পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং শোকের মাস আগস্টের ফাঁদে আটকা পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছয় জেলার সম্মেলন। চলতি বছরের ৮ জুন দলীয় এক বৈঠকে সাত জেলার সম্মেলন হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও বাকিগুলোর সম্মেলন হয়নি। ফলে দলের নেতারা বলছেন, মূলত রমজান, ঈদ এবং শোকের মাস আগস্টের সূচি থাকায় এসব জেলা সম্মেলন করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী পরিবর্তনকে বলেন, “দলের নেতাদের মধ্যে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে এবং কার্যক্রম সুসংগঠিত করতে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো নিয়মিত ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছে। তারা দেশের ৪,৫০০টি ওয়ার্ড, ৫০০টি থানাসহ উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছে। যদি এই পবিত্র মাসে কাউন্সিলের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হতো তাহলে দলের এই ঐক্য করার প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতো।”
জেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, রমজান, ঈদ ও শোকের মাসে যদি কাউন্সিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তবে দলীয় অনেক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারতো। দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা জেলার নেতাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই রমজান ও শোকের মাসে কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির পরিবর্তনকে বলেন, “রোজা, ঈদুল ফিতর এবং আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। তবে পূর্ববর্তী সিডিউল অনুযায়ী সকল থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত এই সম্মেলন সম্পূর্ণ করা আমাদের মতো জেলা পর্যায়ের নেতাদের কাছে অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ এবং আতঙ্কের বিষয় ছিল।”
অপরদিকে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজাল বলেন, “কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা পর্যায়ের নেতাদের সাথে আলোচনা না করেই কাউন্সিলের সময়সীমা নির্ধারণ করেছিল। আমরা এখন পর্যন্ত ওয়ার্ড এবং থানা পর্যায়ের কাউন্সিল শেষ করতে পারিনি। আর ঈদের পরেও আমরা এটি শেষ করতে পারব কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।”
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমেদ টুলু পরিবর্তনকে বলেন, রমজান ও শোকের মাস আগস্টের কারণে কাউন্সিল পেছানো হয়েছে। তবে আশা করছি আগামী সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ আমরা কাউন্সিল শেষ করে ফেলতে পারব।
জানা গেছে, গত ৮ জুন দলটির আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তৃণমূলকে আরও শক্তিশালী ও সংগঠিত করার লক্ষ্যে ২১ জুন থেকে ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে সাতটি সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলাগুলোর মধ্যে ২১ জুন মুন্সীগঞ্জ, ২৬ জুন বরগুনা, ২৭ জুন পটুয়াখালী, ২৮ জুন কিশোরগঞ্জ, ১২ জুলাই ঠাকুরগাঁও, ১৫ জুলাই খুলনা মহানগর এবং ১৯ জুলাই রাজশাহী মহানগর জেলায় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ ও স্থানীয় নেতারা জেলা পর্যায়ের সম্মেলন আপাতত স্থগিত ঘোষণা করেছেন। রমজান, ঈদ এবং শোকের মাস আগস্টকে সামনে রেখে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের আগে আর কোনো কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা না থাকলেও আওয়ামী লীগকে দেশব্যাপী পুনরায় সংগঠিত করতে ডিসেম্বরের মধ্যেই এ সব জেলা সম্মেলন শেষ করা হবে।
সুত্রমতে, আওয়ামী লীগের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ১৯৯৭ সালের পর থেকে কিশোরগঞ্জ, পটুয়াখালিসহ আটটি জেলায় ১৬ বছর ধরে কোনো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। ঠাকুরগাঁও জেলার সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালে। অন্তত ২০ জেলায় এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। প্রায় ৫০০টি উপজেলা ও থানা কমিটির মধ্যে শ’দুয়েক কমিটির কাউন্সিল হয়েছে। ১৫ জেলা কমিটির সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক পদে ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে চালানো হচ্ছে। তিনটি জেলায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুটি পদেই আছেন ভারপ্রাপ্ত।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ পরিবর্তনকে বলেন, “রোজা এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার এই শোকের মাস আগস্টকে সামনে রেখে আপাতত কাউন্সিল স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই অবশিষ্ট কাউন্সিলগুলো শেষ করা হবে।”
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সেনা অভ্যুথানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যেরকে হত্যা করা হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আগস্ট মাসকে শোকের মাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তার পর থেকেই প্রতিবছর এই মাসটি শোকের মাস হিসেবে পালান করে আসছে আওয়ামী লীগ।