ঈদ মানে নিয়মিত ব্যবধানে বারবার সংঘটিত হওয়া একটি সামাজিক বা ধর্মীয় উৎসব, অর্থাৎ হাসিখুশির দিন। ঈদ উল-ফিতর বা ঈদ আল-ফিতর উদযাপিত হয় আরবি রমজান মাসের ঠিক পরের মাসের প্রথম দিন, পয়লা শাওয়াল-এ। ঈদ-উল-ফিতর বিশ্বের তাবৎ মুসলমানদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিশেষ খুশির দিন। খুশির ব্যপকতা ও গভীরতা এত বেশি হওয়ার কারণ, এটা আসে দীর্ঘ একমাস ধরে কৃচ্ছসাধনাময় রোজা বা উপবাস পালন করার পর। দিনটির মর্যাদা এত বেশি যে এই দিন রোজা রাখাও হারাম।
রোজা করা ঠিক “উপবাস” বা “লেন্ট” পালন নয়। রোজাকে প্রকৃত অর্থে কৃচ্ছসাধনা বলা হয় এই কারণে যে, এ সময় মুসলমানরা সংযমের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়। তারা জাগতিক সব সুখকর ও আরামদায়ক অভ্যাস থেকে সংযম করে; অত্যাচার, অনাচার, কুআচার, ব্যভিচার ও মিথ্যাচার থেকে নিবৃত্ত থাকার অঙ্গীকার নেয়। লোভ, লালসা, হিংসা, দ্বন্দ্ব, কাম ও বিভিন্ন অশোভন ও অবাঞ্ছিত প্রবৃত্তিকে সংযত, সংশোধন ও সেসব থেকে নিবৃত থাকার মহড়া নেয়। ব্যাড হ্যাবিট থেকে গুড হ্যাবিটে উত্তরণের মহড়ায় কে কতটা ফল পায় সেটা নির্ভর করে কে কতটা এতে দিতে পেরেছে। অনেকটা পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবার মতো- যেমন প্রস্তুতি, তেমন ফল। আমি একজনকে জানি, যে ক্যাফিন অ্যাডিক্ট ছিল। দিনে চার-পাঁচবার “ডানকিন ডোনাট্স” ছেড়ে “স্টারবাক্স”-এর কড়া কফি ও দুই লিটারের বড় এক বোতল ডায়েট কোক ছাড়া তার চলত না। একমাস রোজা করার পর সে ঐ বদভ্যাস থেকে সে মুক্তি পেয়েছে। একজন অফিস থেকে ফিরে সন্ধ্যায় খাবার পরপরই শুয়ে পড়ত, সামান্য কিছুক্ষণও বসে থাকতে পারত না। এক মাস ধরে তারাবিহ পড়ার পর তার সে অবস্থাটা গেছে।
ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা ভোর রাত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস করে। অর্থাৎ সারা দিন কেবল “সলিড” খাবারটা না খেয়েই থাকে না, তারা পানি পর্যন্ত খায় না, তা সে মরুভূমিতে রাস্তা বানানো শ্রমিক হোক এবং সেটা জুন-জুলাই মাসের দীর্ঘ দিনের রোজার মাস হোক। আমরা দেখেছি একসময়ের বাস্কেটবলের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় (মোস্ট ভ্যাল্যুয়েবল প্লেয়ার বা এমভিপি) হিউস্টন রকেটের হাকিম ওলাজুয়ান (নাইজেরিয়ান) রোজা রাখা অবস্থায় বাস্কেট বল গেম খেলত। ঠিক ইফতারের সময় মিনিট পাঁচ-সাতেকের ব্রেক নিয়ে রোজা ভেঙ্গে আবার মাঠে নেমে পড়ত। এবং ঐ শরীর নিয়ে দলকে জিতিয়ে নিয়ে চলত। এ বছর সবেমাত্র শেষ হওয়া ফুডবল ওয়ার্ল্ড কাপেও দেখা গেল মুসলমান খেলোয়াড়রা রোজা রেখেই এত ইম্পর্ট্যান্ট ম্যাচ খেলছে।
