সংবিধানের ১৬তম সংশোধনীতে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দশম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। বিচারকদের অপসারণ ও অভিশংসন নিয়ে আনা সংশোধনী বিল বিচারকদের আরও সুরক্ষিত করবে বলে তাদের ধারণা। নেতাদের দাবি এতদিন বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির মধ্যে ছিলেন তারা। আইন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রথম বৈঠকেই তাদের এ ভুল ভেঙেছে বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য জাতীয় পার্টির একজন সদস্য। এর আগে ৩১শে আগস্ট জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠকে ওই বিলের বিরোধিতার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসে জাতীয় পার্টি। এখন তারা উল্টো সংবিধান সংশোধনীতে সমর্থন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল মানবজমিনকে বলেন, আমাদের ধারণা ছিল সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করা হবে। এখন ওই ভুল ভেঙেছে। বরং সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকরা আরও সুরক্ষিত হবেন। তিনি বলেন, সংশোধনী নিয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থান আজ সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। তাজুল ইসলাম চৌধুরী আইন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য। তিনি জানান, বৈঠকে সংবিধান সংশোধন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের প্রশ্ন ছিল। কমিটির সভাপতি ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সেসব প্রশ্নের যথার্থ উত্তর দিয়েছেন। তাদের যুক্তিনির্ভর উত্তরে আমি স্যাটিসফাইড। তিনি বলেন, সংসদের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো সংশোধনী নিয়ে রাজনীতির কালার দিতে চাইছেন। বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় দলের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এদিকে কমিটির বৈঠক শেষে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ। সংশোধনী নিয়ে সরকারি দলের মনোভাবের কথা তাকে অবগত করা হয়। এর আগে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিলটির বিপক্ষে অবস্থান নেবে জাতীয় পার্টি। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, এমন বিল আমরা চাই না। কারণ, এ বিলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে। বিলটিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলটি পাস হলে- প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে বিচারককে অপসারিত করা যাবে। তবে কোন বিচারকের অসাদচরণ বা অসমর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। এছাড়াও কোন বিচারক প্রেসিডেন্টের কাছে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রে পদত্যাগ করতে পারবেন। দলটির পক্ষ থেকে সংশ্ল্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করে বিলটি পাসের দাবি জানানো হয়। তবে ৭ই সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে উত্থাপনের সময় বিরোধী দলের এমপিরা হ্যাঁ ভোটে অংশ নিয়ে এর সমর্থন জানান। বিলটি উত্থাপন শেষে সরকারি ও বিরোধী দলের এমপিরা টেবিল চাপড়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকলেও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ অনুপস্থিত ছিলেন। যদিও অধিবেশন শুরুর সময় অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে কমিটিকে বলা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল বৈঠকে বসে সংসদীয় কমিটি। আজও তারা বৈঠক করবেন। গত ১৮ই আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিলটি অনুমোদন দেয়া হয়। বিলটি চলতি অধিবেশনেই পাস হওয়ার কথা রয়েছে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ এর বিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং তাদের পক্ষে এই ক্ষমতার প্রয়োগের কেবল সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হবে। এর প্রতিফলনে ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত রাষ্ট্রপতিকে সংসদ কর্তৃক অভিশংসনের মাধ্যমে অপসারণ (অনুচ্ছেদ ৫২), সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারালে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ (অনুচ্ছেদ ৫৭), সংসদ সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থিত প্রস্তাবের মাধ্যমে স্পিকারকে অপসারণ (অনুচ্ছেদ ৭৪) এবং সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত প্রস্তাবের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদেরকে অপসারণের বিধান (অনুচ্ছেদ ৯৬) ছিল।