ হয়েছে পরীক্ষা কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানেরা জন্য মোতায়েন করা পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। ভোলা জেলায় মোট ৬টি কেন্দ্রে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে ভোলা সদরের আলতাজের রহমান ডিগ্রী কলেজে অনুষ্ঠিত পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ পরীক্ষার্থীরা নকলের সাহায্যে পরীক্ষা দিচ্ছেন।
আর তাদের সহযোগীতার জন্য রয়েছেন কিছু অসাধু শিক্ষক, কলেজের কর্মচারী ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য। সাংবাদিকদের দেখে শিক্ষক কর্মচারীরা ব্যস্ত হয়েপড়েছেন শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে দিতে। হল সুপারের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক এনায়েত উল্যাহকে দেখা গেল তরিঘরি করে প্রতিটি হল পরিদর্শন করতে। দীর্ঘ দিন ধরে এ কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা অভিযোগ করে আসছে, বিশেষ করে ইংরেজী পরীক্ষার দিন অসাধু শিক্ষকরা পরীক্ষা শুরুর আধা ঘন্টা আগে প্রশ্ন পত্র ফাঁস করে টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার্থীর অভিবাবকদের নিকট সরবরাহ করেন। অভিবাবকরা প্রশ্ন পত্র অনুযায়ী উত্তর কাট কপি করে তা কলেজের পিয়ন মারফত পরীক্ষার্থীর নিকট সরবরাহ করেন।
অন্যদিকে পরীক্ষা কেন্দ্রেই শিক্ষকরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে ২০০-৫০০ টাকা করে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করেন। পরীক্ষা শুরুর এক ঘন্টা পর চাঁদা দাতা পরীক্ষার্থীর নিকট নকল সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও নকল সরবরাহ করার জন্য অন্যান্য পদ্ধতিও অবলম্বন করেন শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীরা। হলে নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ১০০-২০০ টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন পত্র নিয়ে আসেন হলের বাহিরে অপেক্ষমান অভিবাবকদের নিকট।
এর পর শুরু হয় উত্তর খোঁজা, খুঁজে পেলেই পাশের দোকানে ফটোকপি করার ধুম। কয়েক কপি ফটোকপি পুলিশ সদস্যদের ও কলেজ পিয়নদের মারফত পৌঁছে যায় পরীক্ষার্থীদের হাতে। যার হাতে নকলের কপি সে তখন ব্যাস্ত লেখায়। অন্যান্য পরীক্ষার্থীরা অধির আগ্রহে বসে থাকেন কখন লেখা শেষে পাবেন নকলের কপিটি। এদিকে সাধারণ পরীক্ষার্থীরা হতাশ এসব কার্যকলাপে।
একাধিক পরীক্ষার্থী জানান তারা জিম্মি হয়ে গেছেন নকলের কাছে। কিছু সংখ্যক অসাধু শিক্ষক আর কলেজ পিয়নদের ম্যানেজ করে কিছু পরীক্ষার্থী ভালো রেজাল্ট করছে। হাতিয়ে নিচ্ছে সার্টিফিকেট নামের সোনার হরিন। শারমিন নামে এক পরীক্ষার্থী জানালেন তিনি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন। বিএসএস এর একটি সার্টিফিকেট নিতে পারলে চাকুরিতে তার প্রমোশন হবে। তাই তিনি যেভাবেই হোক পরীক্ষায় পাশ করতে চান।
মোঃ রফিক নামে (৪২) এক পরীক্ষার্থী জানালেন, তিনি বেশ কয়েক বছর যাবৎ একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করছেন। শেষ বয়সে এসে তিনি একটি সার্টিফিকেট চান। তিনি আরও বলেন এবয়সে এসে লেখাপড়া করতে ইচ্ছে হয় না তাই এদিক ওদিক করে নকলের সাহায্যে পরীক্ষা দিচ্ছি।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অফিস স্টাফ বলেন, প্রায়ই শিক্ষার্থীরা এসে অভিযোগ করে কিছু অসাধু শিক্ষক কর্মচারীরা পরীক্ষা শুরুর আগে তাদের কাছ থেকে চাঁদা তোলেন পরীক্ষায় নকলের সহযোগীতা করার জন্য। নকলের বিষয়ে অফিস স্টাফের কাছে জানতে চাইলে তিনি শিক্ষকদের নকলের সহযোগীতা করার কথা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন হল সুপারের দায়িত্বে থাক শিক্ষকের সহযোগীতায় কিছু অসাধু শিক্ষক পরীক্ষার্থীদের নকলে সহযোগীতা করছেন। এবিষয়ে একাধিক পরীক্ষার্থীও অভিযোগ করেন। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন বিষয়ে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোলা জেলার কো-অর্ডিনেশন অফিসোর কর্মকর্তা মোঃ আহসানুল কবিরের কাছে জানতে চাইলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এমনকি তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। বর্তমানে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ভাবে বলে আসছে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকে ৫০০০০ টাকা থেকে ৩০০০০০ টাকায় সার্টিফিকেট পাওয়া যাচ্ছে। পক্ষান্তরে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীরা মাত্র ২৮৫০ টাকা দিয়েই পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে নকলের সাহায্যে সার্টিফিকেট হাতিয়ে নিচ্ছেন। এই যদি হয় শিক্ষার অবস্থা তাহলে নবাগত শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের চিন্তা হবারই কথা।