ঢাকা: এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের(এডিবি) ঋণ ও নেদারল্যান্ডস সরকারের অনুদানে নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষার্থে ৮২৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। ‘ফ্লাড অ্যান্ড রিভারব্যাংক ইরিজোন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কয়েক ধাপে এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পে ৪৮০ কোটি টাকা সহায়তা করবে এডিবি। এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার এডিবি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের(ইআরডি) মধ্যে একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পরেই ঋণচুক্তিতে সম্মত হতে যাচ্ছে সংস্থাটি।
প্রকল্প ও ঋণচুক্তি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, প্রকল্পটি একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু এডিবি’র সঙ্গে আমাদের নেগোসিয়েশন ছিল প্রকল্প পাশের পরেই তারা ঋণচুক্তি সই করবে। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার এডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি হবে।
প্রকল্পের আওতায় মূলত জমি অধিগ্রহণ, বাঁধ নির্মাণ, নদী তীর সংরক্ষণ, রেগুলেটর নির্মাণ, মেরামত, যানবাহন ক্রয়, ল্যান্ড রিকভারি পাইলট পার্ক ওয়ার্ক, এডাপটিভ প্রোটেকশন অ্যান্ড ইমারজেন্সি এবং পরামর্শক সেবা, সমীক্ষা-গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ প্রদান কাযর্ক্রম করা হবে।
প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে এডিবি’র ঋণ ৪৮০ কোটি টাকা, নেদারল্যান্ডস সরকারের অনুদান ১২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং সরকারি অর্থ ২২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল এপ্রিল’২০১৪ থেকে ডিসেম্বর ২০১৮ সাল নাগাদ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর ও চৌহালি উপজেলা, টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলা এবং মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয়, জাফরগঞ্জ, দৌলতপুর ও হরিরামপুর উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। বাঁধ নির্মাণ ও নদীর তীর সংরক্ষণের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা হবে।
প্রকল্পের অর্থায়ন প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ(ইআরডি) জানায়, ৮২৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ের মধ্যে এডিবি’র ঋণ ৪৮০ কোটি, নেদারল্যান্ডস সরকারের অনুদান ১২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং সরকারি অর্থ ২২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এডিবি’র ঋণের বিপরীতে সুদের হার ২ শতাংশ এবং ঋণের মেয়াদ ৫ বছর গ্রেস প্রিয়ডসহ ৩০ বছর।
ইআরডি’র প্রতিনিধি জানান, প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পে এডিবি অর্থায়নে সম্মতি দিয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে নেগোসিয়েশনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়া গেছে। একনেক কর্তৃক প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পরেই এডিবি’র সঙ্গে বৃহস্পতিবার ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
প্রকল্পে ১০০ জন জনবলের মধ্যে ৯১ জন জনবল প্রেষণে এবং ৯ জন সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে কাজ করার সংস্থান রাখা হয়েছে। প্রথম ধাপে প্রকল্পের আওতায় ২৩ কিলোমিটার বাঁধ এবং ১৫ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণের জন্য ১৩৬ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৫টি জিপ, ১০টি মোটরসাইকেল এবং ১টি স্পিডবোট সংস্থান রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হবে। এর মধ্যে অন্যতম শুষ্ক মৌসুমে ভাঙ্গন পূর্বাভাস প্রদান, বন্যা মৌসুমে ব্যপকভাবে নদীর জরিপ কাজ সম্পাদন, জরুরি কাজে সহায়তা ও তাৎক্ষণিকভাবে তা বাস্তবায়নের জন্য নদী তীরের সন্নিকটে জিও-টেক্সটাইল ব্যাগ মজুদ রাখা।
এছাড়া বন্যার আগেই পানির নিচের অংশ নদী তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়নের জন্য বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নিক্ষেপ করা হবে। পরবর্তী শুষ্ক মৌসুমে অবশিষ্ট সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়ন করা এবং নদীর তীর ভাঙ্গন চলমান থাকলে বিদ্যমান কাজ থেকে নদীর গভীরতম সমতল পযর্ন্ত বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া প্রকল্পের অাওতায় নদীতীর সংরক্ষণ কাজের দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য একটা কাযর্করী পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে। সনাতন পদ্ধতিতে পানির নিচের অংশ সিসি ব্লক নিক্ষেপ করে তীর সংরক্ষণ কাজে ব্যগ ব্যবহার করা।