স্ত্রীকে নিয়ে কেনাকাটায় গিয়ে মুশকিলে পড়তেন ভল্ফগাং শ্নিক। কাপড়ের রং বুঝতে স্ত্রী চলে যেতেন দোকানের বাইরে, সূর্যের আলোয় দেখতে। এখন অবশ্য ভল্ফগাং খুব খুশি। কারণ এতোদিনে বৈদ্যুতিক বাতিতে সূর্যের উজ্জ্বলতা এসেছে।
ভল্ফগাং শ্নিক জার্মানির এক রসায়নবিদ। মিউনিখ শহরের লুডভিগ-মাক্সিমিলিয়ান্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক ও তার সহকর্মীরা এক রকম অসাধ্যই সাধন করেছেন কয়েকদিন আগে। এলইডি বাল্বে প্রায় সূর্যের আলোর উজ্জ্বলতা নিয়ে এসেছেন তারা।
‘লাইট এমিটিং ডায়ডস’ বা এলইডি বাল্বের একটা সীমাবদ্ধতা হলো, এ ধরণের বাতি শুধু একটা রং-ই নির্গমন করে। ফলে আলোয় থাকে একটা লাল আভা। অথচ মানুষ সাধারণত যখন বই পড়ে, কাপড় পছন্দ করে, কিংবা আয়নায় নিজের চেহারা দেখে, তখন সাদা আলোতেই দেখতে ভালোবাসে। আর সাদা আসলে অনেক রঙের সমাহার। ফলে একটু লালাভ এবং সেই লাল আভার কারণে সূর্যের আলোর চেয়ে কম উজ্জ্বল আলো বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে সবার কাছে খুব একটা পছন্দের নয়।
অথচ ২০০২ সালে ইনক্যানডেসেন্ট ল্যাম্প বা ভাস্বরদীপ নিষিদ্ধ করার পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বাজার এলইডি বাল্বে সয়লাব।
এ ধরণের বাতির বড় সুবিধার দিকও আছে। এলইডি, এনার্জি সেভিং, অর্থাৎ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্বের মতো জ্বলতে সময় নেয় না। তার ওপর গরম হওয়ার সময় না নিয়ে, সুইচ টেপা মাত্রই এই বাল্ব জ্বলে ওঠে বলে ভোক্তাদের কাছে সমাদৃতও হয়ে আসছে এলইডি।
ভবিষ্যতে এর সমাদর আরো বাড়বে বলেই আশা করছেন ভল্ফগাং শ্নিক। তিনি এবং লুডভিগ-মাক্সিমিলিয়ান্স বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কয়েকজন সহকর্মী গবেষক এলইডি বাল্বের জন্য এমন এক উপাদান আবিষ্কার করেছেন, যার সহায়তায় লাল আভা বলতে গেলে আর থাকেই না। ফলে এলইডি বাল্বের আলোয় কাপড় তো অবশ্যই, অন্যসব কিছুই প্রকৃত রঙে দেখতে আর অসুবিধে হবে না।
ভল্ফগাং শ্নিক জানান, তিনি এবং তার সহকর্মীরা নতুন ধরণের এক লুমিনফোর আবিষ্কার করেছেন। আর সে কারণেই এলইডি-র আলো হয়ে উঠেছে অনেক বেশি উজ্জ্বল।
শ্নিক জানান, এলইডি বাল্বে এই গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য গত কয়েক বছর ধরেই ফিলিপস লুমিলেডস ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের সাথে যৌথভাবে কাজ করে আসছিলেন তারা। এ কাজে প্রত্যাশিত সাফল্য এসেছে।
ভল্ফগাং শ্নিক বলেন, “(উজ্জ্বলতা হিসেব করে) সূর্যের আলোকে যদি ১০০ দেয়া হয়, সেই তুলনায় এখনকার এলইডি বাল্বের উজ্জ্বলতা ৮০ ভাগ। আমাদের উদ্ভাবিত নতুন এই লুমিনেসেন্ট উপাদান উজ্জ্বলতা ৯০ ভাগেরও ওপরে নিয়ে গেছে।”
ভল্ফগাং শ্নিকদের এ নতুন এলইডি বাল্ব এখন শুধু বাজারে আসার অপেক্ষায়।
সূত্র: ডয়চে ভেল