মুন্সিগঞ্জের মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথে মাওয়া ঘাটে পদ্মা নদীতে আজ সোমবার শতাধিক যাত্রী নিয়ে পিনাক-৬ নামের একটি লঞ্চ ডুবে গেছে। বেলা একটার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বেশ কয়েকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। উদ্ধারকাজ এখনো চলছে।
বেলা ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লঞ্চটি শরীয়তপুরের কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া লঞ্চঘাটে যাচ্ছিল।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) জানায়, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় প্রচণ্ড স্রোতের কবলে পড়ে লঞ্চটি ডুবে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উদ্ধার অভিযান শুরুর পর বেলা সোয়া ১টার দিকে নদী থেকে অজ্ঞাত পরিচয় দুই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়, যাদের মধ্যে একজনের বয়স আনুমানিক ৫০, অন্যজনের ৩৫ বছর।
বিআইডব্লিউটিসির মাওয়া অঞ্চলের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) আবদুল আলীম বলেন, লঞ্চটি মাওয়া আসার পথে মাঝনদীতে ডুবে যায়। । বেলা দেড়টার দিকে তিনি বলেন, উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম ঘটনাস্থলে যাচ্ছে।
লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে জীবিত ব্যক্তিদের উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। কতজনকে উদ্ধার করা হয়েছে বা কতজন নিখোঁজ রয়েছেন, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থল থেকে ১১০ জন যাত্রীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণেই লঞ্চটি ডুবে গেছে বলে উদ্ধার পাওয়া আরেক যাত্রী বলেন।
লঞ্চডুবির সময় পাশ দিয়ে যাওয়া একটি ফেরি থেকে মোবাইল ফোনে এক ব্যক্তি একটি ভিডিও ধারণ করেন, যা পরে গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে আসে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মাঝারি আকৃতির দ্বিতল লঞ্চটি এক দিকে কাত হয়ে যায় এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে প্রবল ঢেউয়ের মধ্যে তলিয়ে যায়।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়েই মাওয়া ও কাওড়াকান্দি ঘাটে ভিড় করেন পিনাক-৬ লঞ্চের যাত্রীদের স্বজনেরা। তাদের কান্নায় পদ্মার তীরে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে।
দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্ত ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় দুটি তদন্ত কমিটি করেছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান।
তিনি জানান, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের চার সদস্যের তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে আছেন সংস্থার প্রকৌশলী (শিপ সার্ভেয়ার) নাজমুল হক। আর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাত সদস্যের কমিটির প্রধান করা হয়েছে যুগ্ম সচিব নুরুর রহমানকে।
এর আগে গত ৩১ জুলাই সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদীতে নৌকাডুবে আট জনের মৃত্যু হয়। তার দুই দিন আগেই কুষ্টিয়ার পদ্মা নদীতে নৌভ্রমণে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় ১১ জনের।
এছাড়া গত ১৫ মে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার দৌলতপুরের কাছে মেঘনা নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে এমভি মিরাজ-৪ নামে একটি লঞ্চ ডুবে যায়। ওই ঘটনায় নদী থেকে মোট ৫৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।