আরিফ উদ্দিন, গাইবান্ধা থেকেঃ গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নে ভিজিএফের চাল ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারের লোকজন। প্রত্যেককে ১০ কেজি চালের পরিবর্তে সাড়ে সাত কেজি থেকে আট কেজি করে চাল দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকালে ইউনিয়ন পরিষদ চত্তরে অসহায় ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে এসব চাল বিতরণ করা হয়। চাল কম দেওয়ার খবর পেয়ে সকাল ১১ টার দিকে এ প্রতিবেদকসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীরা সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পান, একটি প্লাস্টিকের বালতি দিয়ে এলোমেলো ভাবে চাল বিতরণ চলছে। স্লিপ হাতে নারী-পুরুষ চাল নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন। অনেকে চাল নেওয়ার পর পরিষদ চত্তরে থাকা চাল ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দিয়ে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা নিচ্ছেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে প্রায় আধা ঘণ্টা চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়। সরকারীভাবে প্রত্যেক পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও বিতরণ করা চাল ওজন দিয়ে দেখা যায় সাড়ে সাত কেজি থেকে আট কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। পূর্ব দামোদরপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদ অভিযোগ করে বলেন, কাটা বা দাড়িপাল্লায় ওজন না করে একটা প্লাস্টিকের বালতি দিয়ে চাল দেওয়া হয়। সন্দেহ হলে একটি দোকানে গিয়ে ওজন দিয়ে দেখি সাড়ে সাত কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া এবারের দেওয়া চাল খাবার অনুপযোগী। কিশামত বড়বাড়ি গ্রামের রাজা মিয়া ও হায়দার আলী বলেন, ‘আমরা সাড়ে সাত থেকে আট কেজি করে চাল পেয়েছি। তবে শুনেছি সরকারী ভাবে ১০ কেজি চাল নাকি পাওয়ার কথা’। জামুডাঙ্গা (পাটনিপাড়া) গ্রামের যতিন্দ্র নাথ, ব্যাপারী পাড়ার নুরজাহান বেগম, জালাদুর মোড় (বটতলা) গ্রামের চন্দন কুমার, জামুডাঙ্গা গ্রামের যেতেন্দ্র নাথ, মানিক মিয়া বলেন, সরকার আমাদের ১০ কেজি চাল দিয়েছে আর চাল পেলাম আট কেজি। চাল কমের বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। এছাড়া চাল নিতে আসা অনেকে চাল কম পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ডা. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘চাল পেয়ে অসহায় লোকজন খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু সেই হাসিটা মলিন হয়ে গেছে চেয়ারম্যানের বিতরণ করা সাত-আট কেজি চাল দেওয়ার কারণে’। তিনি আরো জানান, নামমাত্র কিছু দরিদ্রদের চালের স্লিপ দিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান বাকী স্লিপ পছন্দের লোকজনদের দিয়েছেন। এসব লোকজন চাল তুলে সঙ্গে সঙ্গে পরিষদ চত্তরে থাকা চাল ব্যবসায়ীদের কাছে নগদ টাকায় বিক্রি করেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, রমজান উপলক্ষে দামোদরপুর ইউনিয়নের ১৫৬৪ পরিবারের জন্য ১৫.৬৪ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। চাল বিতরণের জন্য ওই ইউনিয়নে একজন ট্যাগ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তিনি চাল বিতরণের তদারকি করবেন। তবে তিনি ওজনে কম দেওয়ার বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। দামোদরপুর ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান ওজনে চাল কম দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ওজনে চাল কম দেওয়ার বিষয়ে একাধিকবার নিষেধ করা হয়েছিল কিন্তু তা উপেক্ষা করে চাল বিতরণ অব্যহত রাখেন চেয়ারম্যান। দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা রহমান ওজনে চাল কম দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও তিনি ১০ কেজির পরিবর্তে প্রত্যেককে ৯ কেজি চাল দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহা. আহসান হাবীব বলেন, ‘চাল কম দেওয়ার বিষয় জেনে ইউনিয়ন পরিষদে লোক পাঠানো হয়েছে। সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।