“লেন্ট” বা “উপবাস”জাতীয় জিনিস প্রকারান্তরে প্রায় সব ধর্মেই আছে এবং কৃচ্ছতার পরিমাপের স্তরেরও বিভিন্নতা আছে। কিন্তু পানিও চলবে না, এমন উপবাস বিরল। আর টানা একমাস ধরে লাগাতার সিয়াম, উপবাস বা ফাস্টিং আর কোনো ধর্মেই নেই। আর একটা বিশেষ তফাত হলো, কামজাতীয় প্রলুব্ধির দৃষ্টিতে অন্য নারীর দিকে তাকানো তো দূরের কথা, রোজা থাকাকালীন সেটা স্বামী-স্ত্রীর জন্যও মানা। সঙ্গম তো হনুজ দূর অস্ত। রোজা আছে বলে দিনের বেলা নিজের স্ত্রীর সঙ্গেও সহবাস চলতে পারবে না– এটা চিন্তা করাও পশ্চিমাদের চোখে একটা বিরাট ব্যাপার। তাই ইসলামী “ফাস্টিং” প্রসঙ্গে তাদের সকল বর্ণনায় ও লেখনীতে “নো সেক্স” কথাটা উল্লেখ করতে তারা কখনই ভুল করে না। থাক রোজার কথা, ঈদের কথায় আসি।
ঈদুল ফিতরের ব্যাপারে খোদ কিছু মুসলমানদের মধ্যে এবং এই ধর্মের বাইরের মানুষদের নানা প্রকার ধারণা ও মতামত আছে। আমাদের ছোটবেলায় অন্তত পশ্চিমবঙ্গের অমুসলিমদের ধারণা ছিল (এখন বদল হয়েছে কিনা জানি না), মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব মহরম। এই ধারণাটা এসেছে মনে হয় দৃশ্যগত দিক থেকে। কারণ ঈদের নামাজ সেই সকালবেলায় হয়ে যায়। তারপর খাওয়া-দাওয়া যা কিছু সেটা কেবল মুসলমানদের বাড়িতে বাড়িতে হতো। বাইরের লোকদের বোঝার উপায় ছিল না। ঈদুল আজহাতেও তাই। নামাজের পর কোরবানি দেওয়া হতো। তাও অনুষ্ঠিত হতো মুসলমানদের এলাকায়। অন্যদের চোখে সে জিনিস পড়ার কথা নয়। অথচ ছোটবেলায় আমরা দেখতাম প্রতিটি গ্রামে মহরম উপলক্ষে এক মাস ধরে লাঠি খেলা হতো। দিনের চেয়ে খেলা বেশি জমত রাতের বেলা, চাঁদের আলোয়। চাঁদ না থাকলে হ্যাজাক জ্বালিয়ে। এক গ্রামের দল আবার অন্যান্য গ্রামে যেত পাড়াতে পাড়াতে অথবা বাড়িতে বাড়িতে খেলা দেখাতে। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সব বাড়িতেই। বিশেষ করে তাদের হিন্দু জমিদার বা অবস্থাপন্ন হিন্দু বাড়িতে যাবার ঝোঁক বেশি ছিল। কারণ মুসলমানদের তুলনায় তাদের অবস্থা সমৃদ্ধ ছিল। দানধ্যানের ব্যাপারেও তারা অনেক উদার ছিল। ওখানে গেলে তারা অনেক পয়সাকড়ি নজরানা দিত। চাল, ডাল, আলুটা বেগুনটা দিত পরে রান্না করে খাবার জন্য, আর মুড়ি-মুড়কি, পাটালি, বাতাসা, নারকেলের নাড়ু ও জল দিত তখন তখনই খাবার জন্য। লাঠিয়ালরা সাধারণত গরিব শ্রেণী থেকে আসত। সারা দিন অনেক হাঁটাহাঁটি করে ও বার বার খেলে তারা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ত। ওই খাওয়াটা তাদের কোমরে আবার বল এনে দিত। খেলায় অনেকটা পুজোর মতো ঢোল কাঁসি বাজানো হতো। লাঠিয়াল ও তাদের সঙ্গীরা সেই ঢোল কাঁসির তালে তালে নেচে নেচে পথ চলত। আবার তারা জাতে মাতাল, তালে ঠিক ছিল। অর্থাৎ মসজিদের