ঈদের বাকি আর ১১ দিন। এরই মধ্যে আজ রমজানের তৃতীয় শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়াতে ঈদের বাজার জমে উঠেছে। যারা রাজধানী বাইরে ঈদ উৎযাপন করবেন তারাই এখন কেনাকাটায় বেশি ব্যস্ত।
রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেইনগরীর ফুটপাত থেকে শুরু করে শপিংমলগুলোতে উপচেপড়া ভিড়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত সাইফুল ইসলাম ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন বসুন্ধরা সিটিতে। তিনি জানান,পরিবারের সবার জন্য পোশাক কিনে বাড়ি পাঠাতে হবে। সবার পছন্দকে প্রাধান্য দিয়েই তিনি কেনাকাটা শুরু করেছেন। এবার দাম তুলনামুলকভাবে বেশি হলেও পরিবারের সকলের সাথে ঈদের আনন্দই মুখ্য বিষয়।
জীবিকার তাগিদে যারা সপ্তাহের অন্যান্য দিন কাজের কারণে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বের হতে পারেন না তাদের অনেকেই শুক্রবারের ছুটির দিনটিকে বেছে নিয়েছেন। আর স্বাভাবিকভাবেই বিক্রেতাদের ব্যস্তাতারও যেন কমতি নেই। সেই সঙ্গে লিফলেট ও বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের সংগ্রহ করা পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের দৃষ্টি কাড়ার চেষ্টাওচলছে।
এদিকে রাস্তার পাশের বা ফুটপাতে অস্থায়ী দোকানগুলোর বেচাকেনাও থেমে নেই। সাধ আর সাধ্যের হিসাব যাদের মেলাতে পারেন না তারা এখানে ভিড় জমিয়েছেন।
রাজধানীর বিপণী বিতান এলাকাগুলোতে ছিল যানজট। তবে ঈদে নতুন পোশাকে নিজেকে সাজানোর ইচ্ছা যেন এ যানজটের কষ্টকেও হার মানায়।
কেনাকাটা করতে আসা মানুষদের ঢল দেখে মনে হয়, এ যেন আর তর সইছে না! শপিং মল আর বিপনীবিতানগুলোয় ভিড় করছেন নিজের ও প্রিয়জনদের পোশাক কিনতে। ক্রেতাদের পদচারণায় জমে উঠেছে রাজধানীর ঈদের বাজার।
দেখা গেছে, নগরের অভিজাত বিপনীবিতান থেকে শুরু করে সড়কের পাশে থাকা ফুটপাতগুলোয় প্রচুর জনসমাগম ছিল। এসব মানুষের গন্তব্য ছিল আয় কিংবা আর্থিক সঙ্গতির ওপর ভিত্তি করে। নিম্ন আয়ের মানুষের ছুটেছেন ফুটপাত থেকে শুরু করে সাধারণ বিপণী কেন্দ্রে। আর উচ্চবিত্তের ভিড়ে ঠাসা ছিল বিলাসবহুল অভিজাত বিপণীকেন্দ্রগুলো। তবে উচ্চ আয়ের চাকুরিজীবীদের ভিড়ই বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
অভিজাত বিপণী কেন্দ্রে ঈদ উপলক্ষে রয়েছে আকর্ষণীয় ও উচ্চমূল্যের পোশাক এবং পণ্যের সমাহার। আলো ঝলমলে এসব দোকানে পণ্যের ব্রান্ড নেম এর গুরুত্বই অনেক বেশি।
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মাহবুবুল হক বলেন, এমন পোশাক কিনতে চাই যেন সব সময় পরা যায়। এছাড়া এবার গরমেরও একটা ব্যাপার আছে।তাই সব ধরনের পোশাক পড়ার সুযোগ নেই। ব্র্যান্ডের শার্ট কিনতে ঝামেলা কম। নির্ধারিত দামে কেনা যায়।
