ধীরে চলার নীতিই বেছে নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বারবার ঈদের পর আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিলেও দৃশ্যত এখনই সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কোন কর্মসূচি দেয়ার পক্ষপাতি নন তিনি। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সর্বশেষ আলোচনাতেও খালেদা জিয়ার এ অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে ধীরে ধীরে রাজপথে নামার উপায় খুঁজছে বিএনপি। কৌশলের অংশ হিসেবেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে শনিবার ঢাকায় ব্যাপক শোডাউন করা হয়েছে। সাত মাস পর রাজপথে সরব উপস্থিত ছিল বিএনপি নেতা-কর্মীদের। ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর এটাই ছিল রাজপথের প্রথম কর্মসূচি। এতে মহানগরের প্রায় সব ওয়ার্ড থেকেই নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এ বিপুল অংশগ্রহণে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছেন। সম্প্রচার নীতিমালার প্রতিবাদে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশেও বিপুল সংখ্যক কর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। আন্দোলন কৌশল নিয়ে গত কয়েক দিনে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের প্রায় সব নেতার সঙ্গেই কথা বলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এসব বৈঠকে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া জোরদার নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরেই বিএনপির নীতিনির্ধারকরা দল পুনঃগঠন নিয়ে কাজ করছেন। তবে ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমিটি গঠন ছাড়া দৃশ্যত এ উদ্যেগ এখনও তেমন সাফল্য পায়নি। আহ্বায়ক কমিটিতে মির্জা আব্বাস এবং হাবীব-উন নবী খান সোহেলের মধ্যকার দ্বন্দ্বের বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে। মহানগর কমিটির এক নেতা জানিয়েছেন, এটা বড় কোন সমস্যা নয়। হাবীন-উন নবী খান সোহেলের সদস্য সচিব হওয়ার ব্যাপারে মির্জা আব্বাস অবগত ছিলেন না। এ কারণে তিনি কিছুটা রুষ্ট হন। তবে খালেদা জিয়ার নির্দেশনার পর বিষয়টি এখন অনেকটাই মিটে গেছে। বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলো পুনর্গঠনের কাজও চলছে পুরোদমে। যুবদলের নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই এ কমিটি ঘোষণা হবে। অতীতে বিএনপির সব ক’টি আন্দোলনে সামনের কাতারে থাকা ছাত্রদলকে বিগত সরকার বিরোধী আন্দোলনে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগও নিয়েছেন খালেদা জিয়া। তবে সিনিয়রদের মধ্য থেকেই নতুন কমিটি গঠন করা হবে নাকি নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হবে- এ নিয়ে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। নীতিনির্ধারকদের একটি অংশ নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের পক্ষে থাকলেও অতীতে ছাত্রদলের কমিটি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা নেতারা সিনিয়রদের মধ্য থেকেই ছাত্রদলের নেতৃত্ব বাছাইয়ের পক্ষে। বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে কোন সমন্বয় না থাকার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। বিশেষ করে ছাত্রদলের বর্তমান নেতৃত্ব ছাত্র শিবিরের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কোন আন্দোলনের পক্ষে ছিল না। এ সমন্বয় না থাকা বিগত আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকরা। ছাত্রদল, শিবিরসহ সরকারবিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলোর সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের কমিটি গঠনের একটি প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। সহযোগী সংগঠনগুলো পুনর্গঠনের কার্যক্রম এগোতে থাকলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তনের আভাস এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারমুক্ত হবেন কিনা তা-ও কেউ খোলাসা করে বলতে পারছেন না। তার কৌশল নিয়ে দলের ভেতরেই সমালোচনা রয়েছে। বয়সসহ নানা কারণে স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য এখন তেমন কোন ভূমিকা পালন করতে পারছেন না। এ কারণে সাবেক আমলাদের একটি গ্রুপ দলের নীতিনির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখছেন। তবে এরপরও স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠনের কোন খবর পাওয়া যায়নি। তিন দশকের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় এবার সরকার বিরোধী আন্দোলনে কোন তাড়াহুড়া করছেন না খালেদা জিয়া। সংগঠন গুছিয়েই সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে চান তিনি। দলের প্রায় সব পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা বিচারাধীন থাকার বিষয়টিও বিএনপির নীতিনির্ধারকদের বিবেচনায় রয়েছে। প্রায় সব নেতাকেই প্রতি সপ্তাহে আদালতে হাজিরা দিতে হয়। রাজপথে নামলেই গুলি আর গুম-খুনের বিষয়টি তো আছেই। এসব বিবেচনায় আঘাত আসলেই যেন জবাব দেয়া যায় এমন প্রস্তুতি সম্পন্ন করেই আন্দোলনে নামার পক্ষপাতি বিরোধী জোটের নীতিনির্ধারকরা। এমন প্রস্তুতি নিতে শীর্ষ পর্যায় থেকে এরই মধ্যে নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দুই-থেকে তিন মাস জনসংযোগমূলক কর্মসূচি শেষেই আন্দোলন জোরদার করবে বিএনপি।