কাছে এলে ঢোল-কাঁসি সব বন্ধ। তারপর মসজিদ পেরিয়ে কিছু দূর যাবার পর আবার বাজনা শুরু হতো। একমাস পর, মহরমের দিন অঞ্চলের বিরাট একটা মাঠে মেলা বসত। প্রত্যেক গ্রামের দল সঙ্গে একটা “তাজিয়া” বা “গোমরা” বয়ে নিয়ে এসে সেই মাঠে জমায়েত হতো। তারপর এক গ্রামের লাঠিয়াল ও অন্য গ্রামের লাঠিয়ালদের মধ্যে লাঠির লড়াই হতো। বেশির ভাগ সময়ে মেলা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হতো। আবার কেউ কেউ গোপনে তাড়ি খেয়ে এসে মাতাল অবস্থায় লাঠি চালাতে গিয়ে তাল হারিয়ে ফেলত।
এই নিয়ে মারামারি, লাঠালাঠি ও শেষ পর্যন্ত গ্রামে গ্রামে দলাদলি পর্যন্ত গড়াত। মেলায় মিষ্টির দোকান, নানা খাবার, বিশেষত তেলেভাজার দোকান, আইসক্রিম, লটারি, নাগরদোলা ও বাচ্চছাদের খেলনা, মেয়েদের চুড়ি, আলতা ও কৃত্রিম গহনার দোকান বসত।
কলকাতা শহরেও বিরাট বিরাট শোভাযাত্রা হতো। তবে সেগুলোর ধরণ ছিল আলাদা। খেলা বা উত্তেজনার বদলে তা ছিল দুঃখের ও শারীরিক কষ্টের। কোনো ঢোল-কাঁসি বাজত না। শোভাযাত্রার লোকেরা “হায় হোসেন, হায় হোসেন” বলে চিৎকার করত। লাঠি, বেত ও ছোট ছোট ছুরি, সাইকেলের চেনে বান্ডিল করে বেঁধে নিজেরাই ঐ “হায় হোসেন, হায় হোসেন” বলতে বলতে নিজেদের পিঠে অনর্গল মেরে মেরে রক্ত ঝরিয়ে রাস্তা চলত। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে ছাদের উপর থেকে, উপরের তলার জানলা খুলে বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সবাই সেই শোভাযাত্রা দেখত। সেজন্যই মহরমকে তারা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব ভাবত। তখন আমরা জানতাম গ্রামের মহরম ও শহরের মহরম আলাদা। শিয়া-সুন্নি বলে কিছু আছে ও তারা দুভাবে মহরম করে, সে সম্বন্ধে কোনো ধারণাই ছিল না। ভারতের আর বড় শহরের মহরমও একইভাবে পালা হতো। বাংলার বাইরে অন্য রাজ্যের গ্রামের মহরম কেমন হতো তা জানার সুযোগ আমাদের ছিল না।
মহরম বাদ দিলেও বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে ঈদুল ফিতর নিয়ে দু ধরনের ধারণা ও মতামত আছে। আগের দিনের কথা বাদ দিলেও আজকের দিনেও একদল মনে করেন ঈদুল ফিতরই মুসলমান ধর্মের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান। কারণ এটা একমাস ধরে সিয়াম ব্রত পালন করে অনেক কষ্ট করে পাওয়া দিন। সেজন্য সব কিছুতেই বিশেষ আয়োজন। হরেক কিসিমের অঢেল খাওয়া দাওয়া, চাঁদ দেখার উত্তেজনা, আবার অনেকটা ক্রিসমাস, দুর্গাপূজা বা দেওয়ালি উৎসব পালনের মতো নতুন নতুন ডিজাইনের সাজপোশাক, পত্রপত্রিকায় বিশেষ ঈদ সংখ্যা, টিভি, নাটক, সিনেমা, গানের নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি ও পরিবেশনা। ঈদের আগে, রোজার মাসে অনেক মুসলিমপ্রধান দেশে অফিস-আদালতের সময় পুনর্নির্ধারণ করা হয়। অনেক দেশে দিনের বদলে রাতে অফিস চলে।
