প্রশাসনযন্ত্রের সব সরকারি কর্মকর্তাকে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। ই-সার্ভিস বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এটা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা (ইউএনও) ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মৌখিক নির্দেশের ভিত্তিতে মাঠ প্রশাসন এ অ্যাকাউন্ট খুলেছে। এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তারা দৈনন্দিন কার্যকলাপ ও সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করছেন। পাশাপাশি জেলা বা উপজেলা অধিবাসীকে আরও বেশি কাছাকাছি নিয়ে আসছেন। মাঠ প্রশাসনের পাশাপাশি সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তাদেরও ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তারা ফেসবুকে থাকা ‘পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন বাংলাদেশ’ নামে একটি গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এই গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি ডিও লেটার পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ‘পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন বাংলাদেশ’ নামের গ্রুপে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ১৪৭ জন সরকারি কর্মকর্তা যুক্ত রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপ-সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব এবং সহকারী সচিবদের মধ্যে যারা এখনও ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলেননি তাদের জরুরি ভিত্তিতে অ্যাকাউন্ট খুলে এই গ্রুপে যোগ দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সমপ্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত একটি ডিও বিভিন্ন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। ডিও লেটারে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ফেসবুকে পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন বাংলাদেশ গ্রুপ খোলা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে নাগরিক সেবায় উদ্ভাবনী সংস্কৃতিকে বেগবান করাই এই গ্রুপের লক্ষ্য। এতে নাগরিক সেবায় উদ্ভাবনী উদ্যোগে উপস্থাপনা, পর্যালোচনা, উদ্ভাবন বাস্তবায়ন বিষয়ক সমস্যা, সমাধান এবং একাধিক নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সংলাপ চলমান রয়েছে। এই গ্রুপে সব সরকারি কর্মকর্তার জরুরি ভিত্তিতে যুক্ত হওয়া দরকার। যেসব দপ্তরে ইতিমধ্যে ফেসবুকে পেজ বা গ্রুপ খোলা হয়েছে, সেখানে তার অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য প্রতি দু-তিন মাসে একবার সোশ্যাল মিডিয়া আড্ডার আয়োজন করা যেতে পারে। এ আড্ডায় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা জেলা প্রশাসনের অভিজ্ঞতা জানার ব্যবস্থা করা সম্ভব’ বলে চিঠিতে বলা হয়েছে। মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কয়েকজন ডিসি’র সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ফেসবুক একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। এ মাধ্যম ব্যবহার করে মাঠ প্রশাসনের অনেক কাজই সহজে করা যায়। সরকারের পাশাপাশি জনগণও উপকৃত হবে। ফেসবুকের সুবিধার কথা জানিয়ে গোপালগঞ্জের ডিসি খলিলুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, উদাহরণ হিসেবে যদি বলেন আমার জেলার উজানি উপজেলার একজন সাধারণ মানুষ আমার কাছে অভাব অভিযোগ নিয়ে পৌঁছাতে সময়সাপেক্ষ বিষয়। কিন্তু তার সমস্যার কথা জেলা প্রশাসনের অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে দিলে সহজেই সমাধান করা হয়। এতে সময় ও অর্থ দুইই বাঁচে। তিনি বলেন, এলাকার সমস্যা দূর করতে ফেসবুক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, সরকারের এ ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই ভাল হবে। কারণ আমরা ফেসবুকে বসে চ্যাটিং বা ছবি আপলোড করতে পছন্দ করি। কিন্তু এই উদ্যোগে ১ পলিটিক্যাল কালা’ দেয়া হলে পুরো প্রশাসনের জন্য তা ভাল ফল বয়ে আনবে না। জনগণের কাছে ভুল মেসেজ যাবে। কারণ সরকারি কর্মকর্তারা কোন দলের নন। তারা দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে কাজ করেন।