অবশেষে স্বজনদের লাশ বুঝিয়ে দিয়েছে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল রাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত আসলামের লাশ তার স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়। তবে আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে আসলামের পরিবারকে ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। গতকাল লাশ হস্তান্তরের সময় ৪৪ হাজার টাকা দেয়া হয়। এছাড়া আগামী শনিবার এক লাখ টাকা পরিশোধ করার শর্ত দেয়া হয়। পরে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে হাসপাতাল থেকে আসলামের লাশ নিয়ে যান স্বজনরা। গত শুক্রবার গভীর রাতে ব্যবসায়ী আসলাম (৫৪) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান। মৃত ব্যক্তির চিকিৎসা বাবদ স্বজনদের কাছে প্রায় ৩১ লাখ টাকার একটি বিল দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বজনরা ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করে বাকি টাকা পরে দেয়ার শর্তে লাশ নিয়ে যেতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়। গত দু’দিন ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিল না দেয়ায় আসলামের লাশ আটকে রেখেছিল। মৃত আসলামের মেয়ে সাদিয়া ইসলাম জানান, লাশ আটকে রাখার বিষয়টি মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু শর্তে লাশ হস্তান্তর করেছে। এছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মোট বিল থেকে ৬ লাখ টাকা ছাড় দিয়েছে। বাকি টাকা আগামী ৬ মাসের মধ্যে পরিশোধের শর্ত দিয়েছে।
আসলামের স্বজনরা জানান, ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আসলামকে গত ৩রা জুলাই বারিধারার ইউনাইটেড হসপিটালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়। ডা. কায়সার নাসিরুল্লাহর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছিল তার। ভর্তির পর কয়েক ধাপে গত ২৬শে জুলাইয়ের মধ্যে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ১২ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেন। গত শুক্রবার রাতে আসলামের মৃত্যুর পর স্বজনরা বিল সেকশনে গিয়ে জানতে পারেন ৩২ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করে লাশ নিতে হবে। বিল না দেয়া পর্যন্ত লাশ দেয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অমানবিক এ আচরণের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছুটা নমনীয় হয়ে আজ লাশ দিতে রাজী হন। গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, পুলিশের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ছয় কিস্তিতে জানুয়ারি মাসের মধ্যে মৃতের স্বজনেরা হাসপাতালের বকেয়া পরিশোধ করবে। এদিকে গতকাল সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতালের লাশ আটকে রাখার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে লাশটি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ইউনাইটেড বারবার রোগীর পরিবারকে বলেছে, বিল বেড়ে যাচ্ছে। যেহেতু আশা করে রোগীর পরিবার অপেক্ষা করছিলেন, আমার বিশ্বাস তারা হয়তো টাকা দিতে পারবে। আর না দিতে পারলে মাফ করে দিলে অসুবিধা কি? মন্ত্রী বলেন, হাসপাতাল পরিচালনা একটি সেবা- ইউনাইটেডকে সে কথাও মনে রাখতে হবে।