সারা রমজান মাস ধরে দান-ধ্যান করলেও ঈদের দিন বাধ্যতামূলক দান, “ফিৎরা” দিতে হয়। ঈদের নামাজের পর পরস্পর কোলাকুলি, বাড়িতে বাড়িতে কুশল বিনিময় করতে যাওয়া, ভূরি ভোজন, নানা ধরণের মিষ্টান্ন বিতরণ ও বাচ্চাদের “ঈদী” বা ঈদের খুশিতে অল্প টাকাপয়সা উপহার দেওয়া। সরকার ও আপামর জনসাধারণের এত আয়োজন দেখে বুঝতে বাকি থাকার কথা নয় যে, এটাই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
কিন্তু আর এক গ্রুপের মত অনুযায়ী বকরিদ বা ঈদুল আজহাকে বড় ঈদ বা “গ্রেটার ঈদ” ও ঈদুল ফিতরকে দুই ঈদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত ছোট ঈদ বা “লেসার ঈদ” বলে ধরা হয়। তবে একটা ব্যাপারে সবাই একমত। তা হলো, চাঁদ দেখা যাক বা না যাক, ৩০ দিনের বেশি রোজা করা যাবে না। রমজান মাসের পর পয়লা শাওয়াল অবশ্যই রোজা ভাঙতে হবে।
ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়তে যাবার আগে রোজা ভাঙ্গা নিশ্চিত করতে অবশ্যই কিছু (সেমাই) খেয়ে যেতে হবে। ঈদুল আজহাতে সাধারণত নামাজ পড়ার পরে খাওয়ার রেওয়াজ থাকলেও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা দুটোরই শুরু মদিনাতে, মক্কা থেকে হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) হিজরত করার পর। সে সময় মদিনাবাসী বছরে দুটি বিশেষ দিন পালন করত মজা ও আনন্দের জন্য। রাসুলুল্লার মন্তব্য হলো, উৎসব পালনের জন্য আল্লাহতায়ালা দুটি দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন, একটি ঈদুল ফিতর ও অন্যটি ঈদুল আজহা।
আরবি শব্দ ঈদুল ফিতর ছাড়াও বিভিন্ন দেশে দিনটি বিভিন্ন আঞ্চলিক নামে পরিচিত। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে একে হারি লেবারান, হারি রায়া বুকা পুয়াসা; ফিলিপাইনে পাগতাতাপস নং পাগ-আইউনো; সুদানে বোরোবান সিয়াম, তুরস্কে রামাজান বায়রামি, আজারবাইজানে উরুকলুক বায়রামি, কিরগিস্তানে অরোযো মেরাম, পশতুতে কোচনে আখতার, পারসি ভাষায় ঈদ-এ-সায়িদ-এ-ফিতর, উর্দুতে ছোটি ঈদ ও মিঠি ঈদ, বাংলায় রোজার ঈদ, বসনিয়ায় ও ক্রোয়েশিয়ায় রামাযানাস্কি বায়রাম, আলবেনিয়ায় বায়রাম, কুর্দিশ ভাষায় ছেয়না রেমেযানে, স্পেনে ফিয়েস্তা দে লা রুপ্তুরা দেল আইউনো, সোমালিতে সিইদ ইয়ারে, ইথিওপিয়ায় ঈদ-আল-ফাতের, ডাচ ভাষায় সুইকারফিস্ট ও পর্তুগিজে সেলেব্রেসেও দু ফিম দ জেজুম ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার মতই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ঈদুল ফিতর কিছুটা বিভিন্নভাবে উদযাপিত হয়। আঞ্চলিকভাবে কিছুটা তফাৎ থাকলেও উপরের বর্ণনা অনুযায়ী মূল উদযাপনের ধারাটি পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই অনেকটা একই রকম।
