বিশিষ্ট গণমাধ্যম ও কৃষি ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ বলেছেন, বেসরকারি টেলিভিশনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অসংখ্য অনুষ্ঠান নির্মিত হচ্ছে এবং দর্শক সে সব অনুষ্ঠান থেকে পছন্দ করে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। গুণগতমান না বাড়লেও এটা দর্শকদের জন্য বিশেষ পাওনা যে, তারা নিজেদের পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রচুর অনুষ্ঠানের মধ্য পছন্দ করার স্বাধীনতা দর্শকরা পেয়েছেন। শাইখ সিরাজ বলেন, এখনও সব ক’টি টেলিভিশন চ্যানেলই ঈদ অনুষ্ঠানমালা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে আছে। নাটকনির্ভর হয়ে উঠেছে সবাই। সত্যিকার অর্থে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান নেই বললেই ছিল। তবে একটা কথা বলতে পারি টেলিভিশনের দর্শকরা সুনির্দিষ্টভাবে দুটি অনুষ্ঠানে দেখার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করেন। একটি কৃষকের ঈদ আনন্দ, আরেকটি ‘ইত্যাদি’। বিটিভির যুগে তারা থাকতেন ‘যদি কিছু মনে না করেন’ এবং ‘আনন্দমেলা’ নিয়ে। এখন ঈদে সবক’টি চ্যানেল মিলিয়ে ২০০-৩০০ নাটক প্রচার হয়। চলচ্চিত্র প্রচার হয় ১০০টিরও বেশি। আগে বিটিভিতে ১টা ছবি দেখানো হতো। দর্শকদের আলাদা একটা আবহ থাকতো। এখন প্রতিটি চ্যানেল ৫-৬টি করে দেখাচ্ছে। দর্শকদের আগ্রহও আছে। কিন্তু আগের মতো মনোযোগ দিয়ে উৎসবের আনন্দ নিয়ে কেউ ছবি দেখে বলে আমার মনে হয় না। তিনি বলেন, টেলিভিশন হচ্ছে টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের জন্য। সেখানে ৫-৬টি ছবি দেখিয়ে প্রচুর সময় ব্যয় করা হচ্ছে। এটা আমার মতে ঠিক নয়। আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করছি, ঈদকে মাথায় রেখে নাটক নির্মাণ করা। এগুলোতে সস্তা বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। প্রায় দেখি শিল্পীরা বলে থাকেন, এবারের ঈদে আমার দশটি নাটক যাবে। তার মানে তারা সংখ্যাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, মানকে নয়। ঈদে প্রায় ৫০ থেকে ৭০ কোটি টাকার অনুষ্ঠান নির্মাণ হয়। বাজার বড় না হলেও ব্যবসা হচ্ছে। আর ব্যবসা না হলে অনুষ্ঠান নির্মাণ হচ্ছে কি করে? শাইখ সিরাজ বলেন, এখন অনুষ্ঠান হচ্ছে ৭ দিন ১০ দিনব্যাপী। ঈদের অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ তিন দিন হওয়া উচিত। দিনের সংখ্যা না কমালে গুণগত মানও বাড়বে না, দর্শকদের আনন্দও পরিপূর্ণ হবে না।
শাইখ সিরাজ বলেন, চ্যানেল আই-এর কৃষকের ঈদ আনন্দ শ্রেষ্ঠ বিনোদন অনুষ্ঠান। প্রচলিত বিনোদনের ধারা ভেঙে বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে এক করে একটি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান নির্মাণ করা হচ্ছে ২০০৫ থেকে। সব পেশার মানুষ এ অনুষ্ঠানটি দেখার জন্য অপেক্ষা করেন, এটাই আমাদের সার্থকতা। আরেকটি হচ্ছে চ্যানেল আই ‘ছোট কাকু’ নামে একটি শিশু গোয়েন্দা সিরিজ প্রচার করছে। অন্য ধারার এই গোয়েন্দা সিরিজটির লেখক ফরিদুর রেজা সাগর ও নির্মাতা অভিনেতা আফজাল হোসেন খুবই মনোযোগ সহকারে পরিচর্যা করছেন। দর্শকরাও পছন্দ করছে। দেখা যাবে একদিন এই ছোট কাকুর বিখ্যাত ফেলুদা, মাসুদরানা, কিরীটি রায় কিংবা হিমুর মতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শাইখ সিরাজ বলেন, টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মান বাড়াতে হলে লগ্নি বাড়াতে হবে। প্রোডাকশন কমিয়ে দিয়ে কোয়ালিটি বাড়াতে হবে। টেকিনিক্যাল জ্ঞানসম্পন্ন কলাকুশলীদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, ধাক্কাতে ধাক্কাতে আমরা এত দূর এসে পৌঁছেছি। এখন লগ্নি বাড়লে অনুষ্ঠানে নতুনত্ব আনতে পারলে ভবিষ্যৎটা ভাল হবে এটা আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি। শাইখ সিরাজ বলেন, বেসরকারি টেলিভিশন এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান নির্মাণের গুরুত্ব বেড়েছে। দেশের বেশির ভাগ মানুষ নাড়ির টানে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। সেখানে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করার পর টেলিভিশনের সামনে বসে অনুষ্ঠান দেখবে। তারা অনুষ্ঠান পছন্দ করে দেখার সুযোগ পাচ্ছে, অধিকার পাচ্ছে, এটাই বড় সার্থকতা। যেটা ভাল অনুষ্ঠান সেটা তারা দেখবে, যেটা ভাল না সেটা দেখবে না। আমরা যারা টেলিভিশন চালাই তাদের এ বিষয়টা মাথায় রাখলেই হবে। এবারের ঈদ সবারই আনন্দময় হোক- এমন প্রত্যাশা রইলো।