আরিফ উদ্দিন, গাইবান্ধা থেকেঃ গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি কমলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। খাদ্য সংকট আর পানিবাহিত রোগের শিকার হচ্ছেন বন্যা কবলিত এলাকার প্রান্তিক মানুষ। বন্যার্তদের অভিযোগ, সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে যে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, সরকারি হিসাবে এবারের বন্যায় জেলার সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ত্রিশটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। চার উপজেলার এক লাখ ১৬ হাজার ১৫৪ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাদের জন্য ত্রাণ বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১৪ লাখ টাকা ও ৬০০ মেট্রিক টন চাল। এ হিসাবে ভূক্তভোগীপ্রতি বার টাকা ও পাঁচ কেজি করে চাল পাবার কথা। এছাড়া টানা দুই সপ্তাহ বন্যার পানিতে ডুবে থাকায় এসব ইউনিয়নের তিন হাজার ১০৫ হেক্টর রোপা আমন ধান, ১২৪ হেক্টর বীজতলা, ১০০ হেক্টর শাকসবজি, ১০০ হেক্টর আউস ধান ও ১৭ হাজার ৭৪টি বসতবাড়ির ক্ষতি হয়।গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক এহছানে এলাহী জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে এ পর্যন্ত ১৪ লাখ টাকা ও ৬০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে দশ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা ও ৪২২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরো দশ লাখ টাকা ও ৫০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এদিকে বন্যা কবলিত এলাকার প্রান্তিক মানুষেরা বলছেন, হাতে কাজ না থাকায় খেয়ে-না খেয়ে দিন পার করছেন তারা। সেই সঙ্গে পানিবাহিত রোগের প্রকোপও বাড়ছে।ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের কঞ্চিপাড়া গ্রামের সাজুু মিয়া জানান, হাতে কোনো কাজ নাই। পরিবার নিয়ে এক বেলা খেয়ে দিন পার করছি। চারদিকে পানি উঠায় গবাদি পশুগুলোকে খাবার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পরিবারের একাধিক সদস্য ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত বলে জানান সাজু মিয়া। একই ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের কোহিনুর বেগমের বাড়ি তের দিন ধরে পানিতে ডুবে থাকায় তিনি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে জীবনযাপন করছেন। আক্ষেপ করে এই নারী বলেন, সবাই আসে ছবি তুলে আর নাম লিখে নিয়ে যায়। কিন্তু রিলিফ তো পাই না। মেম্বার-চেয়ারম্যানদের বললে তারা বলেন, বরাদ্দ শেষ। এর পরের বরাদ্দ থেকে দেওয়া হবে। পানিবাহিত রোগের ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডা. আহাদ আলী জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় ৫০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। পর্যাপ্ত ওষুধও মজুদ আছে। আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।