চট্টগ্রামে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানোর সময় এক নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ওই শিশুর পরিবার ডাক্তারদের দায়ী করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। গতকাল দুপুরে নগরীর প্রেস ক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নবজাতকের চাচা মো. আরিফ। অভিযোগে ভুক্তভোগী পরিবারটি জানান, শিশুটির মায়ের নাম জান্নাতুল নেছা, পিতার নাম মো. ইকবাল। চলতি মাসের গত ১১ই আগস্ট জান্নাতুল নেছাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করান তার স্বামী। সিজারিয়ান অপারেশন করতে গিয়ে নবজাতকের ডান পা ভেঙে ফেলেন এক ডাক্তার। আর ওই ডাক্তারের নাম জিনিয়া। তিনি হাসপাতালের একজন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক। বর্তমানে বিষয়টিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে বলে তারা অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে নবজাতকের চাচা মো. আরিফ বলেন, গত ১১ই আগস্ট রাতে হঠাৎ বেশি ব্যথা অনুভব হওয়ায় ভোর চারটার দিকে আন্দরকিল্লায় অবস্থিত জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে জান্নাতুলকে ভর্তি করি। ভর্তি করার পর হাসপাতালের ডাক্তার তার শরীরে একটি ইনজেকশন দেন। পরে তার ব্যথা ওঠে। পরের দিন দুপুর একটার দিকে ডাক্তার জানান জান্নাতুলের পজিশন ভাল আছে, তবে তিনি ডেলিভারির লোড নিতে পারছেন না বলে জানান। এ সময় তিনি আরও বলেন, তাকে সিজারিয়ান অপারেশন করাতে হবে। পরে বিকাল পাঁচটার দিকে অপারেশন করার পর ডাক্তার আমাদের বলেন, একটি মেয়ে সন্তান হয়েছে। এমন সংবাদ শোনার পর মেয়েটিকে দেখতে যাই। কিন্তু এ সময় দেখি মেয়েটির বাম পা নড়াচড়া করলেও ডান পা একেবারেই করছে না। বিষয়টি সন্দেহ হলে তা ডাক্তারকে জানালে তিনি নবজাতক মেয়েটিকে তাড়াতাড়ি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। এর আগে শিশু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মেসবাহ নামের এক চিকিৎসককে মেয়েটিকে দেখানো হয়। তিনি দেখার পর মেয়েটিকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললে তাকে চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে সেখানে এক্স-রে করে দেখা যায় মেয়েটির ডান পা ভাঙা। পরে এই এক্স-রেটি অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল বশরকে দেখানো হলে তিনি বলেন, এটি কোন ভাল মস্তিষ্কের মানুষের কাজ নয়। কোন হাতুড়ে ডাক্তার এমন কাজ করেছেন। একজন ভাল চিকিৎসক কখনও এমন কাজ করতে পারেন না। যে ডাক্তার অপারেশন করেছেন তিনি হয়তো টান দিয়ে পেট থেকে বাচ্চাটিকে বের করার চেষ্টা করেছেন। এ কারণে হয়তো কোন একসময় বাচ্চাটির একটি পা ভেঙে যায়। একজন আনাড়ি ডাক্তারের পক্ষেই কেবল এ ধরনের কাজ সম্ভব। পরে বিষয়টি রেড ক্রিসেন্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয় উল্লেখ করে নবজাতকের পিতা মো. ইকবাল বলেন, পা ভাঙার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তারা আমাদের একটি আবেদন করতে বলেন। আবেদন করার পর বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তারা আমাকে জানান। তবে সংবাদ সম্মেলন করার পর গতকাল এ বিষয়ে মানবজমিন থেকে ফোন করা হয় জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক আলী আসগরের কাছে। তিনি বলেন, আমি কিছু জানি না। আপনারা হাসপাতালের চেয়ারম্যান শেখ শফিউল আজমের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তিনি হয়তো বিষয়টি জানতে পারেন। অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য হাসপাতালে ফোন করা হলে ডা. জিনিয়া কোন কথা বলবেন না বলে সংশ্লিষ্ট অপরারেটরকে জানিয়ে দেন। তার মোবাইল ফোনটিও দুপুরের পর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। সূত্র জানায়, এ ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিভিল সার্জন কার্যালয় ও জেমিসন হাসপাতালের একজন করে চিকিৎসক। শিগগিরই তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবেন।