যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে অস্ত্র ছাড়া রাজপথে এসে বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
সোমবার রাতে চেয়ারপার্সনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রংপুর বিভাগীর বিএনপিপন্থি চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়াম্যানদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
‘বিএনপি আন্দোলন করতে জানে না’- আওয়ামী লীগের নেতাদের এই বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, “যুবলীগ ও ছাত্রলীগ অস্ত্র ছাড়া রাজপথে আসুক, দেখি কারা আন্দোলন করতে জানে। পুলিশকে আন্দোলনে গুলি করতে না করুন, দেখি জনগণ কাদের সমর্থন দেয়।”
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, “জিয়াউর রহমান যদি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব ও ঘোষণা না দিতেন তাহলে শেখ মুজিবুর রহমান জেল থেকে মুক্তি পেতেন কি না, এই নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। শেখ হাসিনাও দেশে ফিরতে পারতেন না।”
খালেদা জিয়া বলেন, “শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগ বাসে গান পাউডার লাগিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। তাই এই হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনাই দায়ী। শেখ হাসিনার নির্দেশেই লৈগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।”
সরকার বিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিএনপি আন্দোলন করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো সন্ত্রাসীমূলক আন্দোলন করবে না।”
বিচারপতিরা সরকারের হাতে বন্দি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সরকার যেভাবে নির্দেশ দেয় বিচারপতিরা সেইভাবেই রায় দেন। সরকার এখন বিচারপতিদের অভিশংসন বিল সংসদের হাতে দিয়ে বিচার বিভাগকে পুরোপরি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ষড়যন্ত্র করছে।”
খালেদা জিয়া বলেন, “জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা করে সরকার মানুষের মুখ বন্ধ করতে চাচ্ছে। যাতে কেউ সরকারের মন্ত্রী সম্পর্কে বলতে ও লেখতে না পারে। একই সাথে তিনি বলেন, এই সরকার অবৈধ। তাই তাদের কোনো আইন করার নৈতিক অধিকার নেই। তারা যে আইন পাশ করবে তারও কোন বৈধতা থাকবে না। সেটা কোন বৈধ আইন হবে না।”
সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির চেয়ারপার্সন বলেন, “তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু শেখ মুজিবুর রহমানের লাশ মাটি না দিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার কথা বলেছিলেন। আর মতিয়া চৌধুরীর তার চামড়া দিয়ে ডুকডুড়ি বাজাতে চেয়েছিলেন। এখন তারা নিজেদের মন্ত্রীত্ব রক্ষায় শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মান করছেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন, শেখ হাসিনা কি সেগুলো কথা ভুলে গিয়েছেন।”
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ গরীব দেশ। কিন্তু সুুইচ ব্যাংকের এত টাকা কোথা থেকে আসলো তার জবাব জনগণের কাছে জবাব দিতে হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “সরকার দেশে কোন উন্নয়ন করতে পারেনি। তারা মুখে শুধু গণতন্ত্র ও উন্নয়নের কথা বলেন। এর বড় প্রমাণ, বাংলাদেশ দুর্নীতিতে সারা বিশ্বের মধ্যে ১ নম্বর এবং ঢাকায় শহর আর্বজনার ৪ নম্বর স্থান দখল করেছে। একই সাথে তিনি বলেন, সরকার প্রতিনিয়ত জনগণের সাথে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের কথা বলে মিথ্যাচার করছে। প্রকৃত পক্ষে দেশে কোন উন্নয়ন ও গণতন্ত্র নেই।”
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “ক্ষমতাসীনদের নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এবং আওয়ামী লীগকে বিদায় নিতে হবে। কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগের মত দুর্নীতি ও সন্ত্রাসীতে বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রে।”
চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি আপনারাই, বর্তমান সরকার নয়। কারণ সরকার ভোট ছাড়া ও জনগণের সমর্থন ছাড়া ক্ষমতা দখল করেছে। আর আপনাদের জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। তাই আপনাদের জনগণের কাছে অনেক দায়-দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু আপনারা কিছু করতে পারছেন না, কারণ সরকার আপনাদের হাত-পা বেঁধে রেখেছে।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গণি, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান।
মতবিনিময় সভায় রংপুর বিভাগীয় ৯ টি জেলার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।