গ্রিসে ২৮ বাংলাদেশী অভিবাসী কর্মীর ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করার মামলায় অভিযুক্তদের অব্যাহতি দিয়েছে সেখানকার একটি আদালত। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পরও খালাস করে দেয়া হয়েছে অপরাধীদের। রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত জনতা নজিরবিহীন প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে। শুধু বাংলাদেশীরাই নন স্থানীয় গ্রীকরাও নিন্দা জানিয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শামিল হয়েছেন প্রতিবাদে। নির্মম অন্যায়ের শিকার বাংলাদেশীদের প্রতি আক্রমণাত্মক ও আতঙ্কজনক মনোভাব অবলম্বন করেছে বলে আদালতের প্রতি অভিযোগ তুলেছেন আইনজীবীরা। স্ট্রবেরি ফার্মে কর্মরত ওই বাংলাদেশীদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে আহত করার মামলায় প্রধান আসামি ছিল ওই ফার্মের মালিক ও শ্রমিকদের প্রধান। মানব পাচার সহ আনীত সকল অভিযোগ থেকে তাদের অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। ঘটনাটি গত বছর এপ্রিলের। এথেন্স থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরে নিয়ামানলতার একটি ফলের বাগানে কাজ করতেন প্রায় ৩০০ বাংলাদেশী শ্রমিক। ছয় মাসের বকেয়া বেতনের দাবি জানিয়েছিলেন ওই বাংলাদেশী কর্র্মীরা। এর জবাবে ফার্মের মালিক তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে শটগান দিয়ে গুলি চালায় নিরপরাধ কর্মীদের ওপর। এতে তাদের বেশির ভাগই গুরুতর আহত হয়। সঙ্কটাপন্ন অবস্থা ছিল চারজনের। বৃটেনের ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশী ওই কর্মীদের মতো আরও অনেক কর্মী মানবেতর পরিবেশে কাজ করছেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিনাতিপাত করছেন তারা। গত বছর কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার পর গ্রিসে বিদেশী কর্মীদের দুর্দশার বিষয়টি সামনে আসে। অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন গুলি চালানোর কথা স্বীকার করলেও তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। রায়ে অপর দুই ব্যক্তিকে গুরুতর হামলা ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রাখার দায়ে ১৪ বছর ৭ মাস ও ৮ বছর ৭ মাসের কারাদ- দেয়া হয়। তবে তাদের আপিলের সুযোগ রয়েছে। আপিল করা পর্যন্ত তারাও মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করতে পারবে। ওই ২৮ বাংলাদেশীর হয়ে আদালতে লড়েছিলেন মইসিস কারাবেইয়িদিস। তিনি মামলাটিকে ইউরোপের মানবাধিকার আদালতে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বলেন, আদালতের এ সিদ্ধান্ত নিষ্ঠুরতা আর কলঙ্কের। বুধবার আদালত ভবনের সামনে প্রতিবাদকারীরা জড়ো হয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আদালত প্রাঙ্গণে বাংলাদেশী অভিবাসীদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। গ্রিসের সর্ববৃহৎ শ্রমিক ইউনিয়ন জিএসইই আদালতের রায়ের ব্যাপক নিন্দা জানিয়েছে। জনসাধারণের কাছে ন্যায় ও সুষ্ঠু বিচারের যে ধারণা ও বোধ রয়েছে এটা তার পরিপন্থি বলে তারা মন্তব্য করেছেন। বলেছে, যারা ন্যায্য পাওনা ৬ মাসের বেতন চেয়েছে তাদেরকে গুলি করে আহত করার ঘটনাকে নিতান্ত সাধারণ হামলা বলে আখ্যায়িত করা যায় না। সংস্থাটির সমন্বয়ক পেত্রোস কন্সটান্টিন্যু মামলাটিকে ‘নজিরবিহীন বৈষম্যের কলঙ্ক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। গ্রিসের প্রধান বিরোধী দলের এমপি ভাসিলিকি কাত্রিভান্যু বলেছেন, মানোলাদাতে গুলিবর্ষণের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। তিনি বলেন, আদালত বিদেশী কর্মীদেরকে এ বার্তাই দিয়েছে যে, তারা ফলের বাগানে কুকুরের মতো মরতে পারে।