ঘটনাটা বিশ্বকাপ শুরুর আগে। লন্ডনে আর্জেন্টাইন দূতাবাসে একটা অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন সাবেক আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার অসভালদো আর্ডিলেস। ইংল্যান্ড-আর্জেন্টিনা ফুটবল দ্বৈরথ, ফকল্যান্ড দ্বীপ নিয়ে রাজনৈতিক বৈরিতার পরেও যে কজন আর্জেন্টাইনকে হৃদয়ে জায়গা দিয়ে রেখেছে ইংলিশরা, আর্ডিলেস তাঁদের একজন। টটেনহামের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নিজের পারফরম্যান্স দিয়েই সেটা অর্জন করেছেন আর্ডিলেস। দূতাবাসের সেই অনুষ্ঠানে আলোচনার বিষয়ও ছিল ফুটবল, বিশ্বকাপ এবং আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড দ্বৈরথ।
সেখানেই উপস্থিত এক ইংলিশ ফুটবলপ্রেমী হঠাৎ আর্ডিলেসকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সবাই ইংল্যান্ডের সঙ্গে আর্জেন্টিনার দ্বৈরথ নিয়ে কথা বলছে। আমার তো মনে হয়, ইংল্যান্ডের সঙ্গে আর্জেন্টিনার দ্বৈরথ এখন আর বড় কিছু নয়। তার চেয়ে বরং জার্মানিকে নিয়েই আর্জেন্টিনার বেশি উদ্বিগ্ন থাকা উচিত। গত দুটি বিশ্বকাপে ওরা আর্জেন্টিনাকে বিদায় করে দিয়েছে। তার আগে একবার ফাইনালে হারিয়েছে। এবার যদি আবার দেখা হয়ে যায়, আদৌ কি আর্জেন্টিনা পারবে জার্মানিকে হারাতে?’
একেবারে একজন আর্জেন্টাইনের বুকে ঘা দেওয়া প্রশ্ন। তবে মাথা ঠান্ডা রেখে ছোট্ট করে সেই প্রশ্নটার জবাব দিলেন আর্ডিলেস, ‘পারবে, যদি মেসি ওর খেলাটা খেলতে পারে।’
কী অদ্ভুত! মাস দেড়েক পর বিশ্বকাপের ফাইনালের আগে দূতাবাসের সেই ইংলিশ ফুটবলপ্রেমীর প্রশ্নটাই বারবার ঘুরেফিরে আসছে। জার্মানিকে কি আদৌ হারাতে পারবে আর্জেন্টিনা? আর সেই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আর্জেন্টাইন সমর্থকেরাও যেন বারবার আর্ডিলেসের সেই কথাটাই বলছেন, মেসি তাঁর সেরা খেলাটা খেললে কিছুই অসম্ভব নয়।
এটা আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা যেমন জানেন, তেমনি জানে জার্মানিও। প্রশ্ন হচ্ছে, জেনেশুনে কি আর মেসিকে তাঁর মতো খেলার সুযোগ দেবে জার্মানি?
পর্তুগালের সঙ্গে প্রথম ম্যাচের আগেও এমন অনেক কথা বলা হচ্ছিল। ধারণা করা হয়েছিল, লড়াইটা হবে রোনালদোর সঙ্গে জার্মানির। কার্যত রোনালদো কোনো সুযোগই পেলেন না। তাঁর দল জার্মানির কাছে উড়ে গেল ৪-০ গোলে। ব্রাজিল জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হলেও ওই ম্যাচে নেইমার খেলতে পারেননি। তাঁর সঙ্গে জার্মানদের লড়াইটা তাই দেখা হলো না ফুটবলপ্রেমীদের। এবার মেসির পালা। মেসি পারবেন আর্ডিলেসের কথাটা সত্য প্রমাণ করতে?
জার্মানরা কিন্তু প্রস্তুতি নিয়েই রাখছে। লেফট ব্যাক বেনেডিক্ট হুভেডেস যেমন আগেই বলে দিচ্ছেন, ‘আমরাও জানি মেসি বিশ্বসেরা ফুটবলার। কিন্তু যে কথাটা আমি পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচের আগে রোনালদোকে নিয়ে বলেছিলাম, সেটাই আবার বলছি। ওকে সবাই মিলে থামাতে হবে। তার গোল করার সুযোগগুলো কমিয়ে দিতে হবে। মাঠে যাতে সে বিপজ্জনকভাবে নড়াচড়া না করতে পারে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।’
একই রকম সতর্কতা ছিল ডাচদেরও এবং সেমিফাইনালে মেসিকে আটকে রাখার ক্ষেত্রে তারা সফলও। সুতরাং ফাইনালেও মেসিকে নিষ্প্রভ রাখাটা অসম্ভব মনে করছেন না জার্মানির সহকারী কোচ হানসি ফ্লিক, ‘আমরা ডাচদের সঙ্গে আর্জেন্টিনার ম্যাচটা দেখেছি। ডাচরা কীভাবে মেসিকে আটকে রেখেছে সেটাও দেখেছি। এ ছাড়া আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আমাদের আগে অনেকবার খেলার অভিজ্ঞতাও আছে। সুতরাং মেসির জন্য আমাদের একটা পরিকল্পনা তো থাকবেই।’
হল্যান্ডের বিপক্ষে নিষ্প্রভ থাকার পরও শেষ পর্যন্ত হাসিমুখে মাঠ ছেড়েছেন মেসি। মাচেরানো-রোমেরোদের মতো সতীর্থরা তাঁকে এনে দিয়েছেন প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার সুযোগ। আজন্ম লালিত স্বপ্ন থেকে এখন আর মাত্র ৯০ মিনিট দূরে আর্জেন্টাইন জাদুকর।
জার্মানির সব হিসাবনিকাশ ভুল প্রমাণ করে মেসি আরও একবার তাঁর জাদুর বাক্সটা খুলতে পারবেন?