সুন্দরবনে দুই কোস্টগার্ড ও এক র্যাব সদস্যকে হত্যার দায়ে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৭ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন বাগেরহাটের একটি আদালত।
মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক এস এম সোলায়মান এই রায় ঘোষনা করেন।
রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত ৭ জনের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দুই আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার সময় মামলার ১৫ আসামির মধ্যে খালাসপ্রাপ্ত বাদে বাকিরা সবাই পলাতক ছিলেন।
ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্তরা হলেন- বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার গামগাছিয়া এলাকার মৃত লুৎফর শেখের ছেলে রফিকুল শেখ, ফজলু শেখের ছেলে কুদ্দুস শেখ ও ইদ্দিস শেখ, সুলতাল শেখের ছেলে বাবুল শেখ, এই উপজেলার খালকুলিয়া এলাকার তাহের ফকিরের ছেলে আলতাফ ফকির ও আব্দুল বারেক শেখের ছেলে ইলিয়াস শেখ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্তরা হলেন- একই উপজেলার গাবগাছিয়া এলাকার হাফেজ উদ্দিন শেখের ছেলে রিয়াজুল শেখ, ফজলু শেখের ছেলে আকরাম শেখ, হোসেন শেখের ছেলে আলম শেখ, মৃত ইসতাজ আলী শেখের ছেলে বাদশা শেখ, দেলোয়ার শেখের ছেলে জামাল শেখ ও কামাল ওরফে সুমন শেখ এবং খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার হাগলা ডাঙ্গা এলাকার আসলাম শেখ।
এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এই মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামি আসলাম শেখ ও সামছু শেখকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। তাদের বাড়ি খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার হাগলা ডাঙ্গা গ্রামে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর সুন্দরবনের পশুর নদীর একটি খালে বনদস্যু সদস্যরা ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন খবরের ভিত্তিতে তৎকালীন র্যাব-৬ এর অধিনায়ক মেহেদি হাসান এবং কোস্টগার্ডের লে. কর্নেল সিদ্দিকের নেতৃত্বে একটি যৌথদল অভিযানে যায়।
ঘটনাস্থালে পৌঁছালে রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। এক পর্যায়ে র্যাব ও কোস্টগার্ড ডাকাতদের আটক করতে গেলে ডাকাতরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওই ৩ সদস্যদের নিয়ে নদীতে লাফিয়ে পড়ে। এই ঘটনায় তৎকালীন র্যাব-৬ এর পিসি মো. কাঞ্চন (৪৮) এবং কোস্টগার্ডের এম এইচ কবির ও এম এ ইসলাম নিখোঁজ হন। ২ ডিসেম্বর ওই এলাকা থেকে এম এ ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয় এবং পরে বাকি দুজনের লাশও নদী থেকে উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় র্যাব-৬ এর তৎকালীন ডিএডি মো মোহাসিন আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে ২ ডিসেম্বর মংলা থানায় মামলা করেন।
মামলার পর আসামি বাদশা ও জামাল পুলিশের হাতে আটক হয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এরপর ২০০৭ সালের ৮ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মংলা থানার তৎকালীন এসআই মো নাসির উদ্দিন আদালতে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। আদালত মামলার শুনানি, ১১ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য এবং তথ্য প্রামাণাদির ভিত্তিতে এই রায় দেওয়া হয়।