রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শিক্ষাবোর্ড তৎকালিন সচিব ও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুর রউফ মিয়া বিধি বর্হিভূতভাবে শূণ্য পদের বিপরীতে দ্বিতীয় শ্রেণীর ১১ জন কর্মকর্তাকে বিভিন্ন পদে পদায়ন করেন। এর মধ্যে বোর্ডের দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও রয়েছেন। এদের মধ্যে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মজিবুর রহমান উপ-সচিব (প্রশাসন) পদে এবং সহকারী সচিব (ভান্ডার) আবুল খায়ের কামরুজ্জামান উপ-সচিব (ভান্ডার) পদে পদায়ন পান
রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের সেই ১০জন কর্মকর্তা এবার পদোন্নতি পাচ্ছেন। এ নিয়ে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর সিলেকশন-১ কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এরা সকলেই বোর্ড চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন। আর তাই বিধি বহিভূতভাবে তাদের পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বাঁকিদের পরদিন কমিটির লোকদেখানো সভায় হাজির হতে বলা হয়েছে। এর আগে গত ২০১২ সালের ৩০ জুন একই কায়দায় তাদের বিভিন্ন পদে চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো।
একইভাবে নিরাপত্তা কর্মকর্তা জাহিদুর রহিমকে উপ-কলেজ পরির্দশক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়ালিদ হোসেনকে উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুরুল হোদাকে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, ফরিদ হাসানকে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উচ্চ মাধ্যমিক), সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হোসনে আরা আরজুকে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক), প্রশাসনিক কর্মকর্তা আজিজুর রহমানকে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সনদ), প্রশাসনিক কর্মকর্তা রুবীকে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (জেএসসি), প্রশাসনিক কর্মকর্তা সেলিনা পারভীনকে অডিট কর্মকর্তা এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুঞ্জুর রহমান খানকে
ক্রীড়া কর্মকর্তা পদে পদায়ন দেয়া হয়।এই ঘটনায় ওই বছরেরই ২৩ নভেম্বর সরকার ও শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষের প্রতি রুল জারি করে উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে রুলের জবাব দিতে বেধে দেয়া হয় দুই সপ্তা সময়। বোর্ডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নূরুজ্জামান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা (আইন) আব্দুল কালাম আজাদ ওই রিট দায়ের করলে বিচারপতি নাসিমা হায়দার ও বিচারপতি খোরশিদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।এর পর থেকে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু থেমে থাকেনি তাদের কর্মকান্ড। এরই ধারাবাহিকতায় ওই ১১ জনের মধ্যে মজিবুর রহমান বাদে সকলকেই এবার প্রথম শ্রেণিতে পদোন্নতি দিচ্ছেন শিক্ষাবোর্ড তৎকালিন সচিব ও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুর রউফ মিয়া।বোর্ডের চাকরি বিধি অনুযায়ী, অনুমোদিত পদ ছিলো ৩৮৯টি। দিনাজপুর বোর্ড আলাদা হয়ে যাওয়ায় এর সংখ্যা দাঁড়ায় ২২৮ এ। এরমধ্যে প্রথম শ্রেণির ২৫জন, দ্বিতীয় শ্রেণির ১৮জন, তৃতীয় শ্রেণির ১০৭জন এবং চতুর্থ শ্রেণির ৭৮জন। চাকরি বিধি অনুযায়ী দ্বিতীয় শ্রেণির ১৮জনই প্রথম শ্রেণিতে পদোন্নতি পাওয়ায় যোগ্য। কিন্তু সম্পূর্ণ বিধি বর্হিভূতভাবে ১২ সেপ্টেম্বরের সিলেকশস-১ কমিটির সভায় ওই ১০ জনকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে।
এদের মধ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়ালিদ হোসেন, দুরুল হোদা, ফরিদ হাসান, আজিজুর রহমান, রুবী, সেলিনা পারভীন ও মুঞ্জুর রহমান খান উচ্চমান সহকারী ও এর সমমান পদে কর্মরত। যোগদানের সময়সীমা ১৫ বছর পূর্ন হওয়ায় একই তৃতীয় শ্রেণির স্কেলে ইনসি টু পদ্ধদিদে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।
এছাড়া আজিজুর রহমান, সেলিনা পারভীন ও মুঞ্জুর রহমান খান চাকরিতে যোগদানের পর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়ায় নিয়মিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ডিগ্রি পাশ করেছেন। আর হোসনে আরা আরজু দ্বিতীয় শ্রেণির উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে চলতি দায়িত্বে কর্মরত ছিলেন। ফলে চাকরি বিধি অনুযায়ী তারা ওই পদোন্নতি পবার যোগ্য নন। তবে আবুল খায়ের কামরুজ্জামান ও জাহিদুর রহিম পদোন্নতি পাবার যোগ্য।
ইাম প্রকাশ না করার শর্তে পদোন্নতি বঞ্চিত কয়েকজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, ওই ১০ জন কর্মকর্তাকে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা আদায় এবং সম্পূর্ণ দলীয় বিবেচনায় আবারো পদোন্নতি দিচ্ছেন শিক্ষাবোর্ড তৎকালিন সচিব ও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুর রউফ মিয়া। আর তাকে সহায়তা দিচ্ছেন বোর্ডেও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শেখ কামাল উদ্দিন। ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা এর বিরোধীতা করলেও তারা শুনছেননা বলেও অভিযোগ পদোন্নতি বঞ্চিতদের।
তাদের দাবি, চলতি দায়িত্বে যোগদানপত্রে উল্লেখ ছিলো, শুধুমাত্র ফিডার সার্ভিস পুরণ হলে আগ্রহী প্রাশাসনিক কর্মকর্তাদের বিধিমালা অনুযায়ী পদোন্নতি দেবে সিলেকশন-১ কমিটি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিজেদের অনিয়ম ও দূনীর্তির পথ প্রশস্থ করতে নিয়ম লঙ্ঘন করে এ পদোন্নতি দিচ্ছে। তারা বিতর্কিত ওই ৮ কর্মকর্তার পদন্নোতি না দেয়ার আহবান জানান। এ বিষয়ে দিনভর চেষ্টা করেও শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুর রউফ মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার ব্যবহৃত মুঠোফোন সংযোগটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। যোগাযোগ করা হলে বোর্ডের তথ্য ও গণসংযোগ কর্মকর্তা এএফএম খায়রুল আলম জানান, সকাল ৯টা থেকে বোর্ড সভাকক্ষে নাম ও বয়স সংশোধন বিষয়ে সভা চলছে। সেখানে চেয়ারম্যান মহোদয় অংশ নিয়েছেন। ওই সভা রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ শেষ হবার কথা রয়েছে। এসময় ওই ১০ কর্মকর্তার পদোন্নতির বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান। তিনি বলেন, আগের চেয়ারম্যান প্রফেসর তানবিরুল আলম বিধি বর্হিভূতভাবে ওই ১১ জনকে চলতি দায়িত্ব দিয়ে ছিলেন। ওই সময় বর্তমান চেয়ারম্যান ও তৎকালিন সচিবও তার সঙ্গে ছিলেন।