ব্র্যান্ড পোশাকের প্রতি ঝোঁক এবার মূলত তরুণ-তরুণীদের। তারাই ছুটছেন দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের পোশাক কিনতে। এসব পোশাকের দাম পড়ছে সর্বনিম্ন হাজার থেকে সর্বোচ্চ কয়েক হাজার টাকা। বিদেশি ব্র্যান্ডে ঈদের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ পাঞ্জাবি না মিললেও দেশীয় ব্র্যান্ড এনেছে নানান ধরন, রং ও বৈশিষ্ট্যের পাঞ্জাবি। বেশি বাজেটের মানুষেরা শার্ট, প্যান্টের পাশাপাশি কিনছে পাঞ্জাবি।
ব্যবসায়ী মাহমুদ বলেন, “অন্য পোশাক যতই কেনা হোক, পাঞ্জাবি না কিনলে ঠিক ঈদের মজা পাওয়া যায় না।”
বিপণীকেন্দ্রগুলোতে নারীদের ভিড় বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বরাবরের মতো এবারও দুবাই পাঞ্জাবি, ফতুয়া, মাসাককলি, বৃন্দা, রেবো, আকসার, গজনি নামের বিভিন্ন বিদেশি ব্রান্ডের পোশাক রয়েছে। নারীর জন্যও রয়েছে বাহারি পোশাকের বাহারি দোকান। শাড়ির জন্য বেইলি রোডসহ বিভিন্ন জায়গায় আছে নামকরা শাড়ির দোকান। এছাড়াও শাড়ি আছে বিভিন্ন দেশীয় ব্র্যান্ডের দোকানে। কম বয়েসী নারীদের জন্য আছে নানা ধরনের সালোয়ার, কামিজ, ওড়না ও সবমিলিয়ে বিশেষ সেট। আরও আছে অলংকারের সমাহার।
বাঙালী রমনীর ঐতিহ্য শাড়িতেও এসেছে নতুন সাজ। শাড়িতে এবার ইতালিয়ান ক্রাপ, হাফ মসলিন, হাফ জর্জেট, বাহারি এক্সক্লুসিভ হাড্ডিপার, শিফন এগিয়ে রয়েছে। নিউ মার্কেটের দোতলার তৈরি পোশাকের দোকান আর কে ফ্যাশনের ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন বললেন, বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। ক্রেতাদের ভিড়ে দম ফেলবার সময় নেই। প্রতিবারের মত এবারও নতুন ফ্যাশনের পোশাকই খোঁজছেন ক্রেতারা।
বিদেশি ব্র্যান্ডের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে মূলত গুলশান-বনানী এলাকায়। এছাড়া বসুন্ধরা সিটি, রাপাপ্লাজা, ইস্টার্ন প্লাজায়ও মিলবে এসব পোশাক। আর দেশীয় ব্যান্ডের দোকান ছড়িয়ে আছে শহর জুড়েই। নিউমার্কেট, মৌচাক মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, ধানমণ্ডি, মালিবাগ, উত্তরা, গুলশান, বনানী এলাকায় রয়েছে অসংখ্য দোকান বা শাখা দোকান। এসব দোকানে ঈদের কেনাকাটায় ছুটছেন বেশি টাকার মানুষরা।
নগরীর নিম্ন ও মধ্য আয়ের সাধারণ মানুষের সবসময়ের আর্কষণ নিউমার্কেট বাজার। এ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় দোকানেই ক্রেতার ভিড়। এখানে দেড়শ’ থেকে দেড় হাজার টাকা দামের শার্ট ও শিশুদের পোশাক, পাঁচশ’ থেকে পাঁচ হাজার টাকা দামের থ্রি-পিস, আড়াইশ’ থেকে ১৫ হাজার টাকা দামের শাড়িসহ বিভিন্ন দামের হাল ফ্যাশনের সব পণ্যই রয়েছে।
তবে বরাবরের মতো পণ্যের দাম বেশি বলে ক্রেতাদের অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। অভিযোগ থাকলেও কিন্তু তারা বসে নেই। ঠিকই প্রিয়জনের জন্য কিনছেন ঈদের পণ্য। দিন যত গড়াবে, ততোই বাড়তে থাকবে ভিড়, কেনাকাটা। আর বিক্রেতাদের মুখে দেখা যাবে হাসি।