মুসলিম ধর্মীয় নেতারা মনে করেন ঈদুল ফিতর বা ঈদ আল-ফিতর এমন একটি উৎসবমুখর আনন্দময় বিশেষ তাৎপর্যময় দিন যার সঙ্গে পৃথিবীর আর কোনো ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহ্যগত উৎসব পালনের দিনের কোনো তুলনা হয় না। নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক ছাড়াও এই দিনটি কেন অদ্বিতীয় ও উপমাহীন তা বোঝাতে তাঁরা এই যুক্তিগুলি পেশ করেন:
১. একমাস ধরে নিয়মিত উপবাস, যড়রিপু থেকে শত যোজন দূরে থাকা, কুচিন্তা ছেড়ে সুস্থচিন্তা, হাজার রকমের দানধ্যান, দুস্থের সেবা, সারা দিন রোজা রাখার পরও গভীর রাত পর্যন্ত কঠিন তারাবি নামাজের উপাসনা, আবার অনেকের রমজানের শেষ দশ দিন সংসারধর্ম সব ছেড়েছুড়ে “এতেকাফ” পালনের জন্য মসজিদে বাস- এত কিছুর পরেই তা আসে। এক মাস ধরে নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে তার এই অর্জন।
২. এদিন সবাই জমায়েত হয়ে একমাস ধরে এই কৃচ্ছ্রসাধনের সুযোগ ও শক্তি দেওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানায়। এই জমায়েত, হৃদ্যতা বিনিময় ও নামাজ অনেকটা সারা বছর ধরে শুক্রবার জুম্মার নামাজের মতো। কিন্তু তার চেয়ে অনেক গুণ বড়, আনন্দঘন ও বৈচিত্র্যময়।
৩. এদিন ধর্মীয় বিধানে অবশ্য দাতব্য ধার্য “ফিতরা” দেওয়া তো হয়ই, তার উপরেও সবাই সামর্থ্য অনুযায়ী নানা ধরনের দান-ধ্যান করে থাকে। খাবার, টাকাপয়সা, কাপড় চোপড়, পড়ার বা চিকিৎসার খরচ, ভাঙ্গা ঘর মেরামত, কাফনের কাপড়– কিছুই বাদ যায় না।
৪. এই দিনটিকে তারা একটা “স্মরণের দিন” হিসেবেও মনে রাখে বা গণ্য করে। তাঁদের সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ তো করেই, তাছাড়া তারা জীবিত ও মৃত আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর কথা স্মরণ করে। অসুস্থ ও পঙ্গুদের সঙ্গে দেখা করে। কাছে বসে কথাবার্তা বলে সহানুভূতি জানায়। মুমূর্ষুদের বা বিষন্নদের চিয়ার আপ করায়। অনেকে ছেড়ে যাওয়া আত্মীয়স্বজনের কবরখানায় যায় ও এই খুশির দিনে তাদের কথাও না ভুলে গিয়ে তাদের আত্মার শান্তির জন্য আল্লার কাছে দোওয়া ভিক্ষা করে।
মোটকথা এটা কেবল বছরের দিনপঞ্জী অনুযায়ী চলে আসা একটা দিনমাত্র নয়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এই দিনটি অর্জন করতে হয়। এবং এটা শুধু সামর্থ্যওয়ালাদের নিছক অঢেল খুশির দিনও নয়। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত-নিপীড়িত, পুঁজিপতি-সর্বহারা, সুখী-দুঃখী, জীবিত-মৃত সবারই সমান অংশ, বলা যায় হক আছে।