কটিয়াদী ,(কিশোরগঞ্জ)থেকে সুবল চন্দ্র দাস ঃ
কিশোরগঞ্জ শহরের এ পুকুরে দুরন্ত কৈশোরে সাঁতার শিখেছি। সারাদিন দাপিয়ে গোসল করেছি। এ পুকুরকে কেন্দ্র করে সাঁতার কেটে শরীরচর্চার কাজটিও সেরেছি। আমার পাঁচ দশকের অধিক সময় এভাবেই চলছে। পুকুরটি এলাকার বাসিন্দাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রতিদিন শত শত মানুষ পুকুরটিকে গোসলসহ নানা কাজে ব্যবহার করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে ড্রেনের পানি ও আবর্জনায় পুকুর ভরে পানি দূষিত হয়ে পড়ায় মানুষের গোসল বন্ধ হয়ে গেছে। পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে পুকুরটির বর্তমানে এ অবস্থা। পুকুর সংলগ্ন বাড়ির মালিক সংস্কৃতিকর্মী কামরুজ্জামান লস্কর পৌরসভা নিয়ন্ত্রিত শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী খড়মপট্টি বড়পুকুর সম্পর্কে আবেগতাড়িত হয়ে এভাবেই কথাগুলো বলেন। শোলাকিয়া, খড়মপট্টি এলাকার বাসিন্দাসহ আশপাশের দুই সহস্রাধিক পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ নিয়মিত গোসলের কাজটি করে আসছেন জেলা শহরের খড়মপট্টি বড়পুকুরে। গত দুই মাস ধরে পানি দূষিত হওয়ায় মানুষ গোসল করা বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ পানিতে নামলেই চর্মরোগ দেখা দেয়। এতে শত শত মানুষ গোসল করতে না পেরে চরম বিপাকে পড়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্টেডিয়াম থেকে হায়দার গলি, শহীদ খায়রুল গলির ড্রেনের ময়লা পানি রাস্তায় উপচে খড়মপট্টির সরকারি পুকুরে পড়ে। ড্রেনের দুর্গন্ধময় পানিতে পুকুর ভরে যায়। আবার অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পুকুরের পানি উপচে পুকুর সংলগ্ন শতাধিক বাড়িতে ওঠে। ঈদের দু’দিন আগে প্রবল বৃষ্টি হওয়ায় পুকুরের পানি উপচে শতাধিক বাড়িতে প্রবেশ করায় ৩০টি পরিবারের ঈদ আনন্দ মাটি হয়ে যায়। দেশের প্রবীণ ক্রীড়া সংগঠক এমএ বারী খান জানান, দুই দশক আগেও খড়মপট্টি বড়পুকুরে আন্তঃস্কুল ও আন্তঃকলেজ সাঁতার প্রতিযোগিতা নিয়মিত হয়েছে। এ পুকুরে কিশোরগঞ্জের জাতীয় সাঁতারুদের জন্ম হয়েছে। অথচ পুকুরটির বর্তমান অবস্থা সত্যিই দুঃখজনক। পানি দূষিত হওয়ায় সাঁতার প্রতিযোগিতা বন্ধ। পৌরসভা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে পুকুরটির অস্তিত্ব ধ্বংস হওয়ার পথে। সাঁতারু মুনসুর আলম বুলবুল ও আবুল হাসান লাক্কু বলেন, খড়মপট্টির সরকারি বড়পুকুরে সাঁতারে তাদের হাতেখড়ি। এ পুকুরে সাঁতার শিখে তারা জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছেন। পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় পুকুরটি আজ মরতে বসেছে। পরিবেশ রক্ষা মঞ্চের (পরম) সভাপতি অধ্যক্ষ শরীফ সাদী বলেন, গত আড়াই দশকে শহর ও আশপাশ এলাকার ৫০টি পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। পুরো শহরে বাতিঘরের মতো শতাব্দীপ্রাচীন খড়মপট্টির সরকারি পুকুরটি বেঁচে ছিল। পুকুরটি ধ্বংসের জন্য একমাত্র দায়ী পৌর কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. নৌশাদ খান জানান, পুকুরটি ঘিরে অনেক আবেগ-অনুভূতি জড়িত। এলাকার বাসিন্দা হিসেবে একসময় আমিও গোসল করেছি এ পুকুরে। পুকুরের পানি বিষ হয়ে গেছে। পানিবাহিত রোগ ছড়াবে এ পানি। এলাকার কাউন্সিলর হানিফ উদ্দিন রনক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পুকুর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পরবর্তী সভায় বিষয়টি উত্থাপন করব। আশা করি, সমাধান হয়ে যাবে। পৌর মেয়র মো. মাজহারুল ইসলাম কাঞ